করোনাভাইরাসের মধ্যে রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের ঘাটতির কারণে চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বা উন্নয়ন বাজেট কাঁটছাঁট করা হচ্ছে।
বরাবরের মতো এবারও এডিপিতে দেশীয় বরাদ্দের অর্থ অপরিবর্তীত রেখে বিদেশি ঋণের অংশ থেকে বরাদ্দ কমানো হচ্ছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে মূল এডিপির স্থানীয় বরাদ্দ ১ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা বহাল রাখা হচ্ছে।
অপরদিকে, বিদেশি ঋণের দেয়া বরাদ্দের ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা থেকে ৭ হাজার ৫০২ কোটি টাকা ছেঁটে ফেলা হচ্ছে। ফলে সংশোধিত এডিপির আকার কমে দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা।
গত জুনে ঘোষিত বাজেটে মূল এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। আর সংশোধিত এডিপির আকার কমিয়ে প্রস্তাব করা হচ্ছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। ফলে মূল এপিডির তুলনায় সংশোধিত এডিপি কমছে প্রায় ৪ শতাংশ।
বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা কমিশনের এক বৈঠকে দেশীয় অর্থের বরাদ্দ ঠিক রেখে বিদেশি অংশের বরাদ্দ থেকে ৭ হাজার ৫০২ কোটি টাকা কমিয়ে সংশোধিত এডিপি নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয় ।
মার্চে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় সংশোধিত এডিপি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে।
পরিকল্পনা সচিব জয়নুল বারীসহ পরিকল্পনা কমিশনের অন্যান্য সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিউজবাংলাকে বলেন, সংশোধিত এডিপির আকার কিছুটা কমছে। সেটি উন্নয়ন সহযোগীদের ঋণ। তবে দেশীয় অর্থের বরাদ্দ অপরিবর্তীত রাখা হচ্ছে।
বাজেট বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় এডিপি সংশোধন সরকারের জন্য একটি রুটিন কাজ। কয়েক বছরে অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, বিদেশি ঋণের অংশ থেকে বরাদ্দ কমিয়ে সংশোধন করা হয় এডিপি। এবারও তাই করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়া ঋণের টাকা খরচ করতে গেলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হয়। এ কারণে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো সব সময় রাষ্ট্রীয় অর্থ খরচে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
গবেষণা সংস্থা পিআরআই-এর নিবার্হী পরিচালক ও আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারি টাকা যেনতেনভাবে খরচ করা যায়। এখানে জবাবদিহিতার ঘাটতি আছে। কিন্তু উন্নয়ন সহযোগীদের টাকা কোথায় কীভাবে খরচ করা হলো, সে ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হয়। যে কারণে বিদেশি ঋণের টাকা ঠিকমতো খরচ করতে পারে না মন্ত্রণালয়গুলো। ফেরত দিতে হয় অব্যয়িত টাকা।
নিয়ম অনুযায়ী, এডিপিতে বরাদ্দের পুরো টাকা খরচ করতে না পারলে অবশিষ্ট অংশ ওই অর্থবছরের মধ্যে ফেরত দিতে হয়। নতুন এডিপিতে চাহিদা মোতাবেক আবার বরাদ্দ দেয়া হয়।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, করোনা পরবর্তী অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাড়ছে অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও ভোগ ব্যয়। এরই মধ্য টিকা চলে এসেছে। অর্থনীতিতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসায় বাড়বে রাজস্ব আদায়।
ফলে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি আরও বাড়বে এবং সম্পদের চাহিদা বাড়বে। এসব কারণে এডিপিতে সরকারি জোগানের অর্থ বহাল রাখা হচ্ছে।
তবে বিদেশি ঋণের বরাদ্দে কাঁটছাঁট করা হলেও সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ছে। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যয়ের কথা বিবেচনা করে এ খাতে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার বাড়তি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।
এদিকে, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সবশেষ তথ্য বলছে, করোনার কারণে এডিপি বাস্তবায়নে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২৮ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যা ৬১ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। গত পাঁচ অর্থবছরের মধ্যে এবার সাত মাসে সর্বনিম্ন এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে।