বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্যাংকের শত কোটি টাকা নিয়ে উধাও ব্যবসায়ী

  •    
  • ২ মার্চ, ২০২১ ১৮:৪৭

মনিরুল ইসলামের বাবা ইসলাম গ্রুপ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়েছিলেন। আট বছর আগে কারখানা বন্ধ করে বিদেশে চলে যান মনিরুল। হঠাৎ করে ফিরে আসেন। বর্তমানে তার তেমন কোনো ব্যবসা নেই।

নারায়ণগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের করপোরেট শাখার ১০১ কোটি ৪১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা ঋণখেলাপির ঘটনায় ফতুল্লার মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে সোনালী ব্যাংক।

ব্যাংকের টাকা পরিশোধ না করে দীর্ঘদিন ধরে তিনি পলাতক। মামলায় আসামি করা হয়েছে তার ভাই রফিকুল ইসলামকেও।

সোনালী ব্যাংকের আইনজীবী মাসুদ উর রউফ নিউজবাংলাকে জানান, দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে অর্থঋণ আদালতে মামলা দুটি করেছে ব্যাংক। মনিরুলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলাও আছে।

মনিরুলের বাড়ি মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার বড় বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি থাকতেন ফতুল্লার শেরে বাংলা লিংক রোডের মাসদাইর এলাকায় তার বাবার বাড়িতে।

আইনজীবী মাসুদ উর রউফ জানান, ২০০৬ সালে নারায়ণগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের করপোরেট শাখায় প্রথম ঋণ আবেদন করেন মনিরুল। আবেদন গ্রহণ করে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ দেয় ব্যাংক। এলসি স্থাপন করে আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার কথা বলে তারা একের পর এক ঋণ নিতে থাকেন।

এজাহারে উল্লেখ করা হয়, সদর উপজেলার ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় বন্ধ ঘোষিত মেসার্স মুন নিটওয়্যারের কাছে ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ করপোরেট শাখার ২০১৪ সালের ১৪ মে পর্যন্ত পাওনা ছিল ৬৭ কোটি ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার ১৫৪ টাকা।

মেসার্স মুন নিটওয়্যারের মালিক মনিরুল ও তার তিন ভাই।

ফতুল্লার এনায়েত নগর ইউনিয়নের পঞ্চবটির ধর্মগঞ্জের ডালডা কলোনি এলাকার মেসার্স এইচ এস ফ্যাশনেরও মালিক মনিরুল। এই প্রতিষ্ঠানের কাছে ২০১৪ সালের ১৪ মে পর্যন্ত পাওনা ছিল ৩৩ কোটি ৭৭ লাখ ৯১ হাজার ৩৬২ টাকা।

ওই দুটি ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ যুগ্ম জেলা জজ অর্থঋণ আদালতে দুটি মামলা করা হয়েছে।

মেসার্স এইচ এস ফ্যাশনের নামে ফতুল্লার ধর্মগঞ্জ মৌজায় বন্ধকী জমির পরিমাণ ২২ শতাংশ। মেসার্স মুন নিটওয়্যারের নামে ফতুল্লার কাশিপুর মৌজায় বন্ধকী জমির পরিমাণ ১০ শতাংশ। এই দুটি জমির মূল্যে ঋণের টাকার সুদও হবে না।

সোনালী ব্যাংক নারায়ণগঞ্জের করপোরেট শাখার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার পঙ্কজ কুমার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে মনিরুল ইসলামের খোঁজ করছি। আমরা জেনেছি তিনি বিদেশে পলাতক। তাকে ঋণ দেয়ার সময় আমি এখানে কর্মরত ছিলাম না।’

এ ব্যাংকের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ২০০৯ সালের ডিসেম্বরের দিকে ঋণের টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় মনিরুল ও তার ভাই রফিকুলকে ত্রৈমাসিক কিস্তির ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। তখন তারা তাদের দুটি প্রতিষ্ঠান ও দুই জায়গার দলিল ব্যাংকে বন্ধক রেখেছিলেন।

টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ২০১১ সালে ৮ ফেরুয়ারি ঋণ হিসাব সমন্বয় করার জন্য অনুরোধ জানিয়ে নোটিশ দেয় ব্যাংক। তবে তাতে সাড়া দেননি মনিরুল ও তার ভাইয়েরা। পরে ২০১৩ সালের ২৮ আক্টোবর চূড়ান্ত নোটিশ দেয়া হয়। ওই বছরের ২৬ ডিসেম্বর দেয়া হয় আইনি নোটিশ। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।

পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ২০১৪ সালে মামলা করা হয়। তবে এখনও টাকা আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। একপর্যায়ে মনিরুল আত্মগোপনে যান। একাধিক কর্মকর্তা জানতেন মনিরুল বিদেশে পালিয়ে গেছেন।

মনিরুল ইসলামকে খুঁজতে অনুসন্ধান চালিয়েছে নিউজবাংলা। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি মনিরুল ইসলাম নিজেকে ইসলাম গ্রুপের কর্ণধার ব্যবসায়ী পরিচয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেনের বিরুদ্ধে ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগে বলা হয়, ‘শহরের টানবাজার এলাকার দুজন ব্যবসায়ী বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে তার সুনাম নষ্ট করার জন্য অপপ্রচার চালান। এ বিষয়ে ফতুল্লা থানায় গেলে ওসি সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তবে কয়েক দিন পর ওসি আমার বিরুদ্ধে তাদের মামলা নিয়েছেন।’

মনিরুল ডিআইজির কাছে ওসির বিচার দাবি করেন।

ফতুল্লা থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, চাঁদাবাজির অভিযোগে তার নামে মামলা হয়েছে। পুলিশ মামলার তদন্ত করছে।

এ ঘটনার পর মনিরুলকে নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা। প্রকাশ হয়ে যায়, বিদেশে নয়, মনিরুল দেশেই আছেন। কখনও নারায়ণগঞ্জ, কখনও মাদারীপুরে অবস্থান করেন।

মনিরুলের ফুফা মাসদাইর এলকার বাসিন্দা শফি উদ্দিন বলেন, মনিরুলের বাবা ইসলাম গ্রুপ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব পাওয়ার কয়েক বছর পর মনিরুল ইসলাম গ্রুপের কারখানা বন্ধ করে আট বছর আগে বিদেশে চলে যান। পরে হঠাৎ করে ফিরে আসেন। বর্তমানে তার তেমন কোনো ব্যবসা নেই।

অনুসন্ধানে পাওয়া যায়নি এনায়েত নগর ইউনিয়নের ধর্মগঞ্জের ডালডা কলোনি এলাকার মেসার্স এইচ এস ফ্যাশন। এই নামে গত কয়েক বছরে কোনো প্রতিষ্ঠান ছিল না বলে জানান স্থানীয় লোকজন। নেই ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় মেসার্স মুন নিটওয়্যার।

নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল বলেন, ‘এ নামে কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠানের নাম আমি শুনিনি।’

বিসিকের একাধিক শ্রমিকও জানেন না মুন নিটওয়্যার কোথায়।

মনিরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগযোগের চেষ্টা করে সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া সোনালী ব্যাংক করপোরেট শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) মো. ইয়াছিন বলেন, ‘মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সব তথ্য আমাদের কাছে আছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখছে। আদালতে মামলাও চলমান রয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর