বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

লভ্যাংশই শেয়ারে মূল কথা নয়: রবি

  •    
  • ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২১:০৫

আগের বছরের তুলনায় আটগুণ মুনাফা করলেও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বহুজাতিক মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানি রবি আজিয়াটা লিমিটেড।

মোটা অঙ্কের মুনাফা করেও শেয়ারধারীদের লভ্যাংশ না দেয়ার ঘোষণার পক্ষেই সাফাই গাইল রবি আজিয়াটা লিমিটেড। বহুজাতিক মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বললেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিপরীতে লভ্যাংশই মূল কথা নয়।

মঙ্গলবার রবির আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে অবশ্যই কোম্পানির ফান্ডমেন্টাল দেখা উচিত। আমরা যে পরিমাণ মুনাফা করেছি তাতে পুরোটা দিয়ে দিলেও হতো তিন শতাংশ। এত অল্প লভ্যাংশ দিয়ে বিনিয়োগাকরীদের সন্তুষ্ট করা সম্ভব ছিল না।’

আগের বছরের তুলনায় আট গুণ মুনাফা করেও সোমবার রাতে রবির বোর্ড সভায় সিদ্ধান্ত হয়, শেয়ারধারীদের কোনো মুনাফা দেবেন না তারা। কোম্পানিটির এমন সিদ্ধান্তের কারণ জানতে রাতেই তাদের তলব করে নোটিশ পাঠায় বিএসইসি।

বিএসইসি ভবনে মঙ্গলবার সকালে রবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে তাদের ‘নো ডিভিডেন্ড’ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘মুনাফা সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদান না করা অনাকাঙ্ক্ষিত। এটা বিনিয়োগকারীরা যে প্রত্যাশা নিয়ে রবিতে বিনিয়োগ করেছিল তার সঙ্গে প্রতারণার শামিল।’

বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় তাদের কী ক্ষতিপূরণ দেয়া যায় বা লভ্যাংশের বিকল্প হিসেবে কী প্রদান করা যায় রবিকে তা জানাতে বলা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি কোম্পানিটি।

বিকেলে রবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে আসলেও বিএসইসির প্রস্তাব নিয়ে সদুত্তর দেননি। তিনি বলেন, ‘আমরা বোর্ড সভায় আগ্রহী ছিলাম বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ প্রদান করার। কিন্তু শেষে মুনাফা কোম্পানিতে পুনঃবিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

‘বিএসইসি আমাদের সিদ্ধান্ত অসন্তুষ্ট হয়েছে সেটা তারা জানিয়েছেন। কিন্তু আমাদের শুধু কোম্পানির একটি বছরের দিকে নজর দিলে হবে না।’

মাহতাব উদ্দিন বলেন, ‘লভ্যাংশ প্রদানের নীতিমালা অনুযায়ী বিনিয়োগকারীদের মাঝে মুনাফা বণ্টন করা হলে তা হতো খুই স্বল্প, যা দিয়ে বিনিয়োগকারীদের সন্তুষ্ট করা সম্ভব ছিল না। এমন অবস্থায় লভ্যাংশ ঘোষণা না করে তা পুনঃবিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘লভ্যাংশ না দেয়ার পেছনে দ্বিতীয় আরেকটি কারণ হলো- এই টাকাটা যদি লভ্যাংশ না দিয়ে কোম্পানিতে ব্যবহার করা হয় তাহলে আগামীতে কোম্পানির গ্রোথ বাড়বে। ব্যবসায়ীক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ও কোম্পানির ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি বিবেচনায় কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

সংবাদ সম্মেলনের পরে রবির এক বিবৃতিতে জানানো হয়, শেয়ারবাজারে আসার পূর্বশর্ত হিসেবে ২ শতাংশ ন্যূনতম টার্নওভার কর প্রত্যাহারে ‘সরকার আশ্বাস দিয়েও’ তা কার্যকর না করায় তালিকাভুক্ত টেলিকম অপারেটরদের ওপর প্রযোজ্য ‘৪০ শতাংশ করপোরেট করহারের সুফল থেকে রবি’ বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে ২০২০ সালে রবির কার্যকর করের হার দাঁড়িয়েছে ৭১ দশমিক ৮ শতাংশ।

রবির চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যেও ২০২০ সালে রবি ভালো ব্যবসা করেছে। কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় চার পয়সা থেকে ৮ গুণের বেশি বেড়ে হয়েছে ৩৩ পয়সা। আমাদের রাজস্ব আয়ের উপর প্রযোজ্য সর্বনিম্ম দুই শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স না থাকলে শেয়ার প্রতি আয় হতো ৬৪ পয়সা।’

পুঁজিবাজারে রবি লেনদেন শুরু করে চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি। বিনিয়োগকারীদের রবির শেয়ারের প্রতি অতি আগ্রহের কারণে মাত্র ১৪ কার্যদিবসে ১০ টাকার শেয়ারের দর উঠে ৭৭ টাকায়। বর্তমানে লেনদেন হচ্ছে ৪১ টাকায়।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রবির শেয়ারের দর কয়েকদিনেই অতিমূল্যায়িত হয়েছে। তবে বহুজাতিক কোম্পানি হিসেবে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ছিল কোম্পানিটি ভালো লভ্যাংশ দেবে। এ জন্য বিনিয়োগকারীদের ফান্ডমেন্টাল বিবেচনা করে শেয়ার কেনা উচিত।’

রবির ‘নো ডিভিডেন্ড’ সিদ্ধান্ত তাদের শেয়ারের দরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। রবি বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না, সোমবার বোর্ড সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার পর ফেইসবুকভিত্তিক পেইজগুলোতে শুরু হয় সমালোচনা।

মঙ্গলবার লেনদেনের শুরুতেই তা প্রকাশ পায়। এক দিন আগে যেখানে রবির শেয়ারের দর বেড়েছিল নয় দশমিক ৫২ শতাংশ। সেখানে এক দিন পর দর কমেছে নয় দশমিক ১৩ শতাংশ।

বেড়েছে রবির রাজস্ব

২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে রবির রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়েছে ১ দশমিক ১ শতাংশ। বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে এক হাজার ৯২০ কোটি টাকাসহ এ বছর রবির মোট আয় সাত হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। এই প্রান্তিকের ৩৯ কোটি টাকাসহ ২০২০ সালে রবির কর পরবর্তী মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫৫ কোটি টাকা।

প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রধান বাধা হিসেবে বলা হয়েছে মোট আয়ের ওপর ন্যূনতম ২ শতাংশ কর। সে হিসাবে ২০২০ সালে কার্যকর করের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭১ দশমিক ৮ শতাংশে।

গেল বছরে রবির নতুন গ্রাহক ১৯ লাখ; সক্রিয় গ্রাহক দাঁড়িয়েছে পাঁচ কোটি ৯ লাখে। এর মধ্যে ৬৯ দশমিক ২ শতাংশ গ্রাহক ইন্টারনেট ব্যবহার করে। আগের বছরের তুলনায় ২০২০ সালে রবির ফোরজি গ্রাহক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৭২ দশমিক ৮ শতাংশ।

১০ বছরের জন্য ১১ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম (৯০০ ব্যান্ড ও ১৮০০ ব্যান্ড) নবায়ন করা হয়েছে, যা রবির অগ্রযাত্রায় সহায়তা করবে। তবে ডিডব্লিউডিএম সরঞ্জাম ব্যবহারের অনুমতির না থাকায় কয়েক হাজার কিলোমিটার ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারছে না রবি।

এ বিভাগের আরো খবর