বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

উন্নয়নশীল বাংলাদেশ কী পাবে, কী হারাতে পারে

  •    
  • ৪ মার্চ, ২০২১ ১০:১০

আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তুতিপর্বে বিশ্ব অর্থনীতির মধ্যে বিকাশ লাভ করতে হবে বাংলাদেশকে।

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর এর প্রভাব নিয়ে জোর আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ কী হারাবে, আর কী পাবে, এটি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ঝুঁকি এবং সম্ভাবনা দুটি বিষয়ে মতামত এসেছে সরকারের নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী ও দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদদের কাছ থেকে।

তারা বলেছেন, উত্তরণের ফলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। বাড়বে আত্মমর্যদা। এই অর্জন বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রতি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তবে আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রস্তুতিপর্বে বিশ্ব অর্থনীতির মধ্যে বিকাশ লাভ করতে হবে বাংলাদেশকে।

করোনা মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা চলছে এখনও। বিনিয়োগের গতি শ্লথ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব আরও প্রকট হতে পারে। রয়েছে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙা করার তাগিদ। এসব প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে সামনের দিকে এগোতে হবে বাংলাদেশকে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ফাইল ছবি

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বুধবার ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, এলিডিসি থেকে উত্তরণের ফলে বাংলাদেশ ‘যা হারাবে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি পাবে’। তৈরি হবে নতুন সম্ভাবনা।সুবিধা কীএলডিসি থেকে বের হলে বাংলাদেশ নানা ধরনের সুবিধা পেতে পারে। বিশ্বে বাংলাদেশের ক্রেডিট রেটিং-এ উন্নতি হবে। ফলে বিদেশ থেকে বেশি ঋণ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মানের উন্নতি হবে। সুযোগ তৈরি হবে দক্ষতা বাড়ানোর। এ ছাড়া সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই বাড়বে। বিকাশ ঘটবে পর্যটনশিল্পের।

এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সাবেক সচিব কাজী শফিকুল আযম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের ঋণমান আন্তর্জাতিক মানের। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেলে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে। তখন বিদেশি ঋণের বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে, যা বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।’

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স আ্যন্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে।

যা হারাতে হতে পারে

এলডিসি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশেকেই কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হবে না। তবে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে দেশের রপ্তানি খাত।

২০২৬ সালের পর শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রত্যাহার হলে বাংলাদেশে রপ্তানি আয় কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে এ নিয়ে তথ্যের ভিন্নতা আছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, রপ্তানি আয় ৮ থেকে ১০ শতাংশ কমতে পারে।

অপরদিকে, গত বছর তৈরি করা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে বাংলাদেশের বছরে ৫২৯ কোটি ডলার রপ্তানি কমে যেতে পারে, এর ৯২ শতাংশ পোশাক পণ্য। অবশ্য, বাংলাদেশের পোশাক পণ্য রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এরই মধ্যে ২০২৯ সাল পর্যন্ত শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এরপর সুবিধা না দিলে তখন ওই বাজারে অন্যান্য দেশের সঙ্গে প্রযোজ্য হারে শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশকে পোশাক পণ্য রপ্তানি করতে হবে। ফলে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হবে বাংলাদেশকে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইইউ-এর বাইরে বর্তমানে জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এসব দেশ এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে নিয়ে কোনো ঘোষণা দেয় নি। শেষ পর্যন্ত সুবিধা না দিলে উত্তরণ পরবর্তী ওই সব দেশে পণ্য রপ্তানিতে কঠিন প্রতিযোগিতায় পড়তে পারে বাংলাদেশ।

তবে ভয়ের কোনো কারণ নেই বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএসের সাবেক ঊর্ধ্বতন গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্ক দিয়ে বাংলাদেশের পোশাক পণ্য রপ্তানি হয় এবং পরিমাণও বাড়ছে। কাজেই এলডিসি উত্তরণের পর তেমন কোনো সমস্যা হবে না।

প্রস্ততিপর্বে নিজেদের সামর্থ্য বাড়ানোর পাশাপাশি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও উচ্চমূল্যের পণ্য তৈরির পরামর্শ দেন তিনি।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য । ফাইল ছবি

সেন্ট্রার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, উত্তরণের পর বিশেষ সুবিধা পাওয়ার জন্য ব্যস্ত হলে চলবে না। দেশের অভ্যন্তরে সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে।

বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি দুবর্ল। রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। আরও কয়েকটি বিষয়ে সমস্যা আসতে পারে। উত্তরজনিত কারণে বাজার সুবিধার পাশাপাশি ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্ব সুবিধা থাকবে না।’

সম্ভাব্য বিপর্যয় এড়াতে এ খাতের জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও বিধিবিধান সংস্কারের তাগিত দেন অর্থনীতিবিদরা।তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, ওষুধ উৎপাদনে প্যাটেন্ট দরকার নেই। কারণ, বাংলাদেশ প্রায় ৮৮ শতাংশ ওষুধের কাঁচামাল দেশে উৎপাদন করে এবং ১০০টি দেশে রপ্তানি করে। ফলে ওষুধশিল্পে দেশের সক্ষমতা বাড়ছে।

কৃষিসহ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেয়। উত্তরণের পর কৃষি খাতে ভর্তুকি সীমিত হতে পারে। এ ছাড়া শিল্পে যে প্রণোদনা দেয়া হয়, তাতেও সুবিধা কমতে পারে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআই ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ শুধু সার আমদানিতে ভর্তুকি দেয়। এ ছাড়া কৃষিপণ্য খুব কমই রপ্তানি হয়। ফলে কৃষিতে সমস্যা হবে না।

ড. মনসুর বলেন, চিন্তা রপ্তানিমুখী পোশাকসহ অন্যান্য খাত নিয়ে। সরকার এসব খাতে নানাভাবে প্রণোদনা দেয়। এলডিসি হিসেবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এসব বিষয় দেখেও না দেখার ভাণ করে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হলে তখন আর এ সুবিধা দেয়া যাবে না। কারণ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতির সঙ্গে তা হবে সাংঘর্ষিক। ফলে তারা প্রশ্ন তুলবে।

এলডিসি-উত্তর রপ্তানি খাতের সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় দেশের ভর্তুকি কাঠামো বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সঙ্গে সামাঞ্জস্য রেখে পুনর্গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর