সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদ নয়, নগদ আর বোনাস মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
এক মাস আগে শেয়ার প্রতি সর্বোচ্চ দেড় টাকা বা ১৫ শতাংশ লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দিয়ে প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে সোমবার এক সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ থাকলে লভ্যাংশ বিতরণে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আগের প্রজ্ঞাপনে যা বলা হয়েছিল, সেই শর্ত বজায় রাখা হয়েছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনের পর পুঁজিবাজারে এসব কোম্পানির শেয়ার দরে বিরূপ প্রভাব পড়ার পর ১৫ মার্চ তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
সেই বৈঠকের পর বিএসইসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ব্যাংকগুলো ৩০ শতাংশের জায়গায় সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ আর আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১৫ শতাংশ নগদের পাশাপাশি বোনাস শেয়ারও লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করতে পারবে। তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্পষ্টীকরণ ব্যাখ্যা দেবে।
বৈঠকের দুই দিনের মাথায় ব্যাংকের লভ্যাংশের সীমা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত কী হবে, তা ঝুলিয়ে রাখা হয়।
তবে বৈঠকের এক সপ্তাহ পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠিয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশসহ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে।’
গত ২৪ ফ্রেবুয়ারি জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, কোনো প্রতিষ্ঠান যতই মুনাফা করুক, তারা শেয়ারধারীদের ১৫ শতাংশ অর্থাৎ শেয়ার প্রতি দেড় টাকার বেশি নগদ লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করতে পারবে না। এর আগে এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদ ও ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দিতে পারবে।
এমন সিদ্ধান্তে পুঁজিবাজারে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আর এই সিদ্ধান্ত আসার আগে ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ শেয়ার প্রতি সাড়ে তিন টাকা লভ্যাংশ ঘোষণা করা আইডিএলসির শেয়ার প্রতি ১২ টাকা মূল্য হারায়।
আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের সীমা বাড়িয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন
এই প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিডি ফিনান্সের শেয়ার প্রতি ৬০ পয়সা নগদের পাশাপাশি ৬ শতাংশ বোনাস বিতরণ করা যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। ফলে এই প্রতিষ্ঠানটিও দর হারিয়েছে।
এসব ঘটনায় পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মার্চেন্ট ব্যাংকদের সমিতি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এই নির্দেশনা পাল্টাতে চিঠি দেয়। চিঠি দেয় ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।
বিষয়টি পর্যালোচনা চেয়ে আসছিল বিএসইসিও। পুঁজিবাজার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করে অন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যবস্থা নেবে, এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে ২০১৫ সালেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিষয়টি মেনে চলেনি আর।
লভ্যাংশের সীমা বাড়লেও অন্যান্য শর্ত অপরিবর্তিত
শ্রেণিকৃত বা খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের বেশি থাকলে লভ্যাংশ বিতরণে নিষেধাজ্ঞার কথা দ্বিতীয় প্রজ্ঞাপনেও জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন পর্যাপ্ততার হার ১০ শতাংশের কম এবং খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের এর বেশি, সেসব প্রতিষ্ঠান কোনো লভ্যাংশ দিতে পারবে না।
যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংরক্ষিতব্য সংস্থান (প্রভিশন সংরক্ষণ) না রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে ঘাটতি সমন্বয় করে ডেফারেল সুবিধা (প্রভিশন সংরক্ষণে অতিরিক্ত সময় না নেয়া) ভোগ করছে, সেসব প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ সংস্থান সংরক্ষণের আগে কোনো প্রকার নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে দিতে পারবে।
এসব নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে বলে নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে।