বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিয়ে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বুধবার অর্থনীতি বিষয়ক ও ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়নি। হলে আপনাদের (সাংবাদিকদের) জানাব।’
এর আগে ১৬ মার্চ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে সরকারি পর্যায়ে পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ড্রেজিং প্রকল্পে অর্থায়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পে সরকারি মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সরকারি প্রকল্পের পাশাপাশি রিজার্ভ থেকে বেসরকারি খাতেও অর্থায়নের চিন্তাভাবনা করছে সরকার। এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ খাতকে অগ্রাধিকার দেয়ার কথা-বার্তা চলছে বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, রিজার্ভের অর্থ বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করতে হলে পৃথক একটি নীতিমালা লাগবে। এটি এখনও তৈরি হয়নি। ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ দেয়ার বিষয়ে আপাতত কোনো চিন্তা ভাবনা নেই।
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আমরা ঋণের চাহিদা দেখব। পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’
রিজার্ভের অর্থ ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ অবকাঠোমো উন্নয়ন তহবিল বা বিআইডিএফ গঠন করেছে সরকার। এরই মধ্যে এ তহবিলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ তহবিল থেকে বছরে ২০০ কোটি ডলার সমপরিমাণ ১৭ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রাবনাবাদ ড্রেজিং প্রকল্পে সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। এ ঋণের সুদ হার হবে ২। তিন বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষকে।
বিদেশি ঋণের খরচ বেশি–এ কথা জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বেশি সুদে ঋণ না নিয়ে নিজেদের টাকায় কম সুদে বিনিয়োগ করতে পারলে তা হবে দেশের জন্য মঙ্গলজনক। সে জন্য আমরা সরকারি খাতে রিজার্ভে ঋণ দেয়ার বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছি।’
এর কারণ উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের রিজার্ভ যথেষ্ট শক্তিশালী। ফলে অর্থ ব্যয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’
বর্তমানে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলার, যা দেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি দেশের কাছে অন্তত তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ রিজার্ভ মজুত থাকতে হয়। সে হিসাবে বাংলাদেশ এখন নিরাপদ ও স্বস্তিতে আছে।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের অর্জন কী জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আর্থসামাজিক সব সূচকে আমাদের অর্জন অনেক বেশি।
‘বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৮০ তম। ক্রমান্বয়ে উন্নতির ফলে আমাদের অবস্থান এখন ৪১ তম।’
এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হয়েছে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ যেভাবে এগোচ্ছে এ ধারা অব্যাহত হলে অচিরেই আমরা এশিয়ান টাইগারে পরিণত হব।’