পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ওয়ান ব্যাংক মহামারির বছরে আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ মুনাফা কম করেও শেয়ারধারীদেরকে ১৫ শতাংশ বেশি লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ব্যাংকটি শেয়ার প্রতি ৬০ পয়সা নগদ এবং সাড়ে ৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতি ২০০ শেয়ারে ১১টি বোনাস শেয়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থাৎ এবার লভ্যাংশের পরিমাণ মোট ১১.৫ শতাংশ।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরে ব্যাংকটির শেয়ারধারীরা শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা নগদ ও প্রতি ১০০ শেয়ারে ৫ টি অর্থাৎ সর্বমোট ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
- আরও পড়ুন: যমুনা ব্যাংকের আবার চমক জাগানিয়া লভ্যাংশ
এই ব্যাংকটি যে হারে লভ্যাংশ দিতে যাচ্ছে, সেটি ব্যাংকে যে কোনো সঞ্চয়ী স্কিম বা এফডিআরের প্রায় সমান।
রোববার ব্যাংকটির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ১০ টাকা ৮০ পয়সা। এর মধ্যে ৬০ পয়সা অর্থাৎ শেয়ারমূল্যের ৫.৫ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে পাচ্ছেন।
বর্তমানে এফডিআরের সুদহার সাড়ে চার থেকে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। এর বাইরে যে শেয়ার লভ্যাংশ পাওয়া যাবে, সেটি অবশ্য শেয়ার মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় হবে।
রোববার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে এই সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হবে। এদিন শেয়ারের কোনো মূল্যসীমা থাকবে না।
শেয়ারধারীরা এই লভ্যাংশ পেতে চাইলে তাদের শেয়ার ধরে রাখতে হবে আগামী ১১ মে পর্যন্ত। আগামী ২৪ জুন বার্ষিক সাধারণ সভায় লভ্যাংশ চূড়ান্ত হবে। করোনাকালে এই সভা হবে ভার্চুয়ালি।
করোনার বছরে এখন পর্যন্ত যেসব ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে দ্বিতীয় ব্যাংক হিসেবে মুনাফা কমেছে ওয়ান ব্যাংকের।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে এক টাকা ৫৭ পয়সা। আগের বছর যা ছিল এক টাকা ৯১ পয়সা, যা ওই বছর দেয়া ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার সমন্বয়ের পর দাঁড়ায় ১ টাকা ৮১ পয়সা।
এই হিসাবে ব্যাংকটির মুনাফা কমেছে ২৪ পয়সা বা ১৩ শতাংশ।
তবে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা কমেছিল আরও বেশি হারে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৩১৫ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ৪৩৫ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে মুনাফা কমে ২৮ শতাংশ।
এর আগে লভ্যাংশ ঘোষণা করা প্রিমিয়ার ব্যাংকের লভ্যাংশও কমে যায়। তবে ওয়ান ব্যাংকের মতোই তারা লভ্যাংশ বাড়িয়েছে।
এ নিয়ে এখন পর্যন্ত আটটি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করল। এর মধ্যে ওয়ান ছাড়াও লভ্যাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডাচ বাংলা, শাহজালাল, প্রিমিয়ার, সিটি ও যমুনা ব্যাংক।
ব্যাংক এশিয়া গত বছরের চেয়ে বেশি আয় করেও সমান লভ্যাংশ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর মার্কেন্টাইল ব্যাংক সমান আয় করে শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা কম লভ্যাংশ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
- আরও পড়ুন: মহামারির বছরে চমক দেখাল ব্যাংক এশিয়াও
এখন পর্যন্ত যেসব ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে চারটি যে হারে লভ্যাংশের প্রস্তাব করেছে তা যে কোনো সঞ্চয়ী স্কিম বা এফডিআরের হারের চেয়ে বেশি। এগুলো হলো মার্কেন্টাইল, সিটি, প্রিমিয়ার ও যমুনা ব্যাংক। আর ওয়ানের লভ্যাংশ এফডিআরের সুদহারের প্রায় সমান।
এর প্রতিটি ব্যাংকটি নগদের পাশাপাশি বোনাস হিসেবে ৫ শতাংশ শেয়ার পেতে যাচ্ছেন।
ডাচ বাংলা ব্যাংক এবার ১৫ শতাংশ বোনাস ও শেয়ার প্রতি দেড় টাকা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। আগের বছর দেড় টাকা নগদের পাশাপাশি ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার পেয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা।
শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক এবার শেয়ার প্রতি ৭০ পয়সা নগদের পাশাপাশি ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিতে যাচ্ছে। আগের বছর শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা নগদের পাশাপাশি ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল।
মার্কেন্টাইল ব্যাংক এবার শেয়ার প্রতি এক টাকা নগদের পাশাপাশি ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিতে যাচ্ছে। আগের বছর শেয়ার প্রতি এক টাকা ১০ পয়সা নগদের পাশাপাশি ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল।
ব্যাংক এশিয়ার এবার শেয়ার প্রতি এক টাকা নগদ লভ্যাংশ দিতে যাচ্ছে। আগের বছরও তারা সম পরিমাণ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
- আরও পড়ুন: কমেছে পরিচালন, বেড়েছে চূড়ান্ত মুনাফা
প্রিমিয়ার ব্যাংক এবার শেয়ার প্রতি এক টাকা ২৫ পয়সা নগদের পাশাপাশি ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিতে যাচ্ছে। আগের বছর শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা নগদের পাশাপাশি ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল।
সিটি ব্যাংক এবার শেয়ার প্রতি এক টাকা ৭৫ পয়সা নগদের পাশাপাশি ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিতে যাচ্ছে। আগের বছর শেয়ার প্রতি দেড় টাকা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
যমুনা ব্যাংক এবার শেয়ার প্রতি এক টাকা ৭৫ পয়সা নগদ লভ্যাংশ দিতে যাচ্ছে। আগের বছর শেয়ার প্রতি দেড় টাকা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।