বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ব্যাংকে উপচে পড়ছে টাকা, আগ্রহ কম ঋণে

  •    
  • ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০৮:২৭

ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ করতে সরকারকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। এখন ভালো গ্রাহককে ৫ থেকে ৭ শতাংশ সুদে ঋণ দিতে চাইছে ব্যাংক। কিন্তু আগ্রহ কম। ব্যাংকের ভল্টগুলো উপচে পড়ছে। এই অবস্থায় আমানত নিতে চাইছে না ব্যাংক।

করোনাভাইরাস মহামারিতে ব্যাংক ফাঁকা হয়ে যাওয়ার যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল শুরুতে, ঘটেছে উল্টোটা। ব্যাংকের ভল্টে টাকা রাখার জায়গা নেই অবস্থা।

গত মার্চে মহামারি শুরুর আগে সবগুলো ব্যাংকের কাছে মোট জমা বা আমানত ছিল তিন লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি। গত ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৭১ হাজার কোটি টাকা।

এর মধ্যে অতিরিক্ত টাকার পরিমাণ ছাড়িয়ে গেছে দুই লাখ কোটি টাকা, যেটি মহামারি শুরুর আগে ছিল দেড় লাখ কোটি টাকার মতো।

অতিরিক্ত টাকার মধ্যে পুরোপুরি পড়ে আছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা, যেটি মহামারি শুরুর আগে ছিল ছয় হাজার কোটি টাকা।

টাকার পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে। এই অবস্থায় ব্যাংকগুলো নতুন করে আমানত সংগ্রহে আগ্রহী নয় খুব একটা। তাদের চিন্তা এখন ঋণ বিতরণ নিয়ে।

জনগণের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে বাড়তি সুদে ধার দেয়াই ব্যবসা ব্যাংকের। কিন্তু এখন ধার দেয়া বা ঋণ বিতরণ থমকে আছে প্রায়। এতে আমানতের টাকার ওপর সুদ দিতে হচ্ছে। কিন্তু নতুন ঋণ দিতে না পারায় আয় যাচ্ছে কমে।

গত ডিসেম্বরে সমাপ্ত অর্থবছরে বাংকের মুনাফাতেও এর প্রতিফলন দেখা গেছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলো এখনও আর্থিক বিবরণী প্রকাশ করেনি। তবে অনিরীক্ষিত কর পরবর্তী আয়ের যে প্রাথমিক হিসাব বের হয়েছে, তাতে দেখা যায় তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের মধ্যে আয় কমেছে ২০টির বেশি।

এর কারণ নিশ্চিতভাবেই ব্যাংকের টাকা ধার দেয়ার ব্যবসা কমে যাওয়া।

করোনা সংক্রমণের কারণ মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত মানুষের স্বাভাবিক জীবনপ্রবাহ ছিল বিঘ্নিত। উৎপাদক প্রতিষ্ঠান বন্ধ, নতুন শিল্প উদ্যোগগুলো থমকে, নিত্যপণ্য ছাড়া মানুষের বিলাস দ্রব্য কেনা কমিয়ে দেয়া, চলাচলে বিঘ্নসহ নানা কারণে অর্থনীতিতে নেমে আসে স্থবিরতা।

জুলাইয়ের পর থেকে ধীরে ধীরে অর্থনীতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলেও এখনও মহামারিপূর্ব অবস্থার ধারেকাছেও নেই।

এর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে কোটি কোটি মানুষের বহু পণ্যের চাহিদা স্বাভাবিক হয়নি এখনও।

তাই স্বাভাবিকভাবেই কমে যাচ্ছে উৎপাদন। ফলত নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ কম। আর ঋণ চাহিদা কমায় ব্যাংকে বাড়ছে অলস অর্থ।

২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্যের পরিমাণ দুই লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে কোনো ধরনের বিনিয়োগে নেই অর্থাৎ অলস টাকার পরিমাণ প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

গত তিন মাসের ব্যবধানে অলস টাকা বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

এই অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণ পাওয়া সহজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কারও ঋণের প্রস্তাব বিবেচনা করা হয় যেসব সূচকের ভিত্তিতে তার সম্মিলিত নম্বর ৬০ না হলে এতদিন ঋণ পাওয়া যেত না, সেটি কমিয়ে ৫৫ করা হয়েছে।

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, মানুষের আয় কমায়, ভোগের চাহিদা কমেছে। করোনা মহামারিতে কাজ হারিয়ে অনেক মানুষ বেকার। তবে, সামনে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালে ঋণ চাহিদা বাড়বে।

তিনি মনে করেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লেগে যেতে পারে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহামারীতে বৈশ্বিক অর্থনীতি থমকে গেছে। সে কারণেই সব কিছু ধীর হয়ে গেছে। নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। বেসরকারি ঋণের চাহিদাও কম। আমরা বিনিয়োগ করতে চাই; কিন্তু বিনিয়োগ যে করব, সেই চাহিদা তো থাকতে হবে।’

সরকারও ঋণ নিচ্ছে কম

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কম তার ওপর সরকারও ঋণ নিচ্ছে কম। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণের লক্ষ্য ছিল ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা থেকে ঋণ অনেক পিছিয়ে। তবে এর চেয়ে বেশি সুদে সঞ্চয়পত্র থেকেই ঋণ নেয়া হচ্ছে। কারণ, কেউ সঞ্চয়পত্র কিনতে চাইলে সরকার তাতে বাধা দেয় না।

তারল্য কত

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই লাখ চার হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা।

তিন মাসে আগে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে অতিরিক্ত তারল্য ছিল এক লাখ ৬৯ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে অতিরিক্ত তারল্য বেড়েছে প্রায় ৩৫ হাজার ৮৮ কোটি টাকা।

একই সময়ে ব্যাংকগুলোর হাতে পড়ে থাকা অলস টাকার পরিমাণও বেড়েছে।

করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে অলস টাকার পরিমাণ ছিল মাত্র ছয় হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা।

১০ মাস পরে ডিসেম্বর শেষে অলস টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।

কেন বাড়ল তারল্য

করোনাকালে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার এক লাখ কোটি টাকার বেশি প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। বিতরণ হয়ে গেছে বেশিরভাগ।

প্রণোদনার ঋণ দেয়া হচ্ছে দুই শতাংশ সুদে। তাও ঋণগ্রহীতারা প্রথমে ছয় মাস ও পরে আরও আট মাস সময় পেয়েছে প্রথম কিস্তি জমা দিতে।

এই ঋণের একটি অংশ আবার ব্যাংকে আমানত হিসেবে ফিরে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমানতের সুদহার এখন আগের চেয়ে কম হলেও সেটি প্রণোদনার ঋণের দ্বিগুণেরও বেশি। এখন আমানতের সুদ হার ৪ থেকে ৬ শতাংশ।

পাশাপাশি করোনাকালে প্রবাসী আয় তথা রেমিটেন্সের জোয়ার বইছে। দেশের স্বজনদের জন্য কাড়ি কাড়ি টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এই টাকাও ফিরে আসছে ব্যাংকে।

আবার করোনার শুরুতে টাকার সংকট হতে পারে ভেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমার হার বা সিআরআর কমিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আগের চেয়ে কম টাকা জমা রাখতে হচ্ছে।

ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইস মনসুর বলেন, ‘বিদেশে কাজ হারিয়ে অনেকেই দেশে ফিরে এসেছে। তাদের জমানো অর্থ দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে। এগুলো অর্থবাজারে এসেছে।’

কম সুদেও মানুষ টাকা নিচ্ছে না

দুই বছর আগেও ঋণের সুদ হার ১২ থেকে ১৬ শতাংশ ছিল। সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদহার কার্যকর করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়েছে সরকারকে।

এখন ৯ শতাংশ না, বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে ৫ থেকে ৭ শতাংশ হারেও ঋণ সাধছে ব্যাংক।

ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে ঋণের সুদ হার যেখানে ছিল ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ, সেটি এখন কমে এসেছে ৯ শতাংশে।

স্বভাবতই ব্যাংকগুলো ঋণের সুদের হার কমানোয় আমানতের সুদহারও কমিয়ে দিয়েছে। আমানতের সুদহার সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ নির্ধারণ করা হলেও এখন তিন থেকে চার শতাংশও দিতে চাইছে কোনো কোনো ব্যাংক।

আবার ছোট অংক বা সীমিত সময়ের জন্য আমানত রাখতে এখন ব্যাংকগুলো আগ্রহী নয় মোটেও। বড় অংকের ঋণ বা দীর্ঘমেয়াদী আমানত হলেই আগ্রহী তারা।

ব্যবসায় গতি ফেরেনি

ব্যবসায়ীদের সংগঠন ডিসিসিআই এর সাবেক প্রেসিডেন্ট শামস মাহমুদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত বছর দুটি ঈদ, পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ, জানুয়ারিতে বর্ষবরণ, পূজা ছাড়াও বিভিন্ন দিবসকে কেন্দ্র করে আয়োজন হয়েছে সীমিত পরিসরে।

এসব উৎসবকে কেন্দ্র করে উদ্যোক্তারা ছয় মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে। যেটা গত বছর ছিল অনুপস্থিত। আর এ ব্যবসায় ভাটা পড়ায় ব্যবসা হয়নি। হাতে টাকা নেই, এই অবস্থায় নতুন করে ঋণ নেয়ার সামর্থ্য কমে গেছে।’

এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় চলতি বছর হয়ত সেই প্রস্তুতি আগাবে বলে আশাবাদী এই ব্যবসায়ী নেতা।

‘পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকও টাকা দেয়ার ক্ষেত্রে আগের চেয়ে সতর্ক হয়েছে। গ্রাহকের তথ্য যাচাই করে দেখছে। যারা ঋণ পরিশোধ করতে পারবে তেমন গ্রাহককে ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে’, বলেন ডিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট।

এ বিভাগের আরো খবর