বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

কমেছে পরিচালন, বেড়েছে চূড়ান্ত মুনাফা

  •    
  • ১৫ মার্চ, ২০২১ ১১:১৭

ডাচ বাংলা ব্যাংকের পরিচালক মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ৮ শতাংশ বা ৯০ কোটি টাকা কম হলেও চূড়ান্ত মুনাফায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা আগের বছরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বা ২০০ কোটি টাকা কম হলেও চূড়ান্ত মুনাফা বেড়েছে ১৫ শতাংশের মতো। আর মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা ৪০ শতাংশ বা ৩০৩ কোটি টাকা কমলেও চূড়ান্ত মুনাফা আগের বছরের সমান হয়েছে।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে যে তিনটি প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে, করোনা মহামারির বছরে তার কোনোটির আয় গত বছরের চেয়ে কমেনি।

একটির আয় হয়েছে গত বছরের সমান। একটির আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশের মতো। আর একটির আয় বেড়েছে ২৫ শতাংশের বেশি।

ডাচবাংলা ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক লভ্যাংশ ঘোষণার সময় কর ও সঞ্চিতি সংরক্ষণ পরবর্তী যে হিসাব দিয়েছে তাতে বিষয়টি উঠে এসেছে।

তবে ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছর শেষে ব্যাংক তিনটির পরিচালন মুনাফার যে তথ্য গণমাধ্যমে আসে, তাতে দেখা যায় সর্বনিম্ন ৯০ কোটি থেকে সর্বোচ্চ ৩০৩ কোটি টাকা কম হয়েছিল পরিচালন মুনাফা।

২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত অর্থবছরে ডাচবাংলা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয় এক হাজার ১৯০ কোটি টাকা। গত ৩১ ডিসেম্বর সামপ্ত অর্থবছরে কোম্পানির আয় হয় এক হাজার ১০০ কোটি টাকা।

৯০ কোটি টাকা আয় কম হলেও চূড়ান্ত লভ্যাংশে দেখা যায়, কোম্পানিটির এবার শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১০ টাকা। যা গত বছর ছিল ৭ টাকা ৮৯ পয়সা। অর্থাৎ শেয়ার প্রতি আয় বেড়েছে ২ টাকা ১১ পয়সা। আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৬.৭৪ শতাংশ।

মুনাফা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লভ্যাংশও বাড়নোর প্রস্তাব করেছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য শেয়ার প্রতি দেড় টাকা নগদ ও ১৫ শতাংশ (১০০ শেয়ারে ১৫টি) বোনাস শেয়ার দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী এর চেয়ে বেশি লভ্যাংশ ঘোষণার সুযোগ নেই আর লভ্যাংশের ব্যাখ্যায় এই বিষয়টি উল্লেখ করেছে ব্যাংকটি।

গত বছর ব্যাংকটি শেয়ার প্রতি দেড় টাকা নগদের পাশাপাশি ১০ শতাংশ (১০০ শেয়ারে ১০টি) বোনাস শেয়ার দিয়েছিল।২০১৯ সালে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ৬১৫ কোটি টাকা। গত বছর তা কমে হয় ৪১৫ কোটি টাকা।পরিচালন মুনাফা ৩৩ শতাংশ কমে গেলেও চূড়ান্ত মুনাফা বেড়েছে এই প্রতিষ্ঠানেরও। কোম্পানিটি জানিয়েছে, এবার তাদের শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে এক টাকা ৯৫ পয়সা, যা গত বছর ছিল এক টাকা ৭০ পয়সা। অর্থাৎ শেয়ার প্রতি আয় বেড়েছে ২৫ পয়সা বা ১৪.৭০ শতাংশ।

এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ শেয়ার প্রতি ৬০ পয়সা নগদ ও প্রতি ১০০ শেয়ারে ছয়টি বোনাস শেয়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার বেশি লভ্যাংশ ঘোষণার প্রস্তাব করা হয়েছে। গত বছর শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা নগদ আর প্রতি ১০০ শেয়ারে ৫টি বোনাস শেয়ার দেয়া হয়েছিল।

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চূড়ান্ত মুনাফা আগের বছরের সমান হলেও পরিচালক মুনাফায় ছিল বিরাট ব্যবধান।

২০১৯ সালে কোম্পানিটির পরিচালন মুনাফা হয় ৭৫৩ কোটি টাকা। পরের বছর তা কমে হয় ৪৫০ কোটি টাকা। মুনাফা কমে ৩০৩ কোটি টাকা, যা শতকরা হিসাবে ৪০ শতাংশেরও বেশি।

তবে লভ্যাংশ ঘোষণার সভা শেষে জানানো হয়, এবার কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ২ টাকা ২৬ পয়সা, যা গত বছর ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার সমন্বয়ের পর ছিল একই পরিমাণ।

এবার প্রতিষ্ঠানটি শেয়ার প্রতি এক টাকা নগদে ও ৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত বছরও পাঁচ শতাংশ বোনাসের পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরা এক টাকা ১০ পয়সা লভ্যাংশ পেয়েছিল।

মহামারিকালে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা আগের বছরের চেয়ে কমে যাওয়ার খবরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার দর পড়তে শুরু করে।

মহামারিকালে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফা আগের বছরের চেয়ে কমে যাওয়ার খবরে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার দর পড়তে শুরু করে জানুয়ারির শুরুতে।বিনিয়োগকারীরা ধারণা করেছিল, মুনাফা কমায় এবার প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশও আসবে। তবে এখন পর্যন্ত যে প্রবণতা, তাতে ব্যাংকের শেয়ারধারীরা বেশ ভালো পরিমাণ মুনাফা পেতে পারেন।

৩০টি ব্যাংকের মধ্যে ১১টি ব্যাংকের শেয়ার মূল্য অভিহিত মূল্য ১০ টাকার কাছাকাছি। এর মধ্যে ১০টি ‘এ’ ক্যাটাগরির। অর্থাৎ কমপক্ষে ১০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। বাকি একটি ব্যাংক গত বছর ১০ শতাংশের চেয়ে কম লভ্যাংশ দিয়েছে।

আরও পড়ুন: এফডিআরের চেয়ে ব্যাংকের শেয়ারে মুনাফা বেশি

তিনটি ব্যাংকের শেয়ারের দাম আছে ১০ টাকার নিচে যার মধ্যে একটি কখনও ১০ শতাংশের নিচে লভ্যাংশ দেয়নি, একটি একবার কেবল ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দিয়েছে। আর একটি লোকসানি ব্যাংক।

চারটি ব্যাংকের শেয়ার মূল্য ১৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে। আটটি ব্যাংকের শেয়ারের দাম ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে। ৩০ থেকে ৪০ টাকার ভেতরে আছে দুটি ব্যাংকের শেয়ারের দাম। একটির দাম ৪০ টাকার বেশি আর একটির দাম ৬০ টাকার বেশি।

ব্যাংকগুলো গত কয়েক বছরে নগদ লভ্যাংশে মন দিয়েছে। আর এগুলোর শেয়ার মূল্য বেশ কম হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা ভালো পরিমাণে অর্থ পেয়ে থাকে।

গত কয়েক বছরে বেশ কিছু ব্যাংকের লভ্যাংশ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ব্যাংকে টাকা রাখার চেয়ে এসব ব্যাংকের শেয়ার কিনে রাখলেই বেশি লাভবান হওয়া যায়। চলতি বছর মার্কেন্টাইল ব্যাংকও যে লভ্যাংশের প্রস্তাব করেছে, সেটি এফডিআরের চেয়ে বেশি হতে পারে।

ব্যাংকটির শেয়ার মূল্য এখনও ১৩ টাকার কিছুটা বেশি। শেয়ার প্রতি এক টাকা লভ্যাংশ পেলে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার মূল্যের অনুপাতে লাভ হয় ৭.৫ শতাংশের মতো। অথচ ব্যাংকে টাকা রাখলে এখন সর্বোচ্চ মুনাফা পাওয়া যায় ৬ শতাংশ।

যে কারণে বেড়েছে চূড়ান্ত মুনাফা

ডাচ বাংলা ব্যাংকের একজন মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নিউজবাংলাকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ সুবিধার কারণে তাদের মুনাফা বেশি হয়েছে।এই কর্মকর্তা জানান, অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবিলায় ২০২০ সালে ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপিমুক্ত থাকার সুযোগ পেয়েছেন ঋণগ্রহীতারা। আর এ কারণে খেলাপি ঋণের বিপরীতে তাদেরকে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়নি।বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী খেলাপি ঋণের মানভেদে নিরাপত্তা সঞ্চিতির হার ৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত। যেহেতু খেলাপি ঘোষণা করা যায়নি, তাই এই সঞ্চিতি সংরক্ষণের দরকার পড়েনি। ফলে ব্যাংকের ব্যালান্স শিট মহামারিকালে আগের বছরের চেয়ে ভালো দেখাচ্ছে।গত বছরের মার্চ মাসে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কেউ কিস্তি না দিলেও খেলাপি করা যাবে না। পরে দুই দফায় এই নির্দেশনার কার্যকারিতা বাড়িয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। ফলে অপরিশোধিত ঋণের মেয়াদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে যায়।মেয়াদি ঋণের পাশাপাশি চলতি মূলধন ঋণেও গত বছর এই সুবিধা দেয়া হয়েছিল। এখন চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এ সুবিধা আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের কোম্পানি সচিব আবুল বাশার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘করোনা সংকটের মধ্যেও ব্যাংকের কোনো কাজই থেমে থাকেনি। আমরা নিয়মিত কাজ করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক করোনাকালীন যেসব সুবিধা দিয়েছে, তাও গ্রাহকদের দেয়া হয়েছে। এ জন্য মহামারির বছরেও আমাদের ব্যাংকের মুনাফায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি।’

তিনি বলেন, ‘মুনাফা বৃদ্ধি অস্বাভাবিক না। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক অডিট করেছে। এখানে তথ্যের হেরফের হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হিসেবে পরিচিত অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদও একই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর যে প্রভিশন সংরক্ষণ করে সেটি যদি না করতে না হয় বা আগের বছরের প্রভিশন যুক্ত হয় তাহলে নিট মুনাফা বাড়তে পারে।’ তিনি বলেন, ‘করোনার কারণে ব্যাংকগুলোকে প্রভিশনের ক্ষেত্রে নানা সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে। সেটি সুবিধার আওতায় নিট মুনাফা বাড়তে পারে।’

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে সুবিধা দেয়ার ফলে তাদের মুনাফায় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এটাকে খারাপ চোখে দেখার কিছু নেই।’

আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও চিত্র একই

কেবল ব্যাংক নয়, ব্যাংক বহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি, লংকাবাংলা, আইপিডিসি ও বিডিফিনান্সের ক্ষেত্রেও একই চিত্র দেখা গেছে।

প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই মহামারির বছরে আগের বছরের চেয়ে বেশি মুনাফা করেছে।

২০২০ সালে সমাপ্ত অর্থবছরে আইডিএলসি ফিনান্সের শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ৬ টাকা ৭৪ পয়সা। যা আগের বছর ছিল ৪ টাকা ৫১ পয়সা।

আইপিডিসি ফিনান্স এবার শেয়ার প্রতি আয় করেছে এক টাকা ৯০ পয়সা। গত বছর আয় ছিল এক টাকা ৭২ পয়সা।এবার বিডি ফিনান্সের শেয়ার প্রতি আয় হয়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ১ টাকা ১২ পয়সা।

লংকাবাংলা ফিনান্স এবার শেয়ার প্রতি আয় করেছে ১ টাকা ৮১ পয়সা। আগের বছর এই আয় ছিল প্রায় অর্ধেক, ২০১৯ সালে পুনর্মূল্যায়িত ইপিএস ছিল ৯৪ পয়সা।

এ বিভাগের আরো খবর