শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো তৈরি করে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। অথচ শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের বেতন আসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দ থেকে।
আবার সড়ক ও জনপথ বিভাগের টাকায় তৈরি হচ্ছে সেতু। সেই সেতুর সংযোগ সড়কের অর্থ ছাড়ের জন্য ধরনা দিতে হচ্ছে অন্য মন্ত্রণালয়ে।
উন্নয়ন বাজেট বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) এ ধরনের নানা অসঙ্গতি।
সমন্বয় নেই এক মন্ত্রণালায়ের সঙ্গে অন্য মন্ত্রণালয়ের। এ সব কারণে সময়মত প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অপচয় হচ্ছে সরকারি অর্থের।
এমন পরিস্থিতিতে প্রচলিত প্রথা থেকে বেরিয়ে এসে এডিপির কাঠামোগত বিন্যাস করা হচ্ছে। পরিবর্তন আনা হচ্ছে বরাদ্দে।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে এডিপিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক, অবকাঠামো, যোগাযোগ, কৃষিসহ ১৭ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়। খাত কমিয়ে ১৪টি করা হচ্ছে। আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে নতুন এ নিয়ম চালু হচ্ছে।
কর্মকর্তারা বলেন, সময়মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মানসম্মত ব্যয় নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খাতভিত্তিক বিভাজন কমিয়ে পুনর্গঠন করা হচ্ছে এডিপি তথা উন্নয়ন বাজেট।
পরিকল্পনা কমিশনের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, এডিপি হচ্ছে সরকারি বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় খাত। বর্তমানে সতেরটি খাতে দেয়া বরাদ্দের মাধ্যমে এডিপি বাস্তবায়ন করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এত বেশি খাত থাকায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে সমন্বয় থাকে না। যে কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্ব হয়।
এডিপি পুনর্গঠন করা হলে বাস্তবায়ন দ্রুত হওয়ার পাশাপাশি গুণগত ব্যয় নিশ্চিত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বর্তমান ব্যবস্থায় অর্থবরাদ্দে ত্রুটি আছে। যে কারণে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত হয় না। এডিপি পুনর্গঠনের প্রস্তাব কার্যকর হলে দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি সরকারি অর্থ ব্যয়ে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হবে।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক ঊর্ধ্বতন পরিচালক ড. জায়েদ বখত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে নানা ধরনের অসঙ্গতি ও ত্রুটি আছে।
‘দেখা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্ত শিক্ষকের অভাবে তা চালু করা হয় নি। আবার সেতু নির্মাণ করা হলেও রাস্তা নেই। ফলে সেতু ব্যবহার করা যাচ্ছে না।’
এডিপিতে বরাদ্দে অসামাঞ্জস্যতার কারণে এমনটা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত মনে করেন, সরকারের উচিত বরাদ্দের ক্ষেত্রে যৌক্তিকীকরণ ও অগ্রাধিকার ঠিক করা।
এডিপির পুনর্গঠনের কাজ আরও আগে করা উচিত ছিল বলে জানান তিনি।
বর্তমানে শিক্ষা এবং ধর্ম দুটি আলাদা দেখিয়ে এডিপিতে বরাদ্দ দেয়া হয়। নতুন ব্যবস্থায় এই দুটিকে একই খাত করা হচ্ছে।ক্রীড়া ও সংস্কৃতিকে একীভূত করে বরাদ্দ দেয়া হবে। এ ছাড়া গণযোগাযোগ ও বিনোদনকে এক করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে এডিপিতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রা এক লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। বাকি ৭০ হাজার ৫০১ কোটি টাকা বিদেশি ঋণ।
করোনার কারণে এবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে বড় ঘাটতি রয়েছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে এবারও এডিপি কাঁটছাঁট করা হচ্ছে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এডিপিতে বিদেশি ঋণের অংশ থেকে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে স্থানীয় মুদ্রার সবটাই অপরিবর্তীত রাখা হচ্ছে। মার্চের শেষে এনইসিতে সংশোধিত এডিপি চূড়ান্ত হচ্ছে।
এডিপির কাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে গত সপ্তাহে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক কর্মশালার আয়োজন করে পরিকল্পনা কমিশন ও জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকা। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানসহ কমিশনের জ্যেষ্ঠ সদস্য ও জাইকার প্রধান প্রতিনিধি ইউহু হায়াকাওয়া এতে উপস্থিত ছিলেন।
সবাই এডিপি পুনর্গঠনের পক্ষে মত দেন এবং আগামী অর্থবছরের বাজেট থেকে তা কার্যকরের প্রস্তাব করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এডিপির পুনর্গঠনের প্রস্তাবটি ভালো। এটি কার্যকর হলে বাজেটে সম্পদের সুষ্ঠু বন্টন নিশ্চিত হবে।’