বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘তোর দ্বারা কিছু হবে না’

  •    
  • ৮ মার্চ, ২০২১ ০৯:১৮

বানী বলেন, ‘ছোটবেলায় পড়ালেখা করতে ভালো লাগত না। তাই সবাই বলত, তোর দ্বারা কিছু হবে না।’

‘হোম ইকোনমিকস কলেজে অ্যাপ্লায়েড আর্টে প্রথম বর্ষে পড়ার সময় বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে স্বামীর কাছে টাকা চাইতে হতো। মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, টাকা না চাওয়ার জন্য কী করতে হবে? বিকল্প একটাই খুঁজে পাই তখন, নিজে কিছু করতে হবে।’

নিজের উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুর দিকের গল্প বলছিলেন বানী’স ক্রিয়েশনের তাহমিনা আহমেদ বানী।

কথা প্রসঙ্গে নিজের ছোটবেলার একটি গল্পও বলেন উদ্যোক্তা এই নারী।

তিনি বলেন, ‘ছোটবেলায় পড়ালেখা করতে ভালো লাগত না। তাই সবাই বলত, তোর দ্বারা কিছু হবে না।

‘বারবার এমন কথা শুনে মনের মধ্যে জেদ চেপে বসে। তৈরি হয় অদম্য ইচ্ছাশক্তি। সকলের তাচ্ছিল্য থেকে স্থির করি, কিছু একটা করতে হবে।’

ইচ্ছাশক্তির জোরে বানী এখন বড় উদ্যোক্তা। তৈরি করেন বাহারি কেক। তবে বাজারে এখন যে ধরনের কেক পাওয়া যায়, তেমন না। বানীর কেকে রয়েছে ভিন্নতা।

২০১৩ সালে বানী তার প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করেন। ২০১৭ সালে খিলগাঁও তালতলাতে চালু হয় প্রথম আউটলেট। বানী বলেন, ‘আগে মানুষের আস্থা তৈরি করেছি। তারপর আউটলেটে কার্যক্রম শুরু করি।’

বর্তমানে বানী’স ক্রিয়েশনের তিনটি আউটলেট রয়েছে। এগুলোতে কাজ করছেন ২২ জন।

বানী বলেন, ‘যেকোনো থিম কেকের অর্ডার কিংবা যেকোনো কাস্টমাইজড কেক যত বড়ই হোক না কেন, তা তৈরি করে দেয়া অসম্ভব না। একটা বাচ্চার জন্মদিনে সাধারণ কেক না হয়ে যদি তার উপযোগী ডিজাইন কেক হয়, তাহলে উৎসবে আনন্দের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।’

বানীর ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সেখানে বেকিং, কুকিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। ছবি: নিউজবাংলা

বানী তার মেয়ের জন্মদিনের কথা বলছিলেন। প্রথম জন্মদিনে খুব সাদাসিধে একটি কেক নিয়ে আসেন তিনি। পরে একটা ‘হামটি ডামটি’ পুতুল বানিয়ে কেকের ওপর বসিয়ে দেন। এতে বেড়ে যায় উৎসবের আমেজ। এরপর তিনি বিভিন্ন বইয়ে রেসিপি দেখে কেক বানাতে শুরু করেন। কেকের সঙ্গে পুতুল দিয়ে নিজেই ডিজাইন করা শুরু করেন।

এ উদ্যোক্তা বলেন, ‘প্রথমে বাসা থেকে কেক সরবরাহ করতাম। পরিবারের বা বন্ধুদের যেকোনো অনুষ্ঠানে উপহার হিসেবে নিজের বানানো কেক নিয়ে যেতাম। সবার বাসায় এভাবে খাবার নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে মার্কেটিং শুরু হয়। তখন সবাই এটা বাণিজ্যিকভাবে করার পরামর্শ দেয়। একটা সময় সবাই অর্ডার দেয়া শুরু করে।’

যতই দিন যাচ্ছে বড় হচ্ছে বানীর উদ্যোগ। বানী’স ক্রিয়েশন নামে খোলা হয়েছে ফেসবুক পেজ। সেখানে বিভিন্ন কেকের ছবি দেয়া আছে। প্রতিদিন একটি নতুন করে কেক বানান এবং তার ছবি তুলে ফেসবুকে পেজে দেন। দেড় মাস পর ফোনে মারমেইড ডিজাইনের প্রথম কেকের অর্ডার পান তিনি। এর থেকে অনলাইনে অর্ডার আসা শুরু হয়।

ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে চাহিদা। স্বামী নাসিম আহমেদ নিপ্পন এবং বানী সিদ্ধান্ত নিলেন প্রফেশনাল একটি কোর্স করবেন। এক বছরব্যাপী ‘ব্রেড অ্যান্ড কুকিস’ তৈরির একটি কারিগরি কোর্স সম্পন্ন করলেন বানী। ইন্টার্নশিপ শুরু করলেন স্বনামধন্য বেকারিতে।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বানী’স ক্রিয়েশনে প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি করে অর্ডার আসতে শুরু করে। ক্রেতাও বাড়তে থাকে হু হু করে। কয়েক বছরের মধ্যে ফেসবুক পেজের সদস্য ৬০ হাজার ছাড়িয়ে যায়।

কেকের সঙ্গে আরও অন্য কিছু যুক্ত করার পরিকল্পনা আছে বলে জানান বানী।

বললেন, ‘আমার নিজস্ব একটা ইনস্টিটিউট আছে, যেখানে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এখানে বেকিং, কুকিং এসবের ওপর প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটাকে আরও বড় পরিসরে পরিপূর্ণ ইনস্টিটিউট করতে চাই।’

করোনাভাইরাস মহামারিতে গত বছর অনেক ক্ষতি হয়েছে বলে জানান বানী। শুরুতে অনেক বড় বড় বুকিং ছিল, সেগুলো বাতিল হয়ে যায়। করোনার কারণে গ্রিন রোড ও পান্থপথ এ দুটি আউটলেট বন্ধ করতে হয়। কিন্তু তিনি আশাহত হননি। ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হতে থাকলে তিনিও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।

বানী’স ক্রিয়েশনের তিনটি আউটলেট রয়েছে। এগুলোতে কাজ করছেন ২২ জন। ছবি: নিউজবাংলা

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বানী বলেন, ‘উদ্যোক্তা হতে হলে আগে লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। আমি কী করতে চাই, সেই বিষয়টি ঠিক করা জরুরি। যেকোনো একটি বিষয় নিয়ে আগে শুরু করতে হবে।

‘ধৈর্য, সততা, অদম্য মনোবল আর সর্বোপরি ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। তাহলে যে কারও পক্ষে সামনে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। আগে ঠিক করতে হবে, কোন খাতের উদ্যোক্তা হব। যে কাজকে ভালোবাসব সেটা নিয়েই এগোতে হবে। উদ্যোক্তা হতে হলে অর্থায়ন সবচেয়ে বড় বিষয়। এ জন্য অল্প অল্প পুঁজি করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বানীর পরামর্শ, ‘কোনো কিছু নিয়ে তাড়াহুড়া করা যাবে না। আগে পথঘাট চিনতে হবে। তারপর কাজ শুরু করতে হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর