বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চিনিকল বন্ধ, মাঠেই শুকাচ্ছে আখ

  •    
  • ১৭ মার্চ, ২০২১ ১৩:১০

ডিসেম্বর থেকে আখ কাটা ও মাড়াই শুরু হওয়ার কথা ছিল। হুট করেই ১ ডিসেম্বর পঞ্চগড় সুগার মিলে আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন। সংকটের শুরু তারপর থেকেই।

চলতি মৌসুমে পঞ্চগড় চিনিকলে আখ মাড়াই বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন চাষিরা। তিন মাস ধরে ক্ষেতেই শুকাচ্ছে আখ। এতে চাষিদের প্রায় ৮ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ক্ষেতে আখ রেখেই সুগার মিলে আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণা করায় ক্ষুব্ধ চাষিরা ক্ষতিপূরণের দাবি করছেন।

আবহাওয়া ও মাটি আখ চাষের অনুকূল হওয়ায় সত্তরের দশকে পঞ্চগড়ে প্রতিষ্ঠিত হয় একমাত্র ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান এই সুগার মিলটি। স্থায়ীভাবে এই মিলে কাজের সুযোগ হয় হাজার খানেক মানুষের।

প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে অনেক চাষি আখ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। জেলা কৃষি অফিসের তথ্যে চলতি মৌসুমেও সেখানে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর জমিতে আখ চাষ হয়।

গত বছরের ডিসেম্বর থেকে আখ কাটা ও মাড়াই শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘোষণা ছাড়াই ১ ডিসেম্বর থেকে পঞ্চগড় সুগার মিলে আখ মাড়াই বন্ধের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন। সংকটের শুরু তারপর থেকেই।

এর আগে পঞ্চগড় সুগার মিলে ডিসেম্বরে আখ মাড়াই শুরু হতো, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যেই তা শেষ হয়ে যেত। এবার মার্চ মাসেও ক্ষেতে পড়ে থাকতে দেখা গেছে আখ।

কৃষি বিভাগ জানায়, আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এবার ৪৮ হাজার টন ধরা হলেও এখন পর্যন্ত কাটা হয়েছে মাত্র ২৯ হাজার মেট্রিক টন। বাকি আখ ক্ষেতে শুকিয়ে নষ্ট হচ্ছে।

চাষিদের অভিযোগ পঞ্চগড়ের আখ ঠাকুরগাঁও সুগার মিলে সরবরাহ করায় এই জটিলতা তৈরি হয়েছে। আখ কাটার পর তা মিল পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লেগে যাচ্ছে সাত থেকে আট দিন।

ক্ষেতে আখ রেখে মিলে আখ মাড়াই বন্ধের সিদ্ধান্তকে খামখেয়ালিপনা বলে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন ভুক্তভোগী চাষিরা।

সদর উপজেলার অমরখানা এলাকার আখচাষি আনসারুল হক বলেন, ‘ধারদিনা করে ৬ বিঘা জমিতে আখ চাষ করেছি। ডিসেম্বরে আখ কাটা মাড়াইয়ের কথা ছিল। কিন্তু তিন চার মাস থেকে ক্ষেতেই আখ শুকাচ্ছে।

‘আজ নিবে, কাল নিবে বলে মিলের লোকজন ঘুরাচ্ছে। আশা ছিল আখ বিক্রি করে ধারদিনা শোধ করব কিন্তু এখন লাভের বদলে বিরাট লোকসান হলো।’

টুনিরহাট এলাকার সমশের আলী বলেন, ‘আমি মানুষের জমি বর্গা নিয়ে ১৪ বিঘা জমিতে আখ রোপণ করেছিলাম। এখন আখ বিক্রি করতে পারছি না। ক্ষেতের আখ ক্ষেতেই শুকায়ে খড়ি হচ্ছে।

‘পঞ্চগড় মিলে মাড়াই বন্ধ করে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলে আখ সরবরাহ হচ্ছে। আগে যেখানে বিঘায় ৪০০ মণ আখ হতো এখন সেখানে হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ মণ। এই লোকসান কীভাবে পূরণ করব ভেবে পাচ্ছি না।’

কাজীপাড়া এলাকার চাষি হকিকুল ইসলাম জানান, সরকার এটা একটা খামখেয়ালিপনা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ মৌসুমে আখ রোপণের আগেই তাদের আখ মাড়াই বন্ধের কথা জানাতে হতো। তাহলে তারা আর আখ রোপণ করতেন না।

তার দাবি, এতে প্রায় দুই হাজার কৃষকের কয়েক কোটি টাকার লোকসান গুনতে হবে। মিল কর্তৃপক্ষ ও সরকারের এই সিদ্ধান্তের কারণে এমন ক্ষতির মুখে পড়েছেন, তাই সরকারকেই এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

পঞ্চগড় চিনিকলের ব্যবস্থাপক (কৃষি) কাওছার আলী সরকার বলেন, গত ১ ডিসেম্বর পঞ্চগড় চিনিকলে মাড়াই হবে না এবং পঞ্চগড়ের উৎপাদিত আখ ঠাকুরগাঁও চিনিকলে পাঠাতে হবে মর্মে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন থেকে চিঠি আসে।

এ ছাড়া কৃষককদের মাঝে সার-কীটনাশক, বীজ ও ঋণ দিয়ে আখ রোপণ বন্ধ রয়েছে। তাই আখ চাষাবাদ মাত্রাতিরিক্তভাবে কমে গেছে। নতুন মৌসুমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাত্র দেড় শ একর জমিতে আখ চাষাবাদ হয়েছে।

পঞ্চগড় চিনিকলের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) ইউসুফ আলী বলেন, ‘পঞ্চগড় চিনিকলে দৈনিক মাড়াইয়ের ক্ষমতা ছিল এক হাজার মেট্রিক টন। আমাদের মিলের আখ মাড়াই বন্ধ ঘোষণা করায় আমাদের আখ পাঠাতে হচ্ছে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলে। সেখানে সেতাবগঞ্জ মিলেরও আখ সরবরাহ করা হচ্ছে। মোট তিন মিলের আখ একসঙ্গে মাড়াই করায় একটু জটিলতা তৈরি হয়েছে।

‘কাটার পর আখ ঠাকুরগাঁও মিলে পাঠাতে আমাদের এক সপ্তাহ মতো সময় লেগে যাচ্ছে। এতে অনেকের আখ ক্ষেতেই শুকিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন আখ সরবরাহের পরিমাণ বেড়েছে। আশা করি শিগগিরই সব আখ মাড়াই সম্ভব হবে।

চাষিদের লোকসানের বিষয়ে তিনি বলেন, এই মিলে আখ মাড়াই বন্ধ থাকায় সবারই কমবেশি ক্ষতি হয়েছে। তাই চাষিদেরও বিষয়টি মেনে নিতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর