বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে ভারতের সঙ্গে কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট বা ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশিদারত্ব চুক্তি (সেপা) সইয়ে একমত হয়েছে বাংলাদেশ।
সোমবার বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশ এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে বলে দায়িত্বশীল সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
রাজধানীর হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে ২৪ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে দেন বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন। অন্যদিকে, সাত সদস্য বিশিষ্ট ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প সচিব অনুপ ধাওয়ান।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্র, শিল্প, বস্ত্র ও পাট, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বিএসটিআই, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরের প্রতিনিধিসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্রমতে, সচিব পর্যায়ের বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৯টি ইস্যু স্থান পায়। তবে সব কিছুর উর্ধ্বে ওঠে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয় দুই দেশের বিরাজমান বাণিজ্য সমস্যা দূর করার ওপর। এ পর্যায়ের আলোচনাতেই কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট –সেপা স্বাক্ষরের বিষয়টি সামনে চলে আসে। পরে চুক্তির ওপর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এতে পারস্পরিক লাভালাভের খতিয়ান পর্যালোচনার পর প্রাথমিকভাবে এই সেপা চুক্তি সইয়ে একমত প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ-ভারত।
জানা গেছে, আগামী ২৭ মার্চ দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে আলোচিত কয়েকটি এজেন্ডার অন্যতম একটি হবে সেপা সইয়ের ইস্যুটি। সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী বৈঠক থেকে সবুজ সংকেত পেলে চলতি বছরের যেকোনো সময় চুক্তিটি স্বাক্ষর হতে পারে।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে অংশ নিয়েছেন এমন একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এই অভিন্ন তথ্য দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কমপ্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট হচ্ছে এমন একটি চুক্তি-যার লক্ষ্যই হলো বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন বাড়ানোর পরিবেশ তৈরি করা।
তারা আরও জানান, বাণিজ্য বাড়াতে গেলে আমদানি-রপ্তানির প্রশ্ন আসবে। এক্ষেত্রে ব্যবসা সহজতর করতে বন্দর ও সড়ক অবকাঠামোর উন্নয়নের বিকল্প থাকবে না। এর পাশাপাশি শুল্ক-অশুল্ক বাধা দূরীকরণে পদক্ষেপেরও প্রয়োজন হবে। সেখানে চুক্তির কারণে চাইলেই কেউ চুক্তির তালিকায় থাকা পণ্যে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক বসিয়ে বাণিজ্য বাঁধাগ্রস্ত করতে পারবে না। অর্থাৎ এই একটি চুক্তি দুই দেশের মধ্যে উইন উইন সিচুয়েশন তৈরি করতে সক্ষম হবে। এছাড়া ভারতও চায় বাংলাদেশকে সব রকম বাণিজ্য সহযোগিতা দিতে। এসব প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশিদারিত্ব চুক্তি (সেপা) স্বাক্ষরে রাজি হয়েছে ভারত। যা খুব শিগগিরই আলোর মুখ দেখতে পারে।
গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশ জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পালিসি (ইউ-এনসিডিপি) কর্তৃক স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ পায়। এর মধ্যদিয়ে আগামী ২০২৬ সালের পর বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ পরিপূর্ণ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হবে।
তবে এর আগেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বাণিজ্যকারী দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশকে প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট-পিটিএ, ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট-এফটিএ চুক্তি সই করতে হবে। চুক্তি করতে হবে আঞ্চলিক জোটগুলোর –আরটিএ এর সঙ্গেও। তাছাড়া বৃহৎ বাণিজ্যকারী দেশগুলোর সঙ্গে এই সেপা চুক্তি স্বাক্ষরেরও প্রয়োজন হবে।