বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আরও বেশি লভ্যাংশ দিতে পারবে ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান

  •    
  • ১৫ মার্চ, ২০২১ ১৫:৪৬

গত ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে। এর আগে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণার সীমা বেঁধে দেয়া হয়। আবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান নগদ ১৫ শতাংশ অর্থাৎ শেয়ার প্রতি দেড় টাকার পাশাপাশি বোনাস শেয়ারও দিতে পারবে। কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ কত লভ্যাংশ দিতে পারবে, সে বিষয়টি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে স্পষ্ট করবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশ ঘোষণার সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিএসইসি এবং ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈঠকে।

এও কথা হয়েছে যে, পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করে, এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে দুই পক্ষ এখন থেকে সমন্বয় করে কাজ করবে।

করোনাকালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ ঘোষণায় সীমা বেঁধে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আদেশের পর পুঁজিবাজারে বিরূপ প্রভাবের মধ্যে সোমবার আগারগাঁওয়ে বিএসইসি কার্যালয়ের এই বৈঠকে দৃষ্টি ছিল বিনিয়োগকারীদের।

দুপুরে দুই ঘণ্টা বৈঠক শেষে জানানো হয়, গত ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে। এর আগে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণার সীমা বেঁধে দেয়া হয়। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ শতাংশ বোনাসের সঙ্গে সর্বোচ্চ দেড় টাকা নগদ লভ্যাংশ দেয়ার সুযোগ ছিল।

আবার ব্যাংকের ব্যালান্স শিট, খেলাপি ঋণের বিপরীতে সঞ্চিতি, সঞ্চিতি সংরক্ষণে সুবিধা নেয়ার বিবেচনা হিসাব করে কোনো কোনো ব্যাংক সর্বোচ্চ এক টাকা নগদ ও ১০ শতাংশ (প্রতি ১০ শেয়ারে একটি) বোনাস, কোনো কোনো ব্যাংকের সাড়ে সাত শতাংশ (শেয়ার প্রতি ৭৫ পয়সা) নগদ ও সমপরিমাণ (১০০ শেয়ারে ৭.৫টি) বোনাস, কোনো কোনো ব্যাংকের ৬ শতাংশ (শেয়ার প্রতি ৬০ পয়সা) ও সমপরিমাণ (১০০ শেয়ার ৬টি) বোনাস, কোনো কোনো ব্যাংকের ৫ শতাংশ (শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা) নগদ ও সমপরিমাণ (১০০ শেয়ারে ৫টি) বোনাস ও কোনো কোনো ব্যাংকের কেবল ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়ার সর্বোচ্চ ক্ষমতা বেঁধে দেয়া হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মাসুদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।

অন্যদিকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম এর নেতৃত্বে কমিশনের মুখপাত্র ও কমিশনাররা অংশ নেন।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণার সুযোগ থাকলেও এর মধ্যে সর্বোচ্চ কত পরিমাণ নগদে এবং কী পরিমাণ বোনাস শেয়ার দেয়া যাবে, সেই বিষয়টি পরে জানানো হবে। পাশাপাশি ব্যালান্স শিটের বিবেচনায় কোন ব্যাংক কত পরিমাণ লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে, সেটিও নতুন ঘোষণায় থাকবে।

ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নগদের পাশাপাশি বোনাস শেয়ারও দিতে পারবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান যতই আয় করুক, তারা ১৫ শতাংশ, অর্থাৎ শেয়ার প্রতি দেড় টাকার বেশি লভ্যাংশ বিতরণ করতে পারবে না।

আবার কোনো প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি হলে তারা কোনো লভ্যাংশই বিতরণ করতে পারত না। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার ইস্যু করতে পারত।

যদিও এই ঘোষণা দেয়ার আগেই একটি প্রতিষ্ঠান ৩৫ শতাংশ (শেয়ার প্রতি সাড়ে তিন টাকা) নগদ, দুটি প্রতিষ্ঠান ১২ শতাংশ অর্থাৎ শেয়ার প্রতি এক টাকা ২০ পয়সা এবং একটি প্রতিষ্ঠান শেয়ার প্রতি ৬০ পয়সা নগদের পাশাপাশি ৬ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণের প্রস্তাব করেছে।

ব্যাংকের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও যে বোনাস শেয়ার ঘোষণার ক্ষমতা পাচ্ছে, তার পরিধি কত হবে সেটি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে স্পষ্ট করা হবে বলে জানানো হয়েছে বৈঠকে।

এর বাইরে লভ্যাংশ ঘোষণার ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংক্রান্ত যে জটিলতা রয়েছে তাও নিরসন করা হবে।

নগদে লভ্যাংশ বিতরণে উৎসাহিত করতে সরকার গত কয়েক বছর ধরে কেবল বোনাস শেয়ার ইস্যু করলে বাড়তি করারোপ করছে।

সাংবাদিকদেরকে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাচ্ছেন বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম। ছবি: নিউজবাংলা

বৈঠক শেষে কমিশনের মুখপাত্র রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিদ্ধান্তের বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্টীকরণ জারি করবে। বিএসইসিও এ বিষয়ে বিস্তারিত পরিসরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেবে।’

তিনি বলেন, ‘আলোচনা সিদ্ধান্ত হয়েছে, দেশে ব্যাংক ও পুঁজিবাজার এর উন্নয়নের স্বার্থে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলো এখন থেকে সমন্বিতভাবে কাজ করবে।’

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ ঘোষণায় সীমা বেঁধে দেয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্ত পাল্টাতে দাবি ওঠে সব মহল থেকে।

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মার্চেন্ট ব্যাংকদের সমিতি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এই নির্দেশনা পাল্টাতে চিঠি দেয়। চিঠি দেয় ব্যক্তি শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ।

বিষয়টি পর্যালোচনা চেয়ে আসছিল বিএসইসিও। সংস্থাটির কমিশনার শামসুদ্দিন আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘আমরা বলছি, যদি আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তাহলে সেটা পুঁজিবাজারের জন্য ভালো হয়।’

পুঁজিবাজার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বিএসইসির সঙ্গে আলোচনা করে অন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যবস্থা নেবে, এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে ২০১৫ সালেই। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই বিষয়টি মেনে চলেনি আর।

সমালোচনার মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ ঘোষণার বিষয়ে নির্দেশনা থেকে সরে আসার আসার ইঙ্গিত দিয়ে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থাও জানায়, ‘বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে’।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, ‘বিএসইসি কোনো আবেদন করেছে কি না এ ব্যাপারে আমার জানা নেই। তবে যদি আবেদন করে বাংলাদেশ ব্যাংক সেটা পর্যালোচনা করে দেখবে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যেন সার্বিকভাবে ভালো হয় সেদিকে গুরুত্ব দেবে।’

দেশের পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিএসইসি কার্যালয়। ছবি: নিউজবাংলা

কিছুই জানত না বিএসইসি

ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য লভ্যাংশে লাগাম টানা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কিছু অবগত নয় বলে বক্তব্য আসে বিএসইসির পক্ষ থেকে। এ ব্যাপারে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলেছিলেন খোদ বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেছিলেন, ‘পুঁজিবাজার সংবেদনশীল জায়গা। এখানে যেকোনো সিদ্ধান্ত দ্রুত বিনিয়োগকারীদের প্রভাবিত করে। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য বিএসইসি এককভাবে কিছু করতে পারবে না। প্রয়োজন বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরের সহযোগিতা। ভালো পুঁজিবাজার সবার সমন্বয় ছাড়া সম্ভব নয়।’

আরও একজন কমিশনার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে পুরো বিষয়টি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজারে তিনটি সংস্থার ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর আর বিএসইসি একসঙ্গে কাজ না করলে বাজার স্থিতিশীল হবে না। কিন্তু আমাদের গুরুত্বই দেয়া হয় না।

‘মনে করা হয় আমরা ছোট। এমনও হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে আমাদের বসে থাকতে হয় দীর্ঘক্ষণ। আমাদের প্রয়োজনীয় সময়ই দেয়া হয় না।’

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হিসেবে পরিচিত অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে বিস্ময় ও বিরক্ত প্রকাশ করেন। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের প্রভিশন বা তারল্য কী পরিমাণ হতে পারে, সেটা তাদের দায়িত্ব। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো প্রতিষ্ঠান কী পরিমাণ লভ্যাংশ দেবে, সেটা নির্ধারণ করে দিতে পারে না।’

এমন সিদ্ধান্ত বাতিল করে কোম্পানিগুলোকে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী লভ্যাংশ প্রদানের সুযোগ দিতে বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয়া হয়।

সমন্বয়হীনতা পুরোনো

২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর বিএসইসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হেলালউদ্দিন নিজামী ক্যাপিটাল মার্কেট এক্সপোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে তাদের সমন্বয়হীনতা নিয়ে আক্ষেপ করেন।

সেদিন তিনি বলেন, ‘পুঁজিবাজার সম্পৃক্ত কোনো কিছু জারি করতে গেলে বিএসইসির সঙ্গে আলাপ করে নেয়ার নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক, আইডিআরএ, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

‘আগেও সমন্বয়ের বিষয়ে বলা হয়েছিল, কিন্তু নানা কারণে সেটি হচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি সমন্বিত প্রয়াসে পুঁজিবাজারকে এগিয়ে নিতে।’

কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দেয়ায় বিএসইসির সঙ্গে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে।

এ বিভাগের আরো খবর