হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে অনিয়মের কারণে ডুবতে বসা আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে মার্জিন ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ১৪৩ বিনিয়োগকারী।
ঋণাত্মক পোর্টফোলিওর কারণ জানতে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাদের ডাকা হয় হাইকোর্টে। সেদিন ৫১ জন হাজির হন। বাকিদের ৯ মার্চ আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে পিপলস লিজিং থেকে ঋণ নেয়া ১৪৩ বিনিয়োগকারী তাদের সুদসহ অন্যান্য দায়দেনা ও আদালতের হাজিরা থেকে স্থায়ী অব্যাহতির জন্য সহযোগিতা চেয়ে রোববার বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে চিঠি দিয়েছেন।
চিঠির অনুলিপি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এবং ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামে (সিএমজেএফ) পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, তালিকায় থাকা ১৪৩ জন বিনিয়োগকারী পিপিলস লিজিং থেকে ঋণ নিয়ে ২০১০ সালের ‘মহাধসে’ সর্বস্বান্ত হয়েছেন। এমন অবস্থায় প্রত্যেকের পোর্টফোলিও ঋণত্মক হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, পিপলস লিজিং তাদের অনুমতি ছাড়াই প্রতিটি বিও হিসাবে থাকা সিকিউরিটিজ বিভিন্ন সময়ে পরিচালনা করেছে। এমনকি হিসাবের তথ্য চাওয়া হলেও তা সরবরাহ করা হয়নি।
এতে বলা হয়েছে, পিপলস লিজিং কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই হাইকোর্টে তাদের ১৪৩ জন বিনিয়োগকারীর দায়-দেনার তথ্য সরবরাহ করে। সেই তালিকা ধরেই তাদের তলব করেছে আদালত।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ১০ বছর পর প্রত্যেকের হিসাবের বিপরীতে দায়-দেনার পরিমাণ (সুদ-দণ্ডসুদসহ) দেখে তারা বিস্মিত হয়েছেন। এত বছর পর বিষয়টি তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হাইকোর্টে পিপলস লিজিংয়ের সরবরাহ করা তথ্যে দেখা গেছে, সোলাইমান রুবেল মার্জিন ঋণ নেন ৭ কোটি ৬ লাখ ১৮ হাজার ৯১৮ টাকা। দণ্ডসুদসহ তার ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় তিন গুণ ২২ কোটি ২২ লাখ ২৬ হাজার ৪৯৫ টাকা।
আহসান হাবিব নামের আরেক বিনিয়োগকারী মার্জিন ঋণ নিয়েছিলেন ৪৮ কোটি ৪৯ লাখ ৩৬ হাজার ১২৪ টাকা। বিপরীতে দণ্ডসুদসহ ঋণ হয়েছে ১১৬ কোটি ৪৭ লাখ ৩৩ হাজার ৩২১ টাকা।
সোলাইমান রুবেল ও আহসান হাবিবের মতো ১৪৩ জন পিপলস লিজিং থেকে মার্জিন ঋণ নিয়েছিলেন ৩১৩ কোটি ২১ লাখ ১৩ হাজার ৯৩৪ টাকা। বিপরীতে তাদের দণ্ডসুদসহ ঋণ দাঁড়িয়েছে ৬৪৪ কোটি ৮৭ রাখ ৫৮ হাজার ১৩ টাকা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ছায়দুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমার সঙ্গে কয়েকজন যোগাযোগ করেছেন। তাদের সঙ্গে কথাও হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ঋণখেলাপির ব্যাখ্যা আছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আপনি না দিলে সেটাকে ঋণখেলাপি বলা যায়। কিন্তু আপনি শেয়ার ব্যবসা করার জন্য মার্জিন ঋণ নিলেন। এ ক্ষেত্রে আপনি দিলেন ১০০ টাকা আর প্রতিষ্ঠান দিল ১০০ টাকা। শেয়ার কেনার পর দর কমে লোকসান হলে বিনিয়োগকারীকে খেলাপি বলা ঠিক হবে না।’
এ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীর কী করার আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আদালত যেহেতু ব্যক্তিকে ডেকেছে, তাই ব্যক্তিকেই আদালতে পুরো বিষয়টি অবগত করা উচিত।’
পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি ঋণগ্রহীতা ৫১ জন গত ২৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে হাজির হন। সেদিন দুপুরের মধ্যে ১৪৩ জনের হাজির হওয়ার নির্দেশ থাকলেও অন্যরা আইনজীবীর মাধ্যমে সময় আবেদন করেন।
সেদিন শুনানিতে আদালত বলে, ‘পিকে হালদার এবং এসকে সুর কী আকাম কুকাম করছে সেটা তো চলবেই। আমরা দেখছি এ কোম্পানিকে বাঁচিয়ে রেখে টাকা উদ্ধার করা যায় কি না।
‘আমানতকারীরা আজ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। আমরা চেষ্টা করছি ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধারের। একটি কোম্পানি অবসায়ন করতে হলেও তার একটা প্রসিডিং আছে। আমরা সেটাও দেখছি। একটা পথ বের করার চেষ্টা করছি।’