বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বিয়ের বাজারেও ‘সীমিত পরিসর’

  •    
  • ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৪:৩২

‘তিন মাস দোকান খুলতে পারিনি শুরুর দিকে। পরে কোরবানি ঈদের পর দোকান চালু হলেও সারা দিনে কোনো বিক্রি ছিল না। গত ডিসেম্বর থেকে একটু বিক্রি শুরু হতে থাকে। তবে বিক্রিতে এখন আর আগের মতো অবস্থা নেই।’

হুহুম না… হুহুম না… ধ্বনি ছড়িয়ে পালকি চড়ে বরের বাড়িতে বধূবরণের চিরায়ত দৃশ্য হারিয়েছে আগেই। আর করোনাকালের ছোবলে সামাজিক আয়োজনেও লেগেছে মড়ক।

শীতের রুক্ষতা শেষে বসন্তের আমুদে হাওয়া গায়ে লাগলেও, বাঙালির বিয়ের আয়োজন আটকে আছে ‘সীমিত পরিসরে।’ জাঁকজমক আয়োজনের বদলে ঘরোয়া পরিবেশে হচ্ছে বিয়ে।

ফলে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে দোকানিরা বিয়ের উপকরণ দিয়ে নিজেদের পসরা মেলে ধরলেও, বিকিকিনিতে ভাটার টান। গোটা বিশেক দোকানির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উৎসবমুখরতা না থাকায় ক্রেতাদের আনাগোনা নেই।

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড বিয়ের উপকরণের পসরা সাজিয়েছে বিয়ে বাড়ি নামে একটি দোকান। তবে দোকানে ক্রেতা নেই। অলস ভঙ্গিতে বসে দোকানি।

ভিডিও ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন দেখেই একটু আড়মোড়া ভাঙল তার। দোকানের প্রবেশমুখ বাদ দিয়ে বাকি তিন দিকেই বর সাজানোর উপকরণ। এগুলোর মধ্যে আছে শেরওয়ানি, পাগড়ি আর নাগরা জুতা।

কথা হয় দোকান মালিক জিয়ার সঙ্গে। করোনার প্রভাব খুব ভালোভাবে টের পেয়েছেন বিয়ের সামগ্রী বিক্রি করা এই দোকানি।

‘তিন মাস দোকান খুলতে পারিনি শুরুর দিকে। পরে কোরবানি ঈদের পর দোকান চালু হলেও সারা দিনে কোনো বিক্রি ছিল না। গত ডিসেম্বর থেকে একটু বিক্রি শুরু হতে থাকে। তবে বিক্রিতে এখন আর আগের মতো অবস্থা নেই।’

‘সীমিত পরিসরে বিয়ে’ তাদের বিকিকিনিকেও করেছে সীমিত, বলছিলেন জিয়া। তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের অনেক জিনিসের দাম পড়ে গেছে। আমার দোকানে শেরওয়ানিসহ বরের পরিধানের সমস্ত আইটেম পাওয়া যায়।’

দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বরের শেরওয়ানি দেড় হাজার টাকা থেকে শুরু। তার দোকানের সবচেয়ে ভালো কাপড়ের শেরওয়ানির দাম ১৫ হাজার টাকা।’

এখন বাজারে জয়পুরি কাতান, জরি কাতান ও সুতার কাজ করা শেরওয়ানির কদর বেশি। আর তাই দামও একেকটার একেক রকম।

সুতার কাজ করা শেরওয়ানির দাম একটু বেশি। এ ছাড়া পায়জামা ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। ওড়না ৫০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। পাগড়ি ১ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। নাগরা জুতা ৩০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।

রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে দোকানিরা বিয়ের উপকরণ দিয়ে নিজেদের পসরা মেলে ধরলেও, বিকিকিনিতে ভাটার টান। ছবি: নিউজবাংলা

বিভিন্ন দোকান ঘুরে বোঝা গেল, স্বল্প আয়ের মানুষ বিয়ের উপকরণ কেনার চেয়ে ভাড়ার দিকেই ঝুঁকছে বেশি।

এখন বিক্রির চেয়ে আরেকটা পন্থা বেশি চলছে বাজারে, জানালেন জিয়ার দোকানের কর্মচারী রিটন সর্দার।

রিটন বলেন, ‘এখন অনেকেই কেনার বদলে ভাড়া নিতে চান। আর কাপড় ও স্টাইলভেদে শেরওয়ানি ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে।’

ভাড়া কত আর কাপড় যে ফিরে আসবে, সেটার নিশ্চয়তা কীভাবে পাওয়া যায়, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তারা সময় ও কাপড়ের মানের ওপর ভিত্তি করে ভাড়া দেন। তবে নাগরা জুতা একবারই পরা হয় বিধায় এটা ভাড়ার বাইরে। শেরওয়ানি, পাগড়ি ও অন্য সবকিছু মিলিয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ভাড়া শুরু হয়। ঢাকার বাইরে হলে একটু বেশি থাকে ভাড়া।’

এই ব্যবসায়ী জানান, ভাড়ার অতিরিক্ত আরও টাকা জমা রাখতে হয় শেরওয়ানি ও পাগড়ি নেয়ার সময়। এটা অনেকটা জামানতের মতো। এগুলো ফেরত দেয়ার সময়ই দেয়া হয় সেই টাকা।

এলিফ্যান্ট রোডের কেনাবেচার খবর নেয়ার ফাঁকেই দেখা হলো এক প্রৌঢ় ব্যক্তির সঙ্গে। নাম নাসির তালুকদার। আর কদিন পর ছেলের বিয়ে। তাই দেখেশুনে বিয়ের উপকরণ কিনতে এসেছেন তিনি। দেখছিলেন শেরওয়ানি, পাগড়ি, নাগরা, গায়েহলুদের কুলাসহ বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় প্রয়োজনীয় সব অনুষঙ্গ। দরদাম আর বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় করে দোকান ঘুরে কিনবেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘ছেলেকে সঙ্গে এনেছি। দেখি, সে কী পছন্দ করে। কনের শাড়ি লাল রঙের, তাই ছেলের শেরওয়ানি একটু কনট্রাস্ট করে কিনব।’

বিয়ে-সংক্রান্ত পোশাক ও বিয়ের অন্য সব জিনিসের জন্য এলিফ্যান্ট রোডের নামডাক রয়েছে। কোথাও পোশাকের দোকান আবার কোথাও গায়েহলুদের উপকরণের পসরা।

বিয়ের পোশাকি আয়োজনের বাইরে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসগুলো বিক্রি হয়, তা হলো গায়েহলুদের অনুষ্ঠানের ডালা, কনের গয়না, ফুল, মাছ ডালা, ঝুড়ি, কুলাসহ আরও আনুষঙ্গিক জিনিস।

হলুদের নানা উপকরণ সাজিয়ে রেখেছে ‘বাঁধন’। দোকানমালিক কাওসার আহমেদ বলেন, তাদের দুরাবস্থার কথা।

তিনি বলেন, ‘আগে বড় পরিসরে বিয়ে হতো। জামাইয়ের সঙ্গে যারা থাকত তাদের আইটেম আমরা বিক্রি করতে পারতাম। এখন বিয়ের অনেক আয়োজন ছোট হয়ে গেছে। তাই অনেক কিছু আছে, যা আগে লাগত, এখন আর ডিমান্ড নেই। আগে যেখানে একটা বিয়েতে ২০ পিস ডালা লাগত, এখন সেখানে একটা বা দুইটা দিয়ে কাজ সারা হচ্ছে।’

হরেক রকম বিয়ের পাগড়ি। ছবি: নিউজবাংলা

দামের প্রসঙ্গে কাওসার জানালেন, মান ও ডিজাইন বুঝে ২০০ থেকে ৭০০ বা ৮০০ টাকা লাগে একটি ডালা কিনতে। আর কুলার দাম ২০০ টাকা থেকে শুরু হয়।

তিনি আরও জানালেন, ‘মেয়েদের গয়নার সেট পাওয়া যাবে ৩০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে। ক্রেতারা চাহিদা অনুযায়ী এসব জিনিস পছন্দ করে। এ ছাড়া উপটান, চন্দন, সোহাগপুরি, আলতা আছে। এগুলোর দাম ২০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।’

এলিফ্যান্ট রোডের বিয়ের সামগ্রী বিক্রির বড় দোকানগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘মহাবীর।’ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এই সময়ে দোকান চলছে ঠিকই, কিন্তু বেচাবিক্রি যাচ্ছেতাই বললেন তিনি।

দোকানের মালিক এ কে আজাদ বলেন, ‘এখন আর করোনার আগের ব্যবসার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়ে গেছে। একটা সময় দোকান তিন মাস বন্ধ ছিল। এরপর খুললেও সারা দিনে তেমন ক্রেতা থাকত না।

‘আমার দোকানে বিয়েতে বরের সব ধরনের পোশাক আছে। ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৪০ হাজার টাকার শেরওয়ানি পাওয়া যাবে এখানে। তবে মাঝখানে অনেকেই বিয়ের পোশাক ভাড়া নিতেন। এখন একটু কমে গেছে বলে আমার মনে হয়।’

মহাবীরে বিয়ের পোশাক কিনতে আসা এক ক্রেতা জানান, কনের পোশাকের ওপর নির্ভর করে সাধারণত ছেলের পোশাক কেনা হয়। তবে শেরওয়ানির ক্ষেত্রে তার কাতান পছন্দ। আর শেরওয়ানির সঙ্গে তিনি রাজস্থানি পাগড়ি পরতে চান। এখনো অনেক দোকান ঘুরে দেখা বাকি তার।

মানভেদে একেকটি শেরওয়ানির দাম পাঁচ হাজার টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা। ছবি: নিউজবাংলা

করোনার প্রকোপের পর ক্রেতাদেরও এখন বিয়ের সব জিনিসে আগ্রহ নেই। বর ও কনের পোশাকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ কেনাকাটা। পোশাকের বাইরে অন্য আনুষঙ্গিক এখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপহার বা সাজানোতে চলে যাচ্ছে।

রাস্তার দুই পাশজুড়ে ছোট-বড় অনেক দোকান এখানটায়। দোকানের সংখ্যা অন্তত ৫০টি। ব্যবসা মন্দা থাকায়, অনেক দোকানের ঝাঁপি খোলাও হয়নি। দোকান মালিকদের বেশির ভাগ নোয়াখালী ও চাঁদপুর জেলার বাসিন্দা। তারা জানালেন, পণ্যের জোগান আসে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে।

এ কে আজাদ বললেন, ‘বিয়ের পোশাক মানেই ভারতীয় কাপড়। জয়পুরি শেরওয়ানি বা রাজস্থানি পাগড়িই বেশি চায় মানুষ।’

তিনি বলেন, ‘কিছু জিনিস আছে, যা আমরা স্থানীয়ভাবে তৈরি করি। এখান থেকে দেশের দুইটি বিভাগ সিলেট ও চট্টগ্রামে বিয়ের সামগ্রী পাইকারি বিক্রি করা হয়।’

এ বিভাগের আরো খবর