ঝিনাইদহের কলাচাষিরা ঘূর্ণিঝড় আম্পানে গতবার ব্যাপক ক্ষতির শিকার হন। এবার এখনো কোনো ঘূর্ণিঝড় হয়নি, কলা চাষের জন্য আবহাওয়াও রয়েছে অনুকূলে। এতে জেলায় ভালো ফলন হয়েছে কলার। বাজারে অন্যান্য ফলের সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে সব জাতের কলার দামই। ভালো দাম পেয়ে খুশি কলাচাষি ও ব্যবসায়ীরা। আসছে রমজান মাসে কলার দাম আরও বাড়বে বলে আশা করছেন কৃষকরা।
মঙ্গলবার সকালে ঝিনাইদহ শহরের পবহাটি কলাহাটে গিয়ে দেখা যায়, প্রকারভেদে প্রতি কাঁদি চাপা ২০০-২৫০ টাকায়, সবরি ৪০০-৫০০ টাকায়, সাগর ১৮০-২২০ টাকায় ও ধুপছায়া কলা ৫০০-৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
হাটে কথা হয় সদর উপজেলার মুরারীদহ গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমি দুই বিগে (বিঘা) জমিতি কলা লাগাইচি। এবার দাম ভালো পাচ্চি। এখুন দাম বেশি পাওয়ার জন্যি একটু লাভ হচ্ছে। এতে আমরা খুশি।’
একই এলাকার কলাচাষি জলিল মুন্সী বলেন, ‘করোনা আর আম্পানে আমাগের গতবার প্রচুর লস হইছিল। ঝড়ে তো একটা পুয়া (কলাগাছের চারা) থুয়ে যায়নি। সিবার পুরোডা লস খাইচি। মাস খানিক আগে থেকে দাম ভালো পাচ্চি। একুন যে লাভ হচ্চে তাতে গতবারের লুকসান না উটলিও একটু পুষাতি পারব।’
শৈলকুপা উপজেলার ভাটই গ্রামের কলাচাষি বাবর আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কলার দাম একুন ভালো। আর কয়দিন পর রুজা আসছে। রুজার ভিতর কলার দাম আরও হবে। আশা করে আছি, যাতে কলার দাম ভালো পাই।’
তিনি বলেন, ‘কলা মনে করেন এক বছরের ফসল। এক বিঘে জমিতি ৩৫০-৪০০ কলাগাছ লাগানো যায়। সার-মাটি, সেচ, জনখরচ দিয়ে ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। একুন যে দাম যাচ্ছে, সে অনুযায়ী ৭০ হাজার টাকা কলা বিক্রি করতি পারব। তাতে আমাগের ৩০-৩৫ হাজার টাকা লাভ হবে।’
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ মৌসুমে জেলার সদর, শৈলকুপা, হরিণাকুন্ডু, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও মহেশপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের মাঠে মাঠে ৫ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৩৭২ মেট্টিক টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এবার প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ নেই। যে কারণে কলাচাষিরা ফলন ভালো পাচ্ছে। বাজারে কলার চাহিদা বেশি থাকায় দামও ভালো পাচ্ছেন কলাচাষিরা।’
কলা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রযুক্তিগত সহযোগিতা ও বালাই ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।