বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সবসময় লাভজনক নয় বিদেশি ঋণ

  •    
  • ২১ মার্চ, ২০২১ ০৯:৪৮

২০১৬ সালের এপ্রিলে ৭৬ টাকা ৬০ পয়সাতেও ডলার কিনতে পারা গেছে, যেটি ২০১৯ সালে বেড়ে ছাড়ায় ৮৪ টাকা। অর্থাৎ ১০ শতাংশের বেশি মূল্য হারায় টাকা। ফলে ৫ বছর আগে যারা বিদেশ থেকে ঋণ এনেছেন, তাদেরকে বিনিময় হারের কারণে ১০ শতাংশ বেশি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে আছে সুদ হার।

বাংলাদেশের ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিলে সুদ বেশি। এই অবস্থায় বিদেশি ঋণে ঝুঁকছেন বড় ব্যবসায়ীরা। আপাতদৃষ্টিতে সুদ হার কম। কিন্তু তাতে ব্যবসায়ী বা শিল্প উদ্যোক্তাদের নিশ্চিতভাবেই লাভ হবে সেটা বলার সুযোগ নেই। বরং বিদেশি ঋণে খরচ বেড়ে যাওয়ার সুযোগও আছে।

এর কারণ মুদ্রার বিনিময় হার। ঋণের অর্থ ডলার বা অন্য কোনো মুদ্রায় দেশে আসে আর তা পরিশোধও করতে হয় বিদেশি সেই মুদ্রায়।

এ কারণে বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার যদি বেড়ে যায়, তাহলে ঋণগ্রহীতাদের বেশি দামে তা কিনতে হবে। ফলে তাদেরকে প্রত্যাশিত অর্থের চেয়ে বেশি পরিশোধ করতে হতে পারে।

গত দুই বছর ধরে টাকার সঙ্গে বিদেশি মুদ্রার বিনিময়হার স্থিতিশীল থাকলেও পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল আগের তিন বছর।

২০১৬ সালের এপ্রিলে ৭৬ টাকা ৬০ পয়সাতেও ডলার কিনতে পারা গেছে, যেটি ২০১৯ সালে বেড়ে ছাড়ায় ৮৪ টাকা। অর্থাৎ ১০ শতাংশের বেশি মূল্য হারায় টাকা।

ফলে ৫ বছর আগে যারা বিদেশ থেকে ঋণ এনেছেন, তাদেরকে বিনিময় হারের কারণে ১০ শতাংশ বেশি টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। এর সঙ্গে আছে সুদ হার।

আবার ঋণ দেশে ডলারে এলেও ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বাংলাদেশি মুদ্রাতেই তা পান উদ্যোক্তারা। এখানেও ডলার প্রতি ২০ থেকে ৩০ পয়সা কমিশন কেটে রাখা হয়। আবার ঋণ পরিশোধে ডলার কেনার সময়ও অতিরিক্ত ২০ থেকে ৩০ পয়সা বেশিতে কিনতে হয়।

বছর পাঁচেক আগেও বাংলাদেশে ব্যাংক ঋণের সুদহার ১২ শতাংশের বেশি থাকায় বিনিময় হার বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়েও বিদেশি ঋণে ঝুঁকতে শুরু করেন ব্যবসায়ীরা।

তবে এখন দেশে ব্যাংক ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। ভালো ঋণদাতা ও বড় অংক হলে এর চেয়ে কম সুদেও ঋণ দেয়া হচ্ছে।

আর এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে এখন বিদেশি ঋণে ঝোঁক কিছুটা কম বলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান বলছে।

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশি ঋণ নিতে হলে ৮ থেকে ৯ শতাংশ সুদ দিতে হচ্ছে, কিন্তু বিদেশি ঋণ ৩ বা ৪ শতাংশে পাওয়া যাচ্ছে।

‘তবে বিদেশি ঋণে যে সবসময়ই লাভ হবে এমন নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষতিও হয়। যদি এক্সচেঞ্জ রেট ডিভ্যালু (অবমূল্যায়ন) করে তাহলে ক্ষতি হবে। ডলারের দাম যদি বাড়তে থাকে তাহলে বিদেশি ঋণ উদ্যোক্তাদের জন্য ক্ষতির কারণ। হঠাৎ করে ডলার রেট যদি ৫ শতাংশ বেড়ে যায় অর্থাৎ ডলারের বিনিময় হার ৮৪ টাকা থেকে ৮৮ টাকা হয় তখন কিন্তু সুদহার দেশীয় ঋণের থেকে বেশি হয়ে যাবে। কারণ, আগে ৩ শতাংশ সুদে ঋণ পেলেও ডলার রেট ৫ শতাংশ বেড়ে গেলে তখন সুদহার ৮ শতাংশ গুণতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘বিদেশি ঋণ অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই উদ্যোক্তারা নেয়। আগামী এক বা দুই বছর এক্সচেঞ্জ রেটে কোনো পরিবর্তন হবে না, বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও শক্তিশালী অবস্থানে আছে- এমন আশা থেকে উদ্যোক্তারা বিদেশি ঋণ নেয়।’

ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট শামস মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত কয়েকবছরে টাকার অবমূল্যায়ন হয়নি। যদি এটা হয়ে থাকে, তাহলে বিদেশি ঋণ নেয়া ঝুঁকি।’

এই ব্যবসায়ী নেতা জানান, মুদ্রার বিনিময় হার যে কোনো সময় বেড়ে যেতে পারে, এই বিষয়টি তাদেরকে মাথায় থাকে। এ কারণে এসব ‍ঋণ তারা দ্রুত পরিশোধ করা চেষ্টা করেন।

কবে থেকে এই সুযোগ

বিদেশ থেকে দেশি উদ্যোক্তাদের ঋণ সংগ্রহের সুযোগ প্রায় চার দশক আগেই করে দেয়া হয়েছে।

১৯৮৫ সালে ‘অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট’ নামে ব্যাংকের আলাদা বিভাগ গঠন করা হয়। বর্তমানে ৩৬টি ব্যাংক এই বিভাগ গঠন করে ঋণ বিতরণ করছে।

প্রথম দিকে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা এ সুবিধা নিলেও পরে অন্য খাতের উদ্যোক্তারাও এই সুবিধা নিতে শুরু করেন।

চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি বিদেশি ঋণ নেবার পথ আরও প্রশস্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে বিদেশি মালিকানাধীন সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানও মূল কোম্পানি (প্যারেন্ট) থেকে ঋণ নিতে পারবে। তবে এ সুবিধা ট্রেডিং ব্যবসার জন্য প্রযোজ্য হবে না। উৎপাদন ও সেবা কার্যক্রম শুরু থেকে ছয় বছর পর্যন্ত এ সুবিধা নেয়া যাবে। আগে এ সুবিধা তিন বছর পর্যন্ত নেয়া যেত।

দেশে এখন ব্যাংক ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। ভালো ঋণদাতা ও বড় অংক হলে এর চেয়ে কম সুদেও ঋণ দেয়া হচ্ছে।

মোট বিদেশি ঋণ কত

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যক্তি বা বেসরকারি পর্যায়ে বিদেশ থেকে ঋণ গ্রহণ করা হয়েছে ৬৩ হাজার দুই কোটি টাকা।

গত সেপ্টেম্বরের তুলনায় তিন মাসে ঋণ কমেছে ৩০৯ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

২০১৯ সালের শেষের দিকে ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশে নেমে আসার পরেই মূলত বিদেশি ঋণের প্রতি ঝোঁক কমতে শুরু করে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এ ঋণ ছিল ৬০ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। পরের বছরের জুন পর্যন্ত ঋণ বেড়ে হয় ৬৩ হাজার ৬৪৭ কোটি টাকা।

অর্থাৎ সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর হওয়ার পর বিদেশি ঋণ বাড়ার বদলে কমেছে।

বিদেশ থেকে বেসরকারি খাতের নেয়া ঋণের মধ্যে সাড়ে ২১ শতাংশই হলো বাণিজ্যিক ঋণ। বাকি ঋণের মধ্যে আছে বহুপাক্ষিক, দ্বিপাক্ষিক ও সরবরাহকারী ঋণ।

ঝুঁকি উঠে এসেছে গবেষণায়

বিদেশি ঋণ নিয়ে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)। শিরোনাম ছিল ‘প্রসপেক্টস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জ অব শর্ট টার্ম ফরেন কারেন্সি ফিন্যান্সিং অব ব্যাংকস’।

এতে বলা হয়, ক্রমবর্ধমান এ ঋণ বাংলাদেশের বৈদেশিক লেনদেনে ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

গবেষণা অনুযায়ী বেসরকারি খাতে বিদেশি ঋণের বড় উৎসে পরিণত হয়েছে জার্মানি। দেশে আসা মোট ঋণের প্রায় ১৪ ভাগ ঋণই আসছে দেশটি থেকে।

লাইবর (লন্ডনের শীর্ষ ১৫ ব্যাংকের আন্তঃলেনদেনে সুদহার) রেটের সঙ্গে ৩ ও ৩ দশমিক ৯ শতাংশ সুদে এসব ঋণ নেয়া হয়।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইউরো ও বাংলাদেশি ব্যাংকের সুদহারে নেয়া হয়েছে। এখন লাইবর রেট বৃদ্ধি ও টাকার বিপরীতে ডলারের দর বৃদ্ধিতে এসব ঋণ পরিশোধে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের চাপ তৈরি হতে পারে।

ডলারের দর

চলতি সপ্তাহে আন্ত ব্যাংকে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সার মধ্যে। তবে মানি এক্সচেঞ্জে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খোলাবাজারে প্রতি ডলার ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৮৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৬ টাকা থেকে ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা।

এ ক্ষেত্রে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম ধরে রাখতে ডলার কিনে দাম স্থিতিশীল রাখতে ভূমিকা রাখছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চলতি মাসের ১১ মার্চ পর্যন্ত ১০০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর গত জুলাই থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত মোট ছয় হাজার ৩১৭ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। আর গত অর্থবছরে কিনেছিল ৮৭৭ মিলিয়ন ডলার।

যেভাবে ঋণ নেয়া যায়

বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নিতে বড় জোগানদাতা বা মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে দেশে কার্যরত বিদেশি ব্যাংকের শাখাগুলো।

এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে রয়েছে এইচএসবিসি ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড। অপরদিকে দেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে ইস্টার্ন, সিটি, ব্র্যাক, এবি ও ইসলামী ব্যাংক।

অগ্রণী, আল-আরাফাহ, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা, ডাচ-বাংলা, এক্সিম, আইএফআইসি, যমুনা, মার্কেন্টাইল, মিডল্যান্ড, মধুমতি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ন্যাশনাল, এনসিসি, ওয়ান, প্রিমিয়ার, প্রাইম, পূবালী, শাহজালাল, সোশ্যাল ইসলামী, সাউথইস্ট, স্ট্যান্ডার্ড, ট্রাস্ট, ইউসিবি, উত্তরা, সিটি এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ও উরি ব্যাংকের মাধ্যমেও এ ঋণ দেয়া হয়।

এ বিভাগের আরো খবর