গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পিলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলেছে, দেশের অর্থনীতিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। করোনার মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্থনীতির পুনরুদ্ধার ভালো হয়েছে। আবার কিছু খাতে সমস্যা বেড়েছে। বিশেষ করে বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দাঁড়ালেও ক্ষুদ্র অতি ক্ষুদ্ররা সংকটে এখনও।
সোমবার চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) অর্থনীতির পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা উঠে এসেছে গবেষকদের কাছ থেকে।
সংস্থাটি মনে করে, করোনা মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সরকারি ব্যয় বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে ঋণ করে হলেও এই ব্যয় বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে সিপিডি বলেছে, এই ঋণ আনতে হবে বিদেশি উৎস থেকে।
নতুন কর্মসংস্থান ও অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এসএমই খাতের জন্য নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি।
প্রতি ছয় মাস পর পর অর্থনীতির প্রধান সূচকের অবস্থান নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিপিডি। এতে করণীয় বিষয় ও কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সিপিডির জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান।
অনলাইনে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকারের ব্যয় ও মুদ্রা সরবরাহ বাড়লে পণ্য ও সেবার চাহিদাও বাড়বে। আবার সরকার ব্যয় না করলে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ উৎসাহিত হবে না। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়বে না। কর্মসংস্থানও চাঙা হবে না।
এ জন্য সিপিডির পক্ষ থেকে বিদেশি ঋণ বেশি ব্যবহারের সুপারিশ করা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরও ঋণ নিয়ে হলেও ব্যয় করতে হবে। এসএমই খাতের জন্য নতুন করে প্রণোদনা প্যাকেজ দিতে হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ করোনা ভালোভাবে মোকাবিলা করেছে। কৃষি, রেমিট্যান্স ও তৈরি পোশাক রপ্তানি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে রাজস্ব সংগ্রহ, প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে মানুষের ভোগ-ব্যয় বাড়ানোর ক্ষমতা যাতে তৈরি হয়, সে ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিনিয়োগ বাড়ানো ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন এখন জরুরি।
সিপিডির জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, দেখা যাচ্ছে করোনাপরবর্তী বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ক্ষুদ্র, অতি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে সমস্যা এখনও রয়েছে।
তিনি বলেন, মহামারির প্রভাব মোকাবিলায় সারা বিশ্বে সরকারগুলো ব্যয় বাড়াচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে ব্যয় সম্প্রসারণের পরিবর্তে সংকোচন করা হচ্ছে। অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া জোরদার করতে হলে সরকারি ব্যয় আরও বাড়ানো দরকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। মেগা প্রকল্পে বরাদ্দের ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ ব্যয় হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে খরচ কমেছে ১৫ শতাংশ।
আলোচ্য অর্থবছরের প্রথম প্রথম ছয় মাসে রাজস্ব সংগ্রহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি হয়েছে। এই সময়ে সরকারের ব্যয় ১৩ শতাংশ কমেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে শিল্পোৎপাদন বেড়েছে। রপ্তানিও কিছুটা ইতিবাচক। শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে রেমিট্যান্স। আবার আমদানি কমে যাওয়ায় লেনদেনের ভারসাম্য ইতিবাচক। সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ নেতিবাচক। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে।
ড. তৌফিক বলেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা শক্তিশালী হয়েছে। ফলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে সমানভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে না।