মহামারির বছরে আগের বছরের তুলনায় আরও বেশি আয় করে দেড় গুণ লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ন্যাশনাল হাউজিং ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।
২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য শেয়ারধারীদের ১৫ শতাংশ অর্থাৎ শেয়ারপ্রতি দেড় টাকা করে নগদে লভ্যাংশ বিতরণের প্রস্তাব করেছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।
বুধবার বিকেলে নেয়া এই সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। সেদিন কোম্পানিটির লেনদেনে কোনো সীমা থাকবে না।
আগের বছর কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ১ টাকা করে অর্থাৎ ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ বিতরণ করেছিল।
ন্যাশনাল হাউজিংয়ের কোম্পানি সচিব সারওয়ার কামাল নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন, গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ৭৫ পয়সা। আগের বছর এই আয় ছিল ২ টাকা ২ পয়সা। অর্থাৎ মহামারিকালে কোম্পানির আয় বেড়েছে ৩৬ শতাংশ।
মহামারির বছরে আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কার বিপরীতে আয়ে প্রবৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানি সচিব বলেন, ‘আমাদের ইনভেস্টমেন্ট ভালো ছিল। এ কারণে রিটার্ন ভালো এসেছে। করোনার সময়ও আমাদের লিকুইডিটি (নগদ অর্থ) ভালো ছিল। এ কারণে কস্ট অফ ফান্ড কম ছিল। বাকিটা আমাদের আর্থিক বিবরণীতে উল্লেখ করা আছে।’
কোম্পানিটি যে লভ্যাংশ দিতে যাচ্ছে, তা এখন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সঞ্চয়ী স্কিমে সুদ হারের সমান।
বুধবার কোম্পানিটির শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৩০ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থাৎ শেয়ারদরের তুলনায় লভ্যাংশের ইল্ড দাঁড়ায় প্রায় ৬ শতাংশ।
এখন সঞ্চয়ী স্কিমে সাড়ে ৪ থেকে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়।
যারা এই লভ্যাংশ নিতে চান, তাদের আগামী ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত শেয়ার ধরে রাখতে হবে। আগামী ১৮ মে কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় এই লভ্যাংশ চূড়ান্ত হবে। করোনাকালে এই সভা হবে ডিজিটাল প্ল্যাটফরমে।
আর্থিক খাতের অন্য প্রতিষ্ঠান যত লভ্যাংশ দিল
এ নিয়ে আর্থিক খাতের সাতটি প্রতিষ্ঠান লভ্যাংশ ঘোষণা করল। এর মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের আয় গত বছরের তুলনায় কমেছে। তবে কেবল একটি প্রতিষ্ঠান লভ্যাংশ কমিয়েছে। একটির লভ্যাংশ আগের বছরের সমান। বাকি সবগুলো আগের বছরের চেয়ে বেশি লভ্যাংশ দিয়েছে।
আইডিএলসি ফিন্যান্স শেয়ারপ্রতি সাড়ে ৩ টাকা অর্থাৎ ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। তবে এই সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হবে তাদের। কারণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, সর্বোচ্চ দেড় টাকা নগদের পাশাপাশি আরও ১৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ১০০ শেয়ারে ১৫টি বোনাস শেয়ার দিতে পারবে কোনো কোম্পানি।
- আরও পড়ুন: করোনার বছরে চমক আইপিডিসিরও
গত বছর কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ৩ টাকা অর্থাৎ ৩০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
বিডি ফিন্যান্স শেয়ারপ্রতি ৬ শতাংশ অর্থাৎ ৬০ পয়সা নগদ এবং ৬ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি ১০০ শেয়ারে ৬টি বোনাস শেয়ার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এই কোম্পানিটিরও আয় বেড়েছে মহামারির বছরে।
- আরও পড়ুন: করোনায়ও মুনাফা বেড়েছে বিডি ফাইন্যান্সের
আগের বছর কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি ১ টাকা অর্থাৎ ১০ শতাংশ বেশি লভ্যাংশ দিয়েছিল।
আইপিডিসি ফিন্যান্স এবার শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ২০ পয়সা করে অর্থাৎ ১২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই কোম্পানিটি গত বছরের তুলনায় বেশি আয় করলেও লভ্যাংশ কমিয়েছে। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরে ১ টাকা নগদের পাশাপাশি ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল।
লংকাবাংলা ফিন্যান্স আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ আয় করে লভ্যাংশও বাড়িয়েছে। এবার তারা শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৮১ পয়সা আয় করে ১ টাকা ২০ পয়সা (১২ শতাংশ) লভ্যাংশ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আগের বছর ৯৪ পয়সা আয় করে শেয়ারপ্রতি ৭০ পয়সা নগদ ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিয়েছিল কোম্পানিটি।
ইউনাইটেড ফিন্যান্স এবার শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ১৩ পয়সা আয় করে ১ টাকা লভ্যাংশ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগের বছর আয় ছিল ১ টাকা ৩১ পয়সা। ওই বছরও তারা সমপরিমাণ লভ্যাংশ দিয়েছিল।
ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফিন্যান্স শেয়ারধারীদের শেয়ারপ্রতি দেড় টাকা নগদ ও ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী এর চেয়ে বেশি লভ্যাংশ দেয়ার সুযোগ ছিল না।
এই কোম্পানিরও আয় আগের বছরের তুলনায় কমেছে। তবে তারা লভ্যাংশ বাড়িয়েছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য তারা শেয়ারপ্রতি ২ টাকা অর্থাৎ ২০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল।