পুঁজিবাজারসহ সাত খাতে ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)।
মঙ্গলবার রাজধানীতে সংগঠনের কার্যালয়ে ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীর সঙ্গে বৈঠকে এই আহ্বান জানানো হয়।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, ‘সরকার দেশে বিনিয়োগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে। এ ছাড়া বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নানাবিধ সুবিধা সংবলিত বিনিয়োগ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। ভারতীয় ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা বা বিনিয়োগকারীরা এ সুযোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার, অটোমোবাইল, তথ্যপ্রযুক্তি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পুঁজিবাজার, ওষুধ, খাদ্য ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং হালকা প্রকৌশল প্রভৃতি খাতে বিনিয়োগ করতে পারে।’
পুঁজিবাজারে অনেক বহুজাতিক বিনিয়োগ রয়েছে জানিয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘ভারতীয় কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারে।’
দুই দেশের বাণিজ্য পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরে ডিসিসিআই সভাপতি জানান, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬.৯০ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে রপ্তানি ছিল ১.১০ বিলিয়ন ডলার এবং আমদানি ৫.৮০ বিলিয়ন ডলার।
এই বাণিজ্য ব্যবধান কমাতে ভারতীয় উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি হারে পণ্য আমদানি করারও আহ্বান রাখেন তিনি।
ভারত সরকারের বেশ কিছু শুল্ক ও অশুল্ক বাধার কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রপ্তানি কম হচ্ছে বলেও জানানো হয় এ সময়।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, ‘২০১৭ সাল থেকে ভারতে বাংলাদেশের প্রতি টন পাটজাত পণ্যে রপ্তানির ক্ষেত্রে ১৯ থেকে ৩৫১ দশমিক ৭২ ডলারের অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক বসানো হয়েছে।
‘একইভাবে ২০২০ সাল থেকে ভারত সরকারের চালুকৃত ‘‘কাস্টমস রুলস ২০২০’' আইনের কারণে ‘‘সাফটা’' ও ‘‘আপটা’-এর আওতায় ভারতের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা গ্রহণে সমস্যা তৈরি হচ্ছে।'
ভারতের দিল্লিতে সমুদ্রপথে পরিবহনের খরচ যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলের চেয়েও বেশি থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন ডিসিসিআই সভাপতি। বলেন, এই বাধা দূর করতে ভারতীয় অংশের স্থলবন্দরগুলোর অবকাঠমো উন্নয়ন করা জরুরি।
ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, ‘আমি আশা করব এই ইস্যুতে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা একযোগে কাজ করবেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ভোগ্যপণ্যসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বিএসটিআইর সনদের গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার বিষয়ে ভারত সরকার কাজ করছে। আমি আশা করছি শিগগিরই এ বিষয়ে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া সম্ভব হবে।’
সমুদ্রপথে পরিবহন খরচ কমিয়ে আনতে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের নিজ নিজ সরকারের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দেন দোরাইস্বামী। বলেন, ‘শুধু ভারতীয় অংশেই নয়, বেনাপোল এবং পেট্রাপোলসহ বাংলাদেশের সব স্থলবন্দরের ভৌত অবকাঠামো এবং প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধার উন্নয়ন আবশ্যক।’
এই বাড়তি খরচ রেলপথ নির্ভরতায়ও কমতে পারে বলে আশা করছেন ভারতীয় দূত। বলেন, ‘বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে রেলপথের ব্যবহার বাড়ানো গেলে খরচ কমে আসবে।
বাংলাদেশের রেল ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি সিরাজগঞ্জে রেলওয়ের একটি কনটেইনার ডিপো স্থাপনেরও প্রস্তাব করেন দোরাইস্বামী।