সিলেটের পেট্রল পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। রেলওয়ের ওয়াগন সংকটের কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় বিভাগের সব পেট্রল পাম্পগুলো কম তেল নিয়ে চলছে। সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে ডিজেলের। ব্যবসায়ীদের দাবি, চাহিদার অর্ধেক ডিজেলও পাচ্ছেন না তারা।
২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জ্বালানি তেলের সংকট নিরসনে উদ্যোগ না নিলে ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছে সিএনজি ফিলিং স্টেশন ও পেট্রল পাম্প অ্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিলেট বিভাগীয় কমিটি।
এই সংগঠনের তথ্যে, বিভাগের চার জেলায় ১১৪টি পেট্রল পাম্প রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট মহানগরীতে ৪৫ টিসহ জেলায় আছে ৭০টি। এগুলোতে প্রায় ২০ দিন ধরে চলছে জ্বালানির সংকট।
সংগঠনের নেতারা জানান, সিলেট বিভাগে শুষ্ক মৌসুমে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ে। এই সময়ে হাওর এলাকাগুলোতে বোরো আবাদ হয়। সেচের জন্য ডিজেলের চাহিদা দিগুণ বেড়ে যায়। এই সময়টায় সিলেটের পাম্পগুলোতে পেট্রল, অকটেন ও ডিজেলের চাহিদা দিনে ১০ লাখ লিটারেরও বেশি। বর্ষা মৌসুমে এই চাহিদা অর্ধেকে নেমে আসে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলারস ডিস্ট্রিবিউটরস এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রোলিয়াম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও সিলেট বিভাগীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের আহমদ চৌধুরী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিলেটে জ্বালানি তেল সরবরাহ ওয়াগন নির্ভর হওয়ায় আমাদেরকে প্রায়ই এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়।
‘সিলেটের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাসের সঙ্গে যে উপজাত (কনডেনসেট) পাওয়া যায় তা আগে সিলেটের প্লান্টগুলোতেই জ্বালানি তেলে রূপান্তর করা হতো। তবে প্রায় ৬ মাস থেকে সরকারি এই প্লান্টগুলো বন্ধ থাকায় এ সংকট কাটানো যাচ্ছে না।’
তিনিও জানান, ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই সমস্যা সমাধান না করা হলে পেট্রল পাম্পগুলোতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয়া হবে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল বিপণনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সিলেটের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগে চট্টগ্রাম থেকে সিলেটে প্রতি সপ্তাহে ৩ থেকে ৪টি তেলবাহী ওয়াগন আসত। প্রতিটি ওয়াগনে গড়ে আসত ৩ লিটার তেল। তবে গত একমাস ধরে ওয়াগন আসা কমে গেছে। এখন সপ্তাহে একটি ওয়াগনও আসছে না। ফলে তেলের সংকট দেখা দিয়েছে।
যমুনা ওয়েলের সিলেট কার্যালয়ের ইনচার্জ বাকী বিল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, রেলের ওয়াগন অনিয়মিত হওয়ায় তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। সোমবার রাতে একটি ওয়াগনে ৪ লিটার তেল এসেছে। তবে নিয়মিত ওয়াগন না আসলে এই সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে না।
প্রায় আট দিন পর সোমবার রাতে সিলেটে একটি তেলবাহী ওয়াগন আসে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
ওয়াগন সংকটের কারণ সুনির্দিষ্টভাবে জানাননি সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক খলিলুর রহমান। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘তেলবাহী রেলের ওয়াগন এখন আগের তুলনায় কিছুটা কম আসছে। তবে কেনো কম আসছে তা আমি বলতে পারব না।’
তিনি জানান, গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জের কায়স্থগ্রাম এলাকায় তেলবাহী ট্রেনের সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। প্রায় ২৮ ঘণ্টা সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকে। এর আগে ৯ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম রেল স্টেশনে তেলবাহী ওয়াগন ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। আর ৭ নভেম্বর দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে তেলবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত হয়।
এই রুটে ঘন ঘন ওয়াগনের দুর্ঘটনা হওয়ায় এখন জ্বালানি পরিবহনের জন্য ওয়াগনের এই সংকট দেখা দিয়ে থাকতে পারে।
চাহিদা অনুযায়ী জ্বালানি না পেয়ে মঙ্গলবার বিক্ষোভ করেছেন ট্যাংক লরি শ্রমিকরা। মঙ্গলবার সকালে যমুনা ওয়েলের ডিপোর সামনে বিক্ষোভ করেন সিলেট বিভাগীয় ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা।