লেনদেন শুরুর পর প্রথম দিন দাম সর্বোচ্চ পরিমাণ বাড়ার পর কিছুটা কমে যায়। দ্বিতীয় কার্যদিবসে কমেছে খানিকটা, তৃতীয় দিন আরও বেশি।
এক যুগ পর পুঁজিবাজারে নতুন ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়ে এভাবে টানা দর হারাচ্ছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক-এনআরবিসি।
গত এক বছরে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়ে এত কম সময়ে আইপিও দামের কাছাকাছি আসেনি কোনো শেয়ারের দাম।
ভালো লভ্যাংশ দিলেও গণমাধ্যমে নানা নেতিবাচক প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত কয়েক বছর ধরেই ব্যাংকের শেয়ারে আগ্রহ হারিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। এর মধ্যে করোনায় পরিচালন মুনাফা ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার সংবাদ আসার পর লভ্যাংশের মৌসুমেও দর হারায় ব্যাংকগুলো।
তবে লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো চমক দেখায়। চূড়ান্ত হিসাবে দেখা যায়, এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ ব্যাংকই আগের বছরের তুলনায় বেশি মুনাফা করছে। আর লভ্যাংশও গত বছরের চেয়ে বেশি আসছে।
ব্যাংকগুলোর দাম এতটাই কমে গেছে যে নগদে যে লভ্যাংশ ঘোষণা করা হচ্ছে, তাতে ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে এখন শেয়ার কিনে রাখাই বেশি লাভজনক।
এই অবস্থাতেও ব্যাংকের শেয়ারের মধ্যে প্রায় সব কোম্পানি দর হারিয়েছে বুধবার। আর শতকরা হিসাবে সবচেয়ে বেশি হারিয়েছে এনআরবিসি। শতকরা হিসাবে ৬.৪৫ শতাংশ আর টাকার অংকে ৮০ পয়সা।
গত সোমবার থেকে লেনদেন শুরু হওয়া ব্যাংকটির প্রথম দিন সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ দর বাড়ার সুযোগ ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানিই প্রথম দিন ৫০ শতাংশ দাম বেড়েছে। আর এই দামেও বিক্রেতা ছিল খুবই কম। আর বেশিরভাগ শেয়ারই দ্বিতীয় দিনও আবার ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
এনআরবিসিও লেনদেন শুরু করে ১৫ টাকা দিয়ে। কিন্তু বিপুল সংখ্যক বিক্রেতা চলে আসার পর দাম কমতে থাকে। দিন শেষে দাম দাঁড়ায় ১৩ টাকা ২০ পয়সা।
দ্বিতীয় দিন আবারও ৫০ শতাংশ দর বেড়ে ১৯ টাকা ৮০ পয়সা হওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু উল্টো কমে যায়। এদিন তালিকাভুক্ত বেশিরভাগ শেয়ারের দাম বাড়লেও এনআরবিসি দর হারায় ৮০ পয়সা। দিন শেষে দাম দাঁড়ায় ১২ টাকা ৪০ পয়সা।
তৃতীয় দিন আরও ৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১১ টাকা ৬০ পয়সা।
এখন মাত্র ১ টাকা ৬০ পয়সা দর কমলেই আইপিওতে যারা শেয়ার পেয়েছেন, তাদের কোনো মুনাফা থাকবে না।
পুঁজিবাজারে টানা পাঁচ বছর ১০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি হারে মুনাফা দিয়ে আসছে- এমন ব্যাংকও পাওয়া যাচ্ছে ১০ টাকা বা তার চেয়ে কমে।
তবে এনআরবিসির ১০ টাকার নিচে নামার কোনো সুযোগ আপাতত নেই।
ফ্লোর প্রাইস ভরসা
সূচকের পতন ঠেকাতে গত বছরের ১৯ মার্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি সার্কিট ব্রেকারের নিয়মে পরিবর্তন করে এনে প্রতিটি কোম্পানির শেয়ারের আগের পাঁচ দিনের ক্লোজিং প্রাইসের গড়কে ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন দর হিসেবে বেঁধে দেয়। তবে দর বৃদ্ধিসহ অন্য ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকারের আগের নিয়ম বহাল রাখে।
দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর পুঁজিবাজারে ধস ঠেকাতে সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দিয়ে ঘোষণা করা হয় ফ্লোর প্রাইস। তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির ক্ষেত্রেই এই দাম বেঁধে দেয়া আছে। বলা হয়েছে, এর নিচে কোনো অবস্থাতেই শেয়ারের দাম যাবে না।
ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনো কোম্পানির মৌল ভিত্তি বিবেচনায় না নিয়ে বাজার মূল্যকেই বিবেচনা করা হয়। গত বছরের ২২ মার্চের আগের পাঁচ দিনের গড় মূল্য ফ্লোর প্রাইস হিসেবে ধরা হয়।
এনআরবিসি ব্যাংকের আইপিওতে যারা শেয়ার পেয়ে ধরে রেখেছেন তাদের ভরসা এখন ফ্লোর প্রাইস। নতুন তালিকাভুক্ত কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস র্নিধারণ করা হয় সে কোম্পানির অভিহিত মূল্যে।
সে হিসেবে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার দর ১০ টাকার নিচে নামবে না।
নতুন কোম্পানিগুলোর কেমন ছিল লেনদেন
মিউচ্যুয়াল ফান্ড ছাড়া গত এক বছর তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির শেয়ার প্রথম দিন ৫০ শতাংশ বেড়েছে। তবে এই দামে বেশির ভাগ কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ছাড়তে রাজি হয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় দিনও ৫০ শতাংশ দাম বেড়েছে। এমনও দেখা গেছে টাকা ৯ দিন এমনকি ১৫ দিন সর্বোচ্চ পরিমাণ দাম বেড়ে আকাশচুম্বি হয়েছে দাম।
সম্প্রতি তালিকাভুক্ত ই জেনারেশনের শেয়ার প্রথম কার্যদিবসে হাতবদল হয় মাত্র ২০১টি। লুব রেফের শেয়ার হাতবদল হয় ৪২১টি। মীর আকতার শেয়ার প্রথম দিন লেনদেন হয় ৭৩০টি। অর্থাৎ সর্বোচ্চ দামেও বলতে গেলে কোনো বিক্রেতাই ছিল না এসব কোম্পানির।
যেখানে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের প্রথম দিনেই লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ২২ লাখ ৯৩ হাজার ৭০৫টি শেয়ার। আর দ্বিতীয় দিনে লেনদেন হয়েছে ৮৮ লাখ ৮৬ হাজার শেয়ার। এবং তৃতীয় দিনে হাতবদল হয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ ১১ হাজার ৮৫৫টির।
ব্যাংকটি মোট ১২ কোটি শেয়ার ছেড়ে ১২০ কোটি টাকা উত্তলন করেছে পুঁজিবাজার থেকে। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াল ৩১টি।
কী বলছেন বিশ্লেষক
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে এটা কোনোভাবেই পুঁজিবাজার প্রভাবিত হয়নি। কিন্তু অন্য খাতের যে সব কোম্পানির দুই শতাংশ করে লভ্যাংশ দিচ্ছে সেগুলো দর বেড়ে যাচ্ছে। এর কোনো যৌক্তির কারণ জানা নেই।’
এর পেছনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায় আছে বলেও মনে করেন তিনি। বলেন, ‘ব্যাংকগুলো যখন ভালো করছিল তখন বাংলাদেশ ব্যাংক (লভ্যাংশের সীমা বেঁধে) একটা নির্দেশনা দিয়ে পুরো ব্যাংক খাতকে মন্দায় ঠেলে দিল। এমন অবস্থার মধ্যে আর্থিক খাত নিয়েও তাই হলো। পরে যখন বিষয়গুলো সমাধান করে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন নির্দেশনা দিলো তখন আর কেউ ব্যাংকের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে না।’