পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রবণতার মধ্যে লকডাউন আর সাধারণ ছুটির আলোচনা। পর পর দুদিন পড় পতনে বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি উব্দেগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে।
সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে লকডাউন গুজবে ৮১ পয়েন্ট, আর দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে পতন ৮৪ পয়েন্ট।
আগের কার্যদিবসে পতনের পর বিবৃতিতে লেনদেন বন্ধ হবে না জানিয়ে বাজার ঠেকানোর চেষ্টা। পরের দিন আরও বড় পতনের পর এবার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ডাকল ব্রোকারদের।
রোববার সন্ধ্যায় বিএসইসি কার্যালয়ে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে হয় বৈঠক।
বৈঠকে পুঁজিবাজারের ‘রোগগুলোর’ একটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের অভাব নিয়ে কথা হয়।
বিএসইসি কমিশনার শেখ শামুসিদ্দন আহমেদ বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগে বাধা কী?
বৈঠকে আসা মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশন, ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন ডিবিএর প্রতিনিধিরা তুলে ধরেন তাদের সমস্যা ও পরামর্শ।
ডিবিএ সভাপতি শরিফ আনোয়ার হোসেন বলে, তারা বলেন, ব্রোকারহাউজগুলো তাদের ডিলার অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী আগে গ্রাহকের অর্ডার বাস্তবায়ন করতে হয়। পরে ডিলার একাউন্ট থেকে ক্রয় আদেশ দিতে হয়। ১৯৮৭ সালে প্রণীত এই আইনের কারণে ডিলারদের বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে।
বিএসইসি কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আইনের এই শর্তটি লংঘন করার কারণে এখনও কারো বিরুদ্ধে নন-কমপ্লায়েন্স অভিযোগ আনা হয়নি, এবারও বিষয়টিকে নন-কমপ্লায়েন্স হিসেবে গণ্য করা হবে না।
তবে বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার হওয়া উচিত জানিয়ে আরও একটি বৈঠক করার কথা জানান তিনি।
ডিবিএ সভাপতি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ নিয়ে একজন প্রস্তাব করেছিল। কিন্ত বিএসইসি পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এটি নিয়ে আলাদা একটি বৈঠকের প্রয়োজন হবে।’
গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে পুঁজিবাজারের পতনের পেছনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বিনিয়োগ অনীহাকে দায়ী করে আসছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন না করায় পুঁজিবাজারে পতন তরান্বিত হয়েছে।’
বেশি আলোচনা গুজব নিয়ে আলোচনা
ডিবিএ সভাপতি বলেন, বৈঠকে মূলত করোনার কারণে পুঁজিবাজারে যে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে সেটি নিয়ে কথা হয়েছে। গুজবের কারণে পুঁজিবাজারে যে পতন তরান্বিত হয়েছে সেটি থেকে কীভাবে উত্তরণ হওয়া যায় সে বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
‘আমাদের জানানো হয়েছে, ব্যাংক খোলা থাকলে পুঁজিবাজারও খোলা থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘মিডিয়াতে গত দুদিন ধরে করোনা মহামারির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় আবারও সাধারণ ছুটির বিষয়টি সামনে আসে। এতে পুঁজিবাজারের সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের মধ্যেই বিনিয়োগ অনীহা তৈরি হয়েছে।
‘মূলত এ ধরনের গুজবে পড়ে কেউ যাতে বিনিয়োগ থেকে বিরত না থাকে সে বিষয়টি বলা হয়েছে।’
কমিশনার শেখ শামুসিদ্দন আহমেদ বলেন, ‘পুঁজিবাজারে গত দুদিন ধরে যে অস্থিতিশীল অবস্থা দেখা যাচ্ছে, তার মূলত করোনা পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গুজবের কারণে। আর এসব গুজবের কোনো সঠিক ভিত্তি নেই। আমরা চাই এসব গুজব থেকে পুঁজিবাজার নিরাপদ থাকুক।’
তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট যে যতদিন ব্যাংক খোলা থাকবে, ততদিন পুঁজিবাজারও খোলা থাকবে। পুঁজিবাজার যেহেতু খোলা থাকবে তাই সব কার্যক্রমের পাশাপাশি লেনদেনও চলবে। এ নিয়ে সন্দেহের কোনো কারণ নেই।’
২০২০ সালের মার্চে করোনা সংক্রমণ দেখা দেয়ার পর পুঁজিবাজারে ধসের মধ্যে লেনদেন স্থগিত করা হয়। ৩০ এপ্রিল থেকে ২৬ মে বন্ধ থাকে লেনদেন।
বৃহস্পতিবার গুজব ছড়ায় করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় লকডাউন দেয়া হবে এবং লেনদেন আবার স্থগিত হবে।
এ কারণে কম দামে হলেও শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন বহুজন। কারণ, লেনদেন বন্ধ থাকলে যারা মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কিনেছেন, তাদের সুদ গুণতে হবে।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, লকডাউন হচ্ছে না।
এ নিয়ে কিছুটা স্বস্তির মধ্যে রোববার লেনদেন শুরু হলেও বাজারে আবার অধঃগতি দেখা দেয়।
এবার গুজব ছড়ায় গত বছরের মার্চের মতো আবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা হচ্ছে।
কয়েকটি গণমাধ্যম স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নানের বক্তব্য ভুলভাবে উদ্ধৃত করাকে কেন্দ্র করে এই গুজব ছড়ায়। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয় ব্যাখ্যা। বলা হয়, সাধারণ ছুটি হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে ২৬ মার্চের পর।
গুজব রটিয়ে পুঁজিবাজারে কেউ ফায়দা লুটছে কি না প্রশ্নে বিএসইসি কমিশনার শামসুদ্দিন বলেন, ‘আমরা এটিও পর্যবেক্ষণ করছি। পুঁজিবাজারের যে পতন সেটি যেন অস্বাভাবিক না হয়। অস্বাভাবিক কিছু পেলে অবশই আমরা তার ব্যবস্থা নেব।’