করোনা প্রতিরোধ, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, আইসিটি শিক্ষা ও দারিদ্র্য বিমোচনকে অগ্রাধিকার দিয়ে ‘সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি’–এডিপি পাস হয়েছে।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এর অনুমোদন দেয়া হয়।
মূল বরাদ্দ থেকে ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ কমিয়ে ‘সংশোধিত এডিপি’ নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা ।
মূল এডিপির আকার ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে সংশোধিত এডিপির বরাদ্দ কমানো বা ছেঁটে ফেলা হয়েছে ৭ হাজার ৫০১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। পরে শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রেস বিফ্রিংয়ে সভার বিস্তারিত তুলে ধরেন পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী।
বরাবরের মতো এবারও এডিপিতে দেশীয় বরাদ্দের অর্থ অপরিবর্তিত রেখে বিদেশি ঋণের অংশ থেকে কমানো হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে দেশীয় বরাদ্দ দেয়া হয় ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপিতে তা বহাল রাখা হয়েছে।
অপরদিকে, মূল এডিপিতে বিদেশি ঋণের অংশ ৭০ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। এখান থেকে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়েছে। ফলে সংশোধিত এডিপিতে বিদেশি ঋণের অংশ কমে দাঁড়াল ৬৩ হাজার কোটি টাকা।
সামগ্রিকভাবে মূল এডিপি থেকে সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ কমল ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা টাকার অঙ্কে ৭ হাজার ৫০১ কোটি টাকা।
অর্থবছরের বাকি সময়ে সংশোধিত এডিপি বাস্তবায়ন করবে সরকার। যদিও সংশোধিত এডিপি পুরোটা কখনই বাস্তবায়ন হয় না।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, বিদেশি অর্থ অনেক কম সুদে ধার করা হয়। তবে, নিজস্ব অর্থে বাস্তবায়ন করা এডিপির বড় অংশ দেশের ব্যাংক বা সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ধার করা হয়। যার সুদের হার অনেক বেশি। তবে, সংশোধনের সময় মন্ত্রণালয়গুলো বিদেশি অর্থের তুলনায় নিজস্ব অর্থ না কমাতে বেশি আগ্রহী থাকে।
তার কারণ, উন্নয়ন সহযোগীরা যে ঋণ দেয় তা খরচ করতে নানা ধরনের শর্ত ও জটিলতা থাকে। জবাবদিহি করতে হয়। এসব কারণে মন্ত্রণালয়গুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় টাকা খরচ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া ঋণের টাকা খরচ করতে গেলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হয়। এ কারণে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সব সময় রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচে বেশি আগ্রহী।
গবেষণা সংস্থা পিআরআই-এর নির্বাহী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারি টাকা যেনতেনভাবে খরচ করা যায়। এখানে জবাবদিহির ঘাটতি আছে। কিন্তু উন্নয়ন সহযোগীদের টাকা কোথায় কীভাবে খরচ করা হলো, সে ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হয়। যে কারণে বিদেশি ঋণের টাকা ঠিকমতো খরচ করতে পারে না মন্ত্রণালয়গুলো। ফেরত দিতে হয় অব্যয়িত টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী, এডিপিতে বরাদ্দের পুরো টাকা খরচ করতে না পারলে অবশিষ্ট অংশ ওই অর্থবছরের মধ্যে ফেরত দিতে হয়। নতুন এডিপিতে চাহিদা মোতাবেক আবার বরাদ্দ দেয়া হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, করোনাপরবর্তী অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাড়ছে অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও ভোগ ব্যয়। এরই মধ্যে টিকা চলে এসেছে। অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসায় বাড়বে রাজস্ব আদায়।
ফলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি আরও বাড়বে এবং সম্পদের চাহিদা বাড়বে। এসব কারণে এডিপিতে সরকারি জোগানের অর্থ বহাল রাখা হচ্ছে।
সভা শেষে পরিকল্পনা সচিব মোহাম্মদ জয়নুল বারী সাংবাদিকদের বলেন, দেশজ সম্পদ, বৈদেশিক অথার্য়ন ও অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে এবারের এডিপি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যাতে প্রকল্পের টাকা খরচ হয় সে জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ।
সেক্টরভিত্তিক সংশোধিত এডিপিতে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পরিবহন খাতে। সেখানে বরাদ্দ ৪৯ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। এরপর ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ণ খাতে ২৬ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা, শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ২৪ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ খাতে ২১ হাজার ৯৪৫ কোটি টাকা, পল্লি উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠান খাতে ১৮ হাজার ২৯০ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ১৪ হাজার ৯২২ কোটি টাকা এবং কৃষি খাতে ৭ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ১৭টি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।