শেয়ার প্রতি এক টাকা ২৫ পয়সা নগদ আর প্রতি ৪০টি শেয়ারে তিনটি বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে দেয়ার প্রস্তাব করার পর প্রিমিয়ার ব্যাংকের শেয়ারের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশের মতো। কেবল এই ব্যাংকটি নয়, বেড়েছে এই খাতের সিংহভাগ শেয়ারেরই দাম।
করোনাকালে ব্যাংকের মুনাফা কমে যাবে- এমন আশঙ্কার মধ্যে বছরের শুরুতে অনানুষ্ঠানিক তথ্যের ভিত্তিতে পরিচালন মুনাফার যে খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়, তাতে দেখা যায়, বেশিরভাগ ব্যাংকটি গত বছরের তুলনায় কম লাভ করেছে। কোনো কোনো ব্যাংকের ৪১ শতাংশ, কোনো ব্যাংকের ৪০, কোনোটির ৩০, কোনোটির ২৫ বা ২০ বা ১৫ শতাংশ কম মুনাফা হয়েছে।
ফলে এবার লভ্যাংশ কমে যাবে, এমন আশঙ্কায় লভ্যাংশ ঘোষণার মৌসুমে দাম কমে যায় শেয়ারের। তবে চলতি মাসের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যে পাঁচটি ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, তাতে দেখা গেছে উল্টো চিত্র।
পাঁচটির মধ্যে তিনটি ব্যাংকই গত বছরের চেয়ে বেশি আয় করেছে। একটির আয় গত বছরের সমান আর একটি গত বছরের চেয়ে কম আয় করেছে।
এই পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে চারটির পরিচালন মুনাফা গত বছরের তুলনায় সর্বনিম্ন ৯০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০৩ কোটি টাকা কম হয়েছে। তবে চূড়ান্ত মুনাফায় ব্যাংক এশিয়ার ৪ শতাংশ, শাহজালাল ইসলামীর ১৫ শতাংশ ও ডাচবাংলার মুনাফা বেড়েছে ২৭ শতাংশ। মার্কেন্টাইলের ইপিএস গত বছরের সমান হয়েছে।
- আরও পড়ুন: মহামারির বছরে চমক দেখাল ব্যাংক এশিয়াও
এর মধ্যে মার্কেন্টাইল শেয়ার প্রতি ১০ পয়সা কম লভ্যাংশ দেয়ার প্রস্তাব করলেও শেয়ার দামের তুলনায় লভ্যাংশ আকর্ষণীয়। এক টাকা নগদের পাশাপাশি ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়ার প্রস্তাব করেছে পরিচালনা পর্ষদ।
ব্যাংক এশিয়া গত বছরের সমান এক টাকা নগদ, আর শাহজালাল ও ডাচ বাংলা গত বছরের চেয়ে বেশি হারে লভ্যাংশ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আর প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেশি হলেও চূড়ান্ত মুনাফা গত বছরের চেয়ে বেশ কম হয়েছে। তবে ব্যাংকটি গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুনাফা বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রোববার ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে দেখা যায়, ব্যাংকে টাকা রাখলে বছরে যে সুদ পাওয়া যাবে, তার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হারে নগদে মুনাফা পাবেন এই ব্যাংকের শেয়ারধারীরা।
লভ্যাংশ ঘোষণার দিন ব্যাংকটির শেয়ারের দাম ছিল ১২ টাকা ৬০ পয়সা। বিনিয়োগকারীরা ১ টাকা ১৫ পয়সা নগদ মুনাফা পেলে বাজারদরের ভিত্তিতে তাদের মুনাফা হয় ৯.৯০ শতাংশ। অথচ ব্যাংকে টাকা রাখলে এখন ৪.৫ থেকে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়।
এর আগে মার্কেন্টাইলও এফডিআরের সুদ হারের চেয়ে বেশি হারে লভ্যাংশ দেয়ার প্রস্তাব করে।
ব্যাংকগুলো একে একে লভ্যাংশ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সংশয় যে কাটতে শুরু করেছে, সেটার কিছুটা হলেও নমুনা দেখা গেছে সোমবার।
এদিন এক দশক পর প্রথম ব্যাংক হিসেবে এনআরবিসি ব্যাংকের লেনদেন শুরু হয়েছে। প্রথম দিনই দাম বেড়েছে ৩২ শতাংশ। সব মিলিয়ে দাম বেড়েছে ২০টি ব্যাংকের।
সোমবার ব্যাংক খাতের ৩১টি কোম্পানির লেনদেনের চিত্র
প্রিমিয়ারের দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ৯.৫২ শতাংশ। ১০ থেকে ৬০ পয়সা পর্যন্ত দাম বেড়েছে বাকি ১৭টি ব্যাংকের। পাঁচটি ব্যাংকের দাম আগের দিনের সমান ছিল। আর পাঁচটি ব্যাংক দর হারিয়েছে, যার মধ্যে একটির দর কমেছে ১০ পয়সা, দুটির ২০ পয়সা করে, একটির ৫০ পয়সা এবং একটির ৮০ পয়সা।
ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়ানোর প্রভাবে পুঁজিবাজারে পতনও থেমেছে। সব মিলিয়ে মূল্য সূচক বেড়েছে ৬২ পয়েন্ট। গত দুই কার্যদিবসে যথাক্রমে ৮১ ও ৮৪ পয়েন্ট সূচক পতনের পর এই উত্থান কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছে বিনিয়োগকারীদের মনে।
ব্যাংকিং খাত নিয়ে গণমাধ্যমে নানা নেতিবাচক সংবাদের কারণে গত কয়েক বছর ধরেই এই খাতের শেয়ারগুলোর দাম ক্রমেই কমছে। কমতে কমতে অভিহিত মূল্যের নিচেও নেমেছে কয়েকটি ব্যাংকের শেয়ারের দর, যদিও গত পাঁচ বছরেও কোনো ব্যাংক ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেয়নি।
- আরও পড়ুন: কমেছে পরিচালন, বেড়েছে চূড়ান্ত মুনাফা
গত পাঁচ বছরই দেখা গেছে ব্যাংকের শেয়ারধারীরা বাজারমূল্যের ৯ থেকে ১৭ শতাংশ নগদে লভ্যাংশ হিসেবে পেয়ে আসছেন। সঙ্গে পেয়েছেন বোনাস শেয়ার। এত বেশি হারে সুদ কোনো সঞ্চয়পত্র ছাড়া কোনো সঞ্চয়ী হিসাবে এখন পাওয়া যায় না।
ব্যাংক খাতে দর বৃদ্ধির দিন বাজারে বেড়েছে মূল্য সূচক
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ মনে করেন, এখন ব্যাংকের শেয়ারের যে দাম আর তারা যে হারে লভ্যাংশ বিতরণ করে, তাতে বিনিয়োগের জন্য এই খাত খুবই আকর্ষণীয়। তবে এই খাতের শেয়ারের দর খুব একটা উঠানামা করে না বলে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কেনাবেচা করে অন্য খাতের মতো মুনাফা করতে পারে না বলে তাদের আগ্রহ কম।
অন্যান্য খাতে শেয়ারের দর উঠানামার কারণে বিনিয়োগকারীরা যেমন ভালো মুনাফা করে, তেমনি হঠাৎ করে দামে ধস নামলে ব্যাপক লোকসানও হয় তাদের।