বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সক্ষমতা প্রমাণের যাত্রা শুরু, পেল আট চ্যালেঞ্জের বার্তা

  •    
  • ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৬:১৮

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে রপ্তানিতে থাকবে না শুল্ক সুবিধা, কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় অর্জন ব্যাহত হবে, রেয়াতি ঋণ সুবিধা মিলবে না, বাড়বে কর্মসংস্থানের ঝুঁকি, মেধাস্বত্ব সুবিধা উঠে যাবে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে অসম প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করতে হবে, প্রবাসী আয় কমবে এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমার ঝুঁকি বাড়বে।

উন্নয়নশীল দেশে চূড়ান্ত উত্তরণে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়ার মধ্য দিয়ে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের সক্ষমতা প্রমাণের যাত্রা শুরু হলো।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ উত্তরণ জাতি হিসেবে আত্মতৃপ্তি এবং মর্যাদার হলেও এটি একই সঙ্গে কঠিনতম চ্যালেঞ্জেরও। কারণ উত্তরণের সুফল ভোগ করার জন্য কিছু মূল্যও দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আগামীতে উন্নয়নশীল বাংলাদেশকে প্রতিদিন মোটা দাগে আটটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে রপ্তানিতে শুল্ক সুবিধা থাকবে না, কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় অর্জন ব্যাহত হবে, রেয়াতি ঋণ সুবিধা মিলবে না, বাড়বে কর্মসংস্থানের ঝুঁকি, মেধাস্বত্ব সুবিধা উঠে যাবে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারে অসম প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করতে হবে, প্রবাসী আয় কমবে এবং সর্বোপরি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমার ঝুঁকি বাড়বে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ও শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উত্তরণের মধ্য দিয়ে পাওয়া এসব চ্যালেঞ্জের মূল বার্তা হলো আগামীতে বাংলাদেশকে নিজের সক্ষমতা দিয়েই চলতে হবে। কারও দয়ায় আর নয়।

“এখানে চ্যালেঞ্জের মূল কারণ হচ্ছে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিবেশ-পরিস্থিতি অর্থনৈতিক অগ্রগতির অনুকূলে নয়। এ ‘বৈরি’ পরিবেশের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশকে নিজের সক্ষমতা দেখাতে হবে।”

আরেক শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও সিপিডির সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘উত্তরণের বহুমাত্রিক সুফল আছে। তবে সেটি আমরা কতটা মসৃণভাবে ভোগ করতে পারব, তা নির্ভর করছে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত সেই সক্ষমতা প্রমাণের ওপর।’

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এই উত্তরণে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি আসবে রপ্তানি খাতে। যেসব বাজার বাংলাদেশকে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দিচ্ছে, উত্তরণের কারণে ২০২৬ সালের পর তা আর থাকবে না।

এতে প্রতি ১০০ টাকার রপ্তানিতে আগের চেয়ে সাড়ে ৭ টাকা বেশি খরচ দিতে হবে। অর্থাৎ এ পরিমাণ আয় কম হবে। ফলে তখন প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য উৎপাদনশীলতা বাড়ানো একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এটা দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রবল ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

ইউনাইটেড ন্যাশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আঙ্কটাড) জরিপে উল্লেখ করা হয়, রপ্তানি আয় ৫.৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। ফলে প্রতি বছর মোট রপ্তানি আয়ের দেড় বিলিয়ন থেকে ২.২ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশকে হারাতে হবে।

উত্তরণের আরেকটি ঝুঁকি হচ্ছে উন্নয়ন প্রকল্পে দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর স্বল্প সুদ, বিনা সুদের ঋণ এবং অনুদান বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর ফলে বাংলাদেশকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে হবে। ফলে স্বল্প রাজস্ব আয় দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতি পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়বে। এ প্রক্রিয়ার সঠিক সমন্বয় না হলে অভ্যন্তরীণ অর্থব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়বে।

এ ছাড়া বিশ্বের প্রায় সব দেশেই উত্তরণের পর প্রবৃদ্ধিতে পতন দেখা গেছে। বৈদেশিক সাহায্য এবং রেমিট্যান্সেও পতন ঘটে। ফলে তাদের যে আর্থিক ব্যবস্থাপনা রয়েছে, তার ওপর একটা নতুন চাপ সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে কর আদায়ের পরিমাণ না বাড়লে এ সমস্যা আরও জোরালো হয়।

আবহাওয়াগত বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে বিশ্ব। জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এ সমস্যা আরও প্রকট হবে এবং উপকূলীয় অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষের স্থানচ্যুতি ও জীবিকার সংকট সৃষ্টি হতে পারে।

সীমাবদ্ধ ভৌগোলিক অবস্থানে প্রায় নয় লাখ রোহিঙ্গার ব্যয়ভারও এ অর্থনীতিকে বহন করতে হবে। এর নেতিবাচক প্রভাব আগামীতে শুধু অর্থনীতি নয়, সামাজিক ক্ষেত্রেও পড়তে পারে, যা মোকাবিলা করার সক্ষমতা বাংলাদেশকে নিজস্বভাবে অর্জন করতে হবে।

এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে উন্নয়নের যে নীরব বিপ্লব শুরু হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় উন্নয়নশীলে উত্তরণ সম্ভব হয়েছে।

‘জাতিসংঘের দেয়া এ স্বীকৃতি সরকারের আগামী উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে আরও বেশি গতিশীল করে তুলবে। তাই যেসব চ্যালেঞ্জগুলো সামনে আসবে, সেগুলো সুনির্দিষ্ট কর্মকৌশল ও পরিকল্পনা ঠিক করে উত্তরণের প্রাথমিক প্রক্রিয়া ২০১৮ সাল থেকেই শুরু করেছে সরকার।’

সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জগুলো সাফল্যের সঙ্গেই মোকাবিলা করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তোফায়েল আহমেদ।

এ বিভাগের আরো খবর