বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পদ্মা সেতু ঘিরে মোংলা বন্দরে মহাকর্মযজ্ঞ

  •    
  • ২৩ মার্চ, ২০২১ ১৯:১৬

বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা নিউজবাংলাকে বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে মোংলা বন্দরের উন্নয়নে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা অনেক বাড়বে।

প্রমত্তা পদ্মার বুকে গত ডিসেম্বরে দৃশ্যমান হয় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের মধ্যে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সেতুটি খুলে দিলে দেশের অর্থনীতিতে সূচনা হবে এক নতুন অধ্যায়ের। বিশেষ করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে খুলে যাবে অর্থনীতির নতুন দুয়ার। পাল্টে যাবে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান।

পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলায় শুরু হয়েছে মহাকর্মযজ্ঞ। কারণ, সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হলে বেড়ে যাবে এই বন্দরের কর্মব্যস্ততা। গতি আসবে আমদানি-রপ্তানি কাজে। বন্দরের আশপাশে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্পকারখানা। এতে চাপ বাড়বে বন্দরের।

চাপ সামলাতে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে বন্দর ব্যবহারকারীদের জরুরি বার্তা সেবা বা ভ্যাসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমের উন্নয়ন, সারফেস ওয়াটার টিট্রমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন, কনটেইনার ইয়ার্ড সংস্কার, ২৩ কিলোমিটার ড্রেজিং ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নসহ নানা ধরনের অবকাঠামোর উন্নয়ন এগিয়ে চলছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানকে বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বৃহৎ বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত হতে যাচ্ছে এই বন্দর। এ ছাড়া এশিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার হচ্ছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপসচিব মো. মাকরুজ্জামান মুন্সি নিউজবাংলাকে বলেন, পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়েছে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষা। এরই মধ্যে এই সেতু ঘিরে মোংলা বন্দরের আধুনিকায়নে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এবং বাস্তবায়ন কাজও এগিয়ে চলছে।

ড্রেজিংয়ের জন্য ৭৯৪ কোটি টাকা

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বন্দরের ড্রেজিং ব্যবস্থা উন্নয়নে ৭৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় পশুর চ্যানেলের জয়মনির ঘোল থেকে বন্দর জেটি পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার ড্রেজিং করা হবে।

গত ১৩ মার্চ এর কাজ শুরু হয়েছে। ২০২২ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা। বর্তমানে চ্যানেলটির গভীরতা ৫ দশমিক ৫ মিটার। এখন যে গভীরতা আছে তাতে জেটিতে বড় কনটেইনারবাহী জাহাজ ঢুকতে পারে না।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছে, চ্যানেলটির ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হলে ৯ দশমিক ৫০ মিটার থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের কনটেইনারবাহী জাহাজ সরাসরি জেটিতে ঢুকতে পারবে।

১৪ কোটি টাকার কনটেইনার ইয়ার্ড

বন্দরের কনটেইনার রাখার স্থান বৃদ্ধির জন্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে কনটেইনার ইয়ার্ড, যার ধারণক্ষমতা হবে ১ হাজার ৫০টি। আগামী বছরে এর নির্মাণ শেষ হবে।

মোংলা বন্দরে অবস্থান করা বিদেশি জাহাজ, বন্দর এলাকার শিল্প অঞ্চলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। এ বছরের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার কথা।

এ ছাড়া বন্দর ব্যবহারকারীদের জন্য জরুরি বার্তা সেবা কার্যক্রমের উন্নয়ন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বন্দর চ্যানেলে প্রবেশ করা প্রতিটি জাহাজ তদারকির পাশাপাশি গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা সহজ হবে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৪৩০ কোটি টাকা

৪৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোংলা বন্দরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের কাজও এগিয়ে চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বন্দরে চলাচলকারী বিভিন্ন বাল্ক, কনটেইনার, ট্যাংকার ও অন্যান্য জলযান থেকে নিঃসৃত তেল ও পেট্রোলিয়াম বর্জ্যসহ অন্যান্য আবর্জনা সংগ্রহ করা সহজ হবে।

একই সঙ্গে পশুর চ্যানেল ও বন্দরের আশপাশের নদ-নদীতে বিভিন্ন জাহাজ থেকে নিঃসৃত তেল অপসারণ সহজ হবে। এর ফলে মোংলা বন্দর এলাকায় সামুদ্রিক দূষণ কমবে। পাশাপাশি বন্দর ও চ্যানেল এলাকার পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।

বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে কয়েক গুণ

যোগাযোগ করা হলে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ মুসা নিউজবাংলাকে বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে মোংলা বন্দরের উন্নয়নে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা অনেক বাড়বে। গতি আসবে দেশের আমদানি-রপ্তানি কর্মকাণ্ডে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে।

গত বছর মোংলা বন্দরে জাহাজ আসে ৯০৩টি। করোনা মহামারির মধ্যেও গত আট মাসে বন্দরে ৭০৩টি জাহাজ এসেছে। পদ্মা সেতু চালু হলে রাজধানীর সঙ্গে মোংলা বন্দরের দূরত্ব কমে যাবে। পণ্য খালাসে খরচ কমবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর