তালিকাভুক্ত কোম্পানি লভ্যাংশ হিসেবে বোনাস ও রাইট শেয়ার দিলে রেকর্ড ডেটের পর ফ্লোর প্রাইসও সমন্বয় হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে একটি নির্দিষ্ট দরের নিচে দর নামতে পারবে না বলে ঠিক করে দেয় বিএসইসি। এটি পরিচিতি পায় ফ্লোর প্রাইস হিসেবে।
প্রতিটি শেয়ারের এই দর নির্দিষ্ট করে দেয়া হয় সে সময়। তবে এই দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোম্পানির মৌলভিত্তি বা আয়, সম্পদমূল্য কিছুই বিবেচনা করা হয়নি। কেবল নির্ধারণের আগের পাঁচ কার্যদিবসে শেয়ারের গড় মূল্য বিবেচনায় আনা হয়।
সে সময় এই বিষয়টি প্রশংসিত হলেও পরে নানা সমস্যাও দেখা যাচ্ছে।
মুন্নু এগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারিজ ১০ শতাংশ বোনাস এবং ন্যাশনাল পলিমার ১০০ শতাংশ (একটির বিপরীতে একটি) রাইট শেয়ার দেয়ার পরেও ফ্লোর প্রাইস সমন্বয় হয়নি।
সম্প্রতি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি ২০০ শতাংশ, অর্থাৱ একটি শেয়ারের বিপরীতে দুটি শেয়ার বোনাস হিসেবে দেয়ার পর এর ফ্লোর প্রাইস কত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এই কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস ঠিক করা আছে ৯০৭ টাকা ৬০ পয়সা। আগামী ৩ মার্চ রেকর্ড ডেটের পরে একটি শেয়ারধারীরা যখন তিনটি শেয়ারের মালিক হবেন, তখন এই তিনটি শেয়ারের দাম দাঁড়াত ২ হাজার ৭২২ টাকা ৮০ পয়সা। কিন্তু এর বাজার দর এখন দেড় হাজার টাকার কিছু বেশি। অর্থাৎ কেবল ফ্লোর প্রাইসের কারণেই এই কোম্পানির শেয়ারধারীরা শেয়ারপ্রতি প্রায় ১২০০ টাকা বেশি মুনাফা পেয়ে যেতেন।
ফ্লোর প্রাইসের কারণে পতনমুখী বাজারে বিনিয়োগকারীদের পুঁজি রক্ষা হচ্ছে সত্য, তবে এই দাম যে বিনিয়োগকারীদের কাছে যৌক্তিক মনে হচ্ছে না, সেটিও স্পষ্ট। ৮০টিরও বেশি কোম্পানির শেয়ার ফ্লোর প্রাইসে কেনাবেচা হচ্ছে খুবই কম। বিক্রয়ের অর্ডার দিলেও এই দামে কিনছেন না বিনিয়োগকারীরা।
এই পরিস্থিতিতে সোমবার বিএসইসি ৭৬১তম সভায় ফ্লোর প্রাইসসংক্রান্ত নতুন সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়।
সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ঘোষিত বোনাস বা রাইট শেয়ারের রেকর্ড ডেটের পরবর্তী সর্বনিম্ন দরকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সংশোধিত ফ্লোর প্রাইস হিসাবে বিবেচনা করা হবে।
তবে এই নীতিমালা বাস্তবায়নের আগে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুনাফা পেয়ে যাওয়া মুন্নু এগ্রো ও ন্যাশনাল পলিমারের ফ্লোর প্রাইসের ক্ষেত্রে কী সিদ্ধান্ত হবে, সেই বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি ২০০ শতাংশ বোনাস শেয়ার ঘোষণার পর নিউজবাংলায় বিএটিবিসির শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস কত হবে শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়।
বিএটিবিসির বিনিয়োগকারীরা কি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ মুনাফা হিসেবে পেয়ে যাবেন? এমন প্রশ্নে সে সময় বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, 'ফ্লোর প্রাইস পুঁজিবাজারের কোম্পানিগুলোকে ক্রমাগত পতন থেকে রক্ষার জন্য করা হয়েছে। তবে এটি পরিবর্তন হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেখি লভ্যাংশ ঘোষণার পর সমন্বয় করা দর যদি ফ্লোর প্রাইসের চেয়ে কম হয়, তাহলে তা পরিবর্তন হয়ে যাবে। আর বেশি হলে আগের যা আছে তাই থাকবে।’
১২ ফেব্রুয়ারি ওই সংবাদ প্রকাশের পর তিন দিনের মাথায় বিএসইসি নতুন সিদ্ধান্তে এল।
মুন্নুর বড় জরিমানা
কমিশন সভায় মুন্নু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গ করায় কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ প্রত্যেক পরিচালককে (স্বতন্ত্র পরিচালক ব্যতীত) ১ কোটি টাকা করে জারিমানা করা হয়েছে।
কোম্পানির নামে মুন্নু ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন লিমিটেডকে সিকিউরিটিজ আইন ভঙ্গে ১০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।