গ্রামের বাড়িতে মা অসুস্থ- হঠাৎ এমন খবরে ঘাবড়ে যান সন্তান রফিকুল আলম। ছোট বোন জানান, বুকে তীব্র ব্যথার পর জ্ঞান হারিয়েছেন মা। হাসপাতালে যেতে হবে, তারপর চিকিৎসা। এই মুহূর্তেই টাকা দরকার।
ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকুরে রফিকুল ছুটে যান দোকানে, জানতে চান- দ্রুত সময়ে কম খরচে টাকা পাঠানো যাবে কীভাবে?
দোকানি জানান, ‘নগদ’-এ সবচেয়ে কম খরচে টাকা পাঠানো যায়। দোকানেই দ্রুত অ্যাকাউন্ট খুলে ঢাকার শেওড়াপাড়া থেকে রাজবাড়ীতে টাকা পাঠান রফিকুল।
তিনি বলেন, ‘মোবাইলে টাকা পাঠাতে অনেক ব্যয় হয়। তবে, দোকানি জানিয়েছেন, সবচেয়ে কম ব্যয়ে টাকা পাঠানো যায় নগদের মাধ্যমে। তাই এই মাধ্যমেই টাকা পাঠাই।’
তিনি বলেন, ‘আমার নগদ অ্যাকাউন্ট ছিল না। দ্রুত সময়ের মধ্যে তা খুলে নিয়েছি। অন্যদিকে ছোট বোনও দোকানে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলল, ওর অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েছি। স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য স্বস্তি দিয়েছে “নগদ”।’
অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে দেশে নতুন মাত্রা যোগ করেছে নিরাপদ মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ। কার্যক্রম শুরু করার দুই বছরের মাথায় দেশের বড়সংখ্যক মানুষের আস্থার নাম নগদ। এই মাধ্যম ব্যবহার করে টাকা পাঠাতে চাইলে কম খরচে তা সম্ভব।
অন্যদিকে, অ্যাকাউন্ট খুলতেও নেই কোনও ঝক্কিঝামেলা। একজন গ্রাহক স্বল্পসময়েই অ্যাকাউন্ট খুলে শুরু করতে পারেন লেনদেন। যেকোনো প্রয়োজনে অর্থ পাঠাতে এর চেয়ে সহজ মাধ্যম আর নেই।
ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চাওয়া মাত্রই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারা বা সবচেয়ে কম খরচে সেরা সেবা নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা গ্রাহকদের জন্যে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহারের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। আগে যে মানুষটা অ্যাকাউন্ট খোলার ঝক্কি বা খরচের ভয়ে এই সেবা থেকে দূরে থাকত তিনিও এখন সহজেই স্বাধীনভাবে অ্যাকাউন্ট খুলে সেবাটি ব্যবহার করতে পারছেন। আমরা মনে করি এইটাই নগদের সবচেয়ে বড় অর্জন।
‘মাত্র দুই বছরের মধ্যে বিশেষ করে প্রান্তিক গ্রাহকদের জন্য এমন স্বাধীনতা নিশ্চিত করা অবশ্যই বড় একটি অর্জন বলে আমি মনে করি। আর তার বিনিময়ে গ্রাহকদের ভালোবাসা ও আস্থা পেয়েছি।’
২০১৯ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ ডাক বিভাগের ডিজিটাল আর্থিক সেবা নগদের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বতর্মানে দেশের মোবাইলে আর্থিক সেবার প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ লেনদেন নগদের মাধ্যমে হচ্ছে।
নগদের গ্রাহক ও লেনদেনের পরিমাণ
২০১৯ সালের ২৬ মার্চ নগদের কার্যক্রম শুরু হয়। গত বছরের নভেম্বরে নগদের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ২ কোটি; চার মাসের ব্যবধানে তা এখন চার কোটিতে উন্নীত হয়েছে।
গত নভেম্বরের আগ পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হতো ১৫০ কোটি টাকা। এখন প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে ৪০০ কোটি টাকা। চার মাসের ব্যবধানে নগদের দৈনিক গড় লেনদেন দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
সারা দেশে ১ লাখ ৫৫ হাজার এজেন্ট ও ২ লাখ ৩৮ হাজার উদ্যোক্তার মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে ব্যাংকিং সেবার বাইরে থাকা মানুষকে সেবা দিচ্ছে নগদ।
এই সফলতার কারণে ‘বিশ্বখ্যাত কোম্পানিগুলো’ নগদে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলে জানা গেছে।
নগদের সুযোগসুবিধা
বর্তমান সময় মোবাইল ফোনে ঘরে বসেই নগদের মাধ্যমে যেকোনো লেনদেন পরিচালনা করা যায়।
যেকোনো সময় যেকোনো নগদ উদ্যোক্তা পয়েন্টের কাছ থেকে নগদ অ্যাকাউন্টে ব্যালান্স যুক্ত করা যায়।
যেকোনো প্রয়োজনে যেকোনো জায়গায় ‘নগদ উদ্যোক্তা পয়েন্ট’ থেকে ক্যাশ আউট করা যায়।
টাকা জমালে ইন্টারেস্ট পাওয়ার সুবিধা আছে।
প্রয়োজনীয় বিল নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে বিনা মূল্যে খুব সহজেই করা যায়।
কোনো সংকটাপন্ন মুহূর্তে ফ্লেক্সিলোডের প্রয়োজন হলে এই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে মোবাইলে রিচার্জ করে নেয়া যাবে।
নগদের সার্ভিস চার্জ
প্রতি হাজারে এই প্রতিষ্ঠান নিচ্ছে ১১ টাকা ৪৯ পয়সা।
সেন্ড মানির ক্ষেত্রে কোনো টাকা গুনতে হয় না গ্রাহকদের। ইউটিলিটি বিলেও নেয়া হচ্ছে না কোনো অর্থ।
বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে নেয়া হচ্ছে প্রতি ১০০ টাকায় ৭০ পয়সা।
লেনদেনসীমা
বর্তমানে নগদে দিনে ১০ বারে আড়াই লাখ টাকা ক্যাশ ইন ও ক্যাশ-আউট করা যায়।
আর এক মাসে ৫০ বারে ক্যাশ ইন ও ক্যাশ আউট করা যায় পাঁচ লাখ টাকা।
একবারে ৫০ হাজার টাকা ক্যাশ ইন এবং ক্যাশ আউট করতে পারেন এর গ্রাহক।