ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ‘কাসাব্লাংকা’ নামে হ্যাকার গ্রুপ সাইবার হামলার যে হুমকি দিয়েছিল, আপাতত তা ঠেকানো গেছে বলে জানাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রতি সতর্কতা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়নি। কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, সব সময় সতর্ক থাকা উচিত।
সরকারের ই-গভর্নমেন্ট কম্পিউটার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিম–বিজিডি ই-গভ সিআইআরটি নামের সাইবার থ্রেট গবেষণা দলটি সম্প্রতি ব্যাংক খাতে হ্যাকিংয়ের হুমকিটি চিহ্নিত করে। সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক করে দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এটি ১৭ ফেব্রুয়ারির কথা।
পাঁচ দিন পর বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, বিপদ কেটে গেছে। তবে সার্বিক দিক নজরদারিতে রেখেছেন তারা।
গত বছরের আগস্টেও একই রকম একটি সাইবার আক্রমণের আশঙ্কা করছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখনও সতর্ক করে দেয়া হয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে। নভেম্বর মাসে আবার একটি হামলার আশঙ্কা করা হয়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সব সময় পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজে এসব বিষয় তদারকি করে। আবার অন্য ব্যাংককে নির্দেশনাও দেয়া হয়।
‘সরকারের কোনো নির্দেশনা থাকলে সঙ্গে সঙ্গে সেটা ব্যাংকগুলোকে জানানো হয়। এ ছাড়াও ব্যাংকের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা যেন পরিপালন করে সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোকে বারবার সতর্ক করা হচ্ছে।’
আপাতত বিপদের আশঙ্কা না করলেও অসতর্ক থাকার সুযোগ নেই বলে মনে করেন বেসরকারি মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘সাইবার হামলার ঝুঁকি সব সময়ই রয়েছে। ফলে আইটি ব্যবস্থাপনায় কর্মরতদের আরও সতর্ক হতে হবে।’
ব্যাংকগুলো কী করছে এই ঝুঁকি মোকাবিলায়?
সৈয়দ মাহবুবুর বলেন, ‘প্রতিটি ব্যাংক স্বশরীরে পরিদর্শন বাড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্ট যেসব দিয়ে ম্যালওয়ার ঢুকতে পারে, যেসব পয়েন্টে সাইবার হামলা হতে পারে সেসব পয়েন্টে নিরাপত্তা আরও জোরদার করার চেষ্টা চলছে।’
ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সাইবার ঝুঁকি সব সময় থাকবে। তবে প্রযুক্তিনির্ভর লেনদেনে পূর্ণমাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’
ব্র্যাক ব্যাংকের পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা আছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘হ্যাকাররা সব সময় নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এসব হামলা করে। এ জন্য কতটুকু নিরাপত্তাব্যবস্থা নিতে হবে সেটা বলা মুশকিল। তবে সব সময় এসব বিষয়ে খোঁজ রাখা হচ্ছে।’
২০১৬ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি হয় বড় অঙ্কের অর্থ। তারপরই প্রযুক্তিনির্ভর লেনদেনে নিরাপত্তা বাড়ায় বেশির ভাগ ব্যাংক।
দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে ৬২টি ব্যাংক। তার মধ্যে ছোট ও মাঝারি মানের ব্যাংকের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক।
তবে ঋণ জালিয়াতির কারণে অর্থ লুট হওয়ার ফলে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের কয়েকটি ব্যাংক। তবে সাইবার ঝুঁকি রোধে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা বা এই খাতে বিনিয়োগে ছোট এবং মাঝারি মানের ব্যাংকগুলোর তেমন নেই বললেই চলে।