করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি আর পুঁজিবাজারে পতন যেন সমানুপাতিক।
বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বড় পতন হয় নতুন করে লকডাউন ও লেনদেন স্থগিতের গুজবে। আর রোববার সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে আগের দিনের চেয়েও বেশি পতন হলো আবার ছুটির আলোচনায়।
লকডাউন হচ্ছে না-এটা সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করার পর এটি নিয়ে আর আলোচনা নেই। তবে স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, গত বছরের মতোই সাধারণ ছুটি ঘোষণা হতে পারে।
সকাল ১০টায় লেনদেন শুরু হওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে সূচক পড়ে যায় ৭৪ পয়েন্ট। এক পর্যায়ে বেলা দুইটায় সূচক পড়ে যায় ৯৬ পয়েন্ট।
শেষ পর্যন্ত আগের দিনের চেয়ে ৮৪ পয়েন্ট কমে শেষ হয় লেনদেন। সূচকের পাশাপাশি কমেছে লেনদেনও।
লেনদেনের পরিমাণ ৬১৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে যা ছিল ৬৪৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
হাতবদল হওয়া কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৩১টির, কমেছে ২৩৯টির আর দর পাল্টায়নি ৭৮টির।
হঠাৎ পুঁজিবাজারে কী হয়েছে, তা বুঝে উঠতে পারছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিও। এই অবস্থায় তারা বৈঠকে বসছে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ডিবিএর সঙ্গে।
বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বৈঠকে পুঁজিবাজারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলোচনা হবে। কীভাবে এ অবস্থার উন্নতি করা যায় সে বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।’
বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।
বিশ্লেষকদের বক্তব্য
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনার কারণে পুঁজিবাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে যেভাবে কমেছে সূচক ও লেনদেন সেটা কাঙ্ক্ষিত না। বরং পুঁজিবাজারে আরও ভালো থাকার কথা।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত পতন দেখতে দেখতে বিনিয়োগাকরীরাও আতঙ্কে পড়ে গেছে। ফলে নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না।’
তবে আশাবাসী ভিআইপিবি অ্যাসটে ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিদুল ইসলাম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অনেক কোম্পানির শেয়ার দর তলানিতে। বাজারের এমন অবস্থায় পতন খুব বেশি দীর্ঘ হবে বলে মনে হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘সব কোম্পানির শেয়ার এখন কেনার উপযোগী। সব পক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকলে শিগগিরই এমন নেতিবাচক অবস্থা কেটে যাবে।’
দর পতন ভালো খারাপ সব কোম্পানির
গত বছরের চেয়ে বেশি মুনাফা করা ব্যাংক এশিয়া শেয়ার প্রতি এক টাকা করে নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করার পর শেয়ারের দর কমেছে ৬০ পয়সা। কোম্পানির শেয়ার দর গত এক বছরের সর্বনিম্ন অবস্থানের কাছাকাছি।
বাজারে ফ্লোর প্রাইসের কারণে প্রায় ৮০টি কোম্পানির দর আর কমা সম্ভব নয়। বাকি কোম্পানির মধ্যে যখন ৮৫ শতাংশ কোম্পানি দর হারায়, তখন ভালো খারাপের কোনো হিসাব থাকে না সেটা সহজেই বোঝা যায়।
দর হারিয়েছে রেকিড বেনকাইজার, ইউনিলিভার, বার্জার, লিন্ডে, ওয়ালটনের মতো শক্তিশালী কোম্পানিও। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ কোম্পানিরও একই অবস্থা।
রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের চিত্র
বিমা খাতের ৪৯টি কোম্পানির মধ্যে আরও ২৩টি দর হারিয়েছে। তবে বেড়েছে ১৯টির, যার একটি বেড়েছে সর্বোচ্চ যত বাড়া সম্ভব প্রায় ততটাই।
দর বৃদ্ধি পাওয়া শীর্ষ ১০ কোম্পানির মধ্যে সাতটি দেখা গেছে বিমা খাতের। আর দুটি ছিল বস্ত্র ও একটি ব্যাংক।
দর বৃদ্ধি পাওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে শীর্ষ ছিল রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ার প্রতি দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ৪৩ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৭ টাকা ৬০ পয়সা।
দ্বিতীয় স্থানে ছিল জনতা ইন্স্যুরেন্স, যার শেয়ারের দর বেড়েছে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। শেয়ার প্রতি দর ২৭ টাকা ৯০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা।
এশিয়া প্যাসিফিক ইন্স্যরেন্সের শেয়ার দর বেড়েছে ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। স্কয়ার টেক্সটাইলের শেয়ার দর বেড়েছে ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ার দর ৩৩ টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৪ টাকা ১০ পয়সা। দর বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৭১ শতাংশ।
এ তালিকায় ছিল মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স, প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, জেনিথ টেক্সটাইল ও নিটল ইন্স্যুরেন্স।
অনাগ্রহের কোম্পানি
রোববার দর হারানোর তালিকায় শীর্ষে ছিল অনালিমা ইয়ার্ড, যার শেয়ার প্রতি দর কমেছে ১০ শতাংশ। অর্থাৎ এদিন কোম্পানিটির দিনের সর্বোচ্চ দর কমেছে।
১৬ মার্চ থেকে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমছে। মাত্র তিন কার্যদিবসে দর কমে ৪৬ টাকা থেকে হয়েছে ৪১ টাকা।
দর হারানোর তালিকায় আরও ছিল আজিজ পাইপ, যার শেয়ার দর কমেছে ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ, বিকন ফার্মার শেয়ার দর কমেছে ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ, এমারেল্ড অয়েলের দর কমেছে ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ।
সূচক ও লেনদেন
রোববার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে –ডিএসই প্রধান সূচক ৪৮ দশমিক ৯১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৩৪৯ পয়েন্টে।
শরিয়াহভিত্তিক কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসইএস ২১ দশমিক ১৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২২৬ পয়েন্টে।
বাছাই করা কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৩৯ দশমিক ৩১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৩৪ পয়েন্টে।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে-সিএসই প্রধান সুচক সিএএসপিআই ২৭৪ দশমিক ৫০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৪৭৫ পয়েন্ট।
লেনদেন হওয়া ২৩১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ১৬টির, কমেছে ১৬৭টির ও পাল্টায়নি ৪৮টির। লেনদেন হয়েছে ২৫ কোটি টাকা।