আড়াই হাজার কোটি টাকা থেকে কমতে কমতে পুঁজিবাজারে লেনদেন এবার নামল চারশ কোটি টাকার নিচে। বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না, এমন দিকে সূচক বাড়ল ব্যাংকের শেয়ারে ভর করে।
রোববার হেফাজতে ইসলামের হরতালের মধ্যে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে তালিকাভুক্ত ৩১টি ব্যাংকের মধ্যে দাম বেড়েছে ১৫টির। নয়টির দাম থাকে অপরিবর্তিত আর বাকি সাতটি দর হারিয়েছে।
গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য যেসব ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তার সব কটির দাম বেড়েছে এদিন।
গত আট মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেনের দিন বড় মূলধনী বাংকের ইতিবাচক প্রবণতার দিন পুঁজিবাজারে সূচক বেড়েছে ১৬ পয়েন্ট।
ব্যাংকগুলো আকর্ষণীয় লভ্যাংশ ঘোষণা করা এবং মহামারির বছরে আগের বছরের চেয়ে বেশি বেশি মুনাফা করতে থাকার মধ্যে ব্যাংকে গত কয়েকদিন ধরেই ঝুঁকতে শুরু করেছে বিনিয়োগকারীরা।
বেড়েছে লভ্যাংশ ঘোষণা করা সব ব্যাংকের দাম
লভ্যাংশ হিসেবে শেয়ার প্রতি এক টাকা ৭৫ পয়সা নগদ আর ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা সিটি ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ৩০ পয়সা। ২৫ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ২৬ টাকায়।
শেয়ার প্রতি এক টাকা ৭৫ পয়সা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা যমুনা ব্যাংকের শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে ২০ পয়সা। দাম ১৮ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮ দশমিক ৬০ পয়সা।
শেয়ার প্রতি এক টাকা নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা মার্কেন্টাইল ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ২০ পয়সা।
শেয়ার প্রতি এক টাকা ২৫ পয়সা নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ার দর বেড়েছে ৩০ পয়সা।
শেয়ার প্রতি ৭০ পয়সা নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৮০ পয়সা।
শেয়ার প্রতি এক টাকা নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করা ব্যাংক এশিয়ার দাম বেড়েছে ২০ পয়সা।
শেয়ার প্রতি দেড় টাকা নগদ ও ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণা করা ডাচ বাংলা ব্যাকের লেনদেন রেকর্ড ডেটের কারণে বন্ধ ছিল এদিন।
রোববার লেনদেন চারশ কোটির নিচে নামার দিন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক বাড়ল ১৬ পয়েন্ট
শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে লোকসানি ব্যাংক আইসিবি ইসলামীর। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রথমবারের মতো মুনাফা করা এই ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৩০ পয়সা। একদিনে এর চেয়ে বেশি দাম বাড়া সম্ভব ছিল না।
টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ব্র্যাক বাংকের দাম। গত এক মাসে ১০ টাকার মতো দাম হারানো প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারে যোগ হয়েছে এক টাকা ২০ পয়সা্
দাম বেড়েছে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, নতুন ব্যাংক এনআরবিসি, ওয়ান ব্যাংক, সাউথ ইস্ট ও ট্রাস্ট ব্যাংকেরও।
কমেছে এবি, ইবিএল, আইএফআইসি, পূবালী, এসআইবিএল ও ইউসিবি ইসলামী ব্যাংকের।
বিমার শেয়ারে জোয়ার
বিমা খাতে এক দিন পতনের পর আবার প্রায় সব কোম্পানির দর বৃদ্ধি পেল। তালিকাভুক্ত ৪৯টি কোম্পানির মধ্যে লেনদেন হয়নি তিনটির। বাকিগুলোর মধ্যে দুটির দাম কমেছে, একটির দাম অপরিবর্তিত ছিল। বাকি ৪৩টির দামও বেড়েছে।
সর্বাধিক দর বৃদ্ধি হওয়া ১০টি কোম্পানির ছয়টিই ছিল বিমা খাতের। আর সবচেয়ে বেশি দর বাড়া ২০টি কোম্পানির মধ্যে ১৩টিই এই খাতের।
মিশ্রাবস্থা বহুজাতিক ও দামি শেয়ারের
বহুজাতিক কোম্পানি রেকিড বেনকিউজার শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় কমেছে ৬২ টাকা ৭০ পয়সা। লেনদেন শেষে দর ছিল ৪ হাজার ৫৮৫ টাকায়।
ইউনিলিভার কনজ্যুমার কেয়ার লিমিটেডের শেয়ার প্রতি দর কমেছে ৪ টাকা ৭০ পয়সা। দিন শেষে কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২ হাজার ৮১৭ টাকায়।
তবে দর বেড়েছে ম্যারিকো লিমিটেডের, যার শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ২০ পয়সা। বার্জার পেইন্ট বাংলাদেশের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১ টাকা ১০ পয়সা। লিন্ডে বিডির শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ১০ টাকা ৪০ পয়সা। লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৫৮ টাকায়।
ওয়ালটনের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৯ টাকা ১০ পয়সা। লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ২১৫ টাকায়।
রেনেটা লিমিটেডের শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৫ টাকা ৮০ পয়সা। দিন শেষে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১৮০ টাকায়।
বাজার বিশ্লেষকদের বক্তব্য
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লেনদেন কমে আসা সাময়িক বিষয়। এ নিয়ে আতংকের কিছু নেই। দেখতে হবে পুঁজিবাজারের মৌল ভিত্তিক কোম্পানির শেয়ারের দর বেড়েছে কি না।’
অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ‘মার্জিন ঋণের সুদের হারের কারণে এমনটি (লেনদেন কমা) হতে পারে। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এককভাবে প্রতিদিন শত শত কোটি টাকার লেনদেন করতে পারবে না। এজন্য প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ জরুরি।
‘রোববার যে পরিমাণ লেনদেন হয়েছে তাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদরে অংশগ্রহন কতটা ছিল সেটা একটি প্রশ্ন।’
হরতালে ব্রোকারেজ হাউজে উপস্থিতি কম
হেফাজতে ইসলামের হরতালের কারণে মতিঝিলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি ছিল কম। যারা হাউজে যেতে চেয়েছিলেন তাদের অনেককেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ঢুকতে দেয়নি বলেও জানিয়েছেন তারা।
বাংলাদেশ বিনিয়োগকারী সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের সভাপতি আ ন ম আতাউল্লাহ নাঈম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রোববার লেনদেন অনেক কমে গেছে। এর পেছনে কিছুটা মার্জিন ঋণের সুদের হারের প্রভাব থাকলেও হরতালের কারণে অনেক বিনিয়োগকারী হাউজে ট্রেড করতে পারেনি।’
ইন্টারনেট জটিলতায় অনেকে সঠিক সময়ে শেয়ার কিনতে পারনি বলেও জানান তিনি।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘লেনদেন হঠাৎ করে কমে যাওয়ার পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। তবে হরতালের কারণে বিনিয়োগকারীরা নিজ নিজ হাউজে গিয়ে লেনদেন করতে পারেনি। একই সঙ্গে মতিঝিল এলাকায় অনেক বিনিয়োগকারীদের রোববার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রবেশ করতে দেয়নি এমন অভিযোগও পেয়েছি।’
সূচক ও লেনদেন
প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৬ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৪৩৪ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস সূচক দশকি ৭৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৮ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ১ দশমিক ২৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২ পয়েন্টে।
ডিএসইতে লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৩৪ টির, কমেছে ৮৪ টির ও পাল্টায়নি ১৩২টির।
ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৮২ কোটি টাকা। আগের কার্যদিবসে মোট লেনদেন হয়েছিল ৪৮৮ কোটি টাকা।
এর আগে গত ২৬ জুলাই সর্বনিম্ম লেনদেন হয়েছিল ৩৭১ কোটি টাকা।
ফলে আগের কার্যদিবসের তুলনায় ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ১০২ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান সূচক সিএএসপিআই আগের দিনের তুলনায় ৫৩ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৪৭৮ পয়েন্টে।
লেনদেন হওয়া কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৮৮টির, কমেছে ৬২টির ও পাল্টায়নি ৬২টির। লেনদেন হয়েছে ২৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা।