স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে ৫০ টাকার রুপার স্মারক মুদ্রা ছাড়ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি কিনতে গুনতে হবে ৪ হাজার টাকা।
রৌপ্যমুদ্রার পাশাপাশি ৫০ টাকা মূল্যমানের দুটি স্মারক নোটও ছাড়বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে একটি নোট হবে প্রচলনযোগ্য, অপরটি কেবল স্মারক নোট।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
২৮ মার্চ থেকে এসব স্মারক ব্যাংক নোট, স্মারক নোট ও রৌপ্য স্মারক মুদ্রা বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে পাওয়া যাবে। পরবর্তীতে অন্যান্য শাখা অফিসেও পাওয়া যাবে।
রৌপ্যমুদ্রার ডিজাইন ও বৈশিষ্ট্য
৫০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৩৮ মিলিমিটার ব্যাসবিশিষ্ট ও ৯২৫ ফাইন সিলভার দ্বারা নির্মিত রৌপ্য স্মারক মুদ্রাটির ওজন ৩০ গ্রাম।
স্মারক মুদ্রাটির সম্মুখভাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চ ভাষণের প্রতিকৃতি, প্রতিকৃতির নিচে মূল্যমান কথায় ও অঙ্কে ‘পঞ্চাশ ৫০ টাকা’ এবং প্রতিকৃতির উপরে অর্ধবৃত্তাকারভাবে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ১৯৭১-২০২১’ লেখা রয়েছে।
স্মারক মুদ্রার পেছন ভাগে ইংরেজিতে ‘৫০’ এবং ‘০’ এর মাঝখানে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম’-এর নিচে ‘১৯৭১-২০২১’ মুদ্রিত।
উপরিভাগে অর্ধবৃত্তাকারভাবে ‘গোল্ডেন জুবিলি অব ইনডিপেন্ডেনস’ এবং নিচে ইংরেজিতে মূল্যমান ‘পঞ্চাশ টাকা’ মুদ্রিত রয়েছে।
স্মারক বাক্সসহ রৌপ্য স্মারক মুদ্রাটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ হাজার টাকা।
৫০ টাকা মূল্যমান স্মারক ব্যাংক নোট
স্মারক নোট
৫০ টাকা মূল্যমান স্মারক ব্যাংক নোটের ডিজাইন ও নিরাপত্তা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি সংবলিত বর্তমানে প্রচলিত ৫০ টাকা মূল্যমান ব্যাংক নোটের রং ও ডিজাইন (সম্মুখভাগের ডিজাইন: বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং পেছনভাগের ডিজাইন: ‘মই দেয়া’ জলরং শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন) অপরিবর্তিত রেখেই করা হয়েছে। কেবল নোটের সম্মুখভাগের ডান দিকে জলছাপ এলাকার কাছে লাল-সবুজ রঙে একটি পৃথক স্মারক লোগো সংযোজন করা হয়েছে।
শতভাগ কটন কাগজে মুদ্রিত ও গভর্নর ফজলে কবির স্বাক্ষরিত ১৩০ মিমি /৬০ মিমি পরিমাপের ৫০ টাকা মূল্যমানের স্মারক ব্যাংক নোটটিতে ব্যাংক নোটের অন্যান্য সকল নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য (নিরাপত্তা সুতা, জলছাপ, মাইক্রোপ্রিন্ট, সম্মুখভাগে খসখসে লেখা ইত্যাদি) অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
৫০ টাকা মূল্যমান স্মারক ব্যাংক নোটটি বর্তমানে প্রচলনে থাকা ৫০ টাকা মূল্যমানের অন্যান্য নোটগুলোর মতো দৈনন্দিন লেনদেনে ব্যবহার করা যাবে।
আর ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির স্বাক্ষরিত ৫০ টাকা মূল্যমান স্মারক নোটের আকার ১৩০মিমি/৬০ মিমি পরিমাপের। এ স্মারক নোটের সম্মুখভাগের বাম পাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রয়েছে। নোটের ডান দিকে জলছাপ এলাকার নিকটে স্মারক লোগো মুদ্রিত।
নোটের ওপরে মাঝখানে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ১৯৭১-২০২১’ এবং নিচে মাঝখানে ‘ফিফটি টাকা’ লেখা।
এ ছাড়া, নোটের উপরে ডান কোণে স্মারক নোটের মূল্যমান ইংরেজিতে ‘৫০’, নিচে ডান কোণে মূল্যমান বাংলায় ‘৫০’ লেখা রয়েছে।
নোটের পেছনভাগে ‘১৯৭১: মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বপূর্ণ অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ছবি মুদ্রিত। নোটের উপরিভাগে ইংরেজিতে ‘গোল্ডেন জুবলি অব ইনডিপেন্ডেনস ১৯৭১-২০২১’ লেখা রয়েছে।
নোটের উপরে বাম কোণে মূল্যমান বাংলায় ‘৫০’ এবং ডান কোণে ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম’ মুদ্রিত। নোটের নিচে ডান কোণে মূল্যমান ইংরেজিতে ‘৫০’ এবং মাঝখানে ‘পঞ্চাশ টাকা’ লেখা রয়েছে।
শতভাগ কটন কাগজে মুদ্রিত ৫০ টাকা মূল্যমান স্মারক নোটটির সম্মুখভাগে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির ডানে ২ মিলিমিটার চওড়া নিরাপত্তা সুতা এবং নোটের ডানদিকে জলছাপ হিসেবে ‘বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি’, ‘৫০’ এবং ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের মনোগ্রাম’ মুদ্রিত।
৫০ টাকা মূল্যমান স্মারক নোট, এটি লেনদেনে প্রচলিত ব্যাংক নোটের মতো ব্যবহার করা যাবে না।
৫০ টাকা মূল্যমান স্মারক নোটটির জন্য পৃথকভাবে বাংলা ও ইংরেজি হরফে ফোল্ডার প্রস্তুত করা হয়েছে। ফোল্ডার ছাড়া শুধুমাত্র খামসহ স্মারক নোটটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা এবং ফোল্ডার ও খামসহ স্মারক নোটটির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা ।
বিশেষ বিশেষ ঘটনাকে স্মরণীয় রাখতে এর আগে ৭ ধরনের স্মারক নোট ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই পর্যন্ত স্মারক মুদ্রা ছেড়েছে ১২ ধরনের। প্রচলিত ব্যাংক নোট বা মুদ্রা দিয়েই কেবল বাজারে সব ধরনের লেনদেন করা যায়। আর স্মারক নোট শখের বশে মানুষ সংগ্রহ করে থাকে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো ২০০ টাকা মূল্যমানের নোট বাজারে ছাড়া হয়। স্মারক ব্যাংক নোট নামে এটি বাজারে ছাড়া হলেও প্রচলিত নোটের মতোই লেনদেন করা যায়।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম নোট ছাপা হয়। ১৯৭২ সালের ২ জুন প্রথম বাজারে ছাড়া হয় ১০ টাকার নোট। এরপর ধীরে ধীরে বাজারে আসে ১, ৫, ১০, ২০, ৫০, ১০০ ও ৫০০ টাকার নোট। এর প্রায় সবই বাজারে আসে ১৯৭২-৭৬ সালের মধ্যে।
পরে ১৯৭৯ সালে ২০ টাকার নোট ও ১৯৮৮ সালে ২ টাকার নোট ছাড়া হয়। ২০০৮ সালে প্রথম বাজারে আসে ১০০০ টাকার নোট। এ ছাড়া স্বাধীনতার পর থেকে ধীরে ধীরে বাজারে ছাড়া হয় ১, ৫, ১০, ২৫, ৫০ পয়সা ও ১, ২, ৫ টাকার কয়েন।