‘দুই শ রাইফেল, এক শ ওয়াটার গান, পাঁচ শ হেলিকপ্টার……এক লট ডোরেমন, মোটু-পাতলুর গিফট বক্স, মিলান্তি গেইম (পাজল) এক লট, ট্রাক দেড় শ… এগুলা পাঠায় দিয়েন।’
চকবাজারে দোকানের জন্য পণ্য কিনতে এসে এভাবেই অর্ডার করছেন আলতাফ উদ্দিন। তার মতো অনেকেই ব্যস্ত পণ্য কিনতে। ডানে-বামে অসংখ্য খেলনার দোকান। দোকানিরা ব্যস্ত অর্ডার নিতে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং ব্যস্ততম খেলনার বাজার পুরান ঢাকার চকবাজার। বিশেষ করে চকবাজার জামে মসজিদের উল্টো পাশে বাংলাদেশ মনিহারি বণিক সমিতির ১ নম্বর গলি এবং তার উল্টো পাশে ফ্রেন্ডশিপ মার্কেটের নিচতলাজুড়ে রয়েছে প্রায় কয়েক শ খেলনার দোকান।
সাধারণত স্বল্পমূল্যের প্লাস্টিকের খেলনা বিক্রি হয় এখানে। আগে এটি পুরোটাই ছিল আমদানিনির্ভর। কিন্তু এখন একটা বড় অংশ দেশেই তৈরি হচ্ছে। ক্ষুদ্র আকারের এই বাণিজ্য গড়ে উঠেছে পুরান ঢাকা এবং আশপাশের কিছু এলাকায়।
বড় অংশ দেশীয় খেলনা
বিক্রেতারা বলছিলেন, কয়েক বছর আগেও প্লাস্টিকের খেলনার প্রায় পুরোটা আসত চীন থেকে। কিন্তু এখন সেই বাজারে বড় জায়গা দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশে তৈরি খেলনা।
শুরুতে খুব ছোট কিছু খেলনা দিয়ে শুরু হলেও এখন বড় আকারের প্লাস্টিকের খেলনাও তৈরি হচ্ছে বাংলাদেশে।
আনোয়ার টয় ট্রেডার্সের ম্যানেজার রাহুল মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আগে ছোটখাটো সব খেলনা আমরা আনতাম বন্দর থিকা। ওই বিদেশ থিকাই আসত। সব খরচ মিলায় যে গাড়িটা ৮০ টাকায় বেচতাম, এখন সেটা ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বেচতে পারতেছি। কারণ সবই এখন দেশি। বড় বড় হেলিকপ্টারগুলাও দেশে বানাইতেছে এখন। দাম কম, তাই নিতেছেও বেশি।’
বাংলাদেশ টয় মার্চেন্টস, ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহজাহান মজুমদার জানান, কয়েক বছর আগেও বছরে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার খেলনাসামগ্রী আমদানি হতো। বর্তমানে ৮০ শতাংশ উৎপাদন দেশেই হয়।
বাংলাদেশ মনিহারি বণিক সমিতির এক নম্বর গলিতে ডান-বাম মিলিয়ে প্রায় ৬০টি দোকান।
রাফসান টয় ঘরের মালিক নিজাম উদ্দীন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সর্বনিম্ন ৫ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত নানা ধরনের খেলনা বিক্রি হয় এখানে।’
বেশি বিক্রি পাজল, এরপর ছেলেদের খেলনা
পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল সেট কিংবা বন্দুক, গাড়িঘোড়ার চেয়ে পাজল খেলনাগুলোর কদর বেশি বলে জানান বিক্রেতারা।
তাদের মতে, পাজল গেইমগুলো শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে সহায়ক বলেই এটির বিক্রি বেশি।
নারায়ণগঞ্জের রাব্বি ট্রেডার্সের সেলসম্যান আরিফ মিয়া খেলনা কিনতে এসেছেন চকবাজারে। কোন ধরনের খেলনা নিচ্ছেন বেশি, জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘ছেলেদের খেলনাই বেশি বিক্রি হয়। গাড়িটাড়িই কিনে বেশি। পুতুল, পাতিল তেমন একটা না।’
শনির আখড়ার তোতা মিয়া এসেছেন তার দোকানের জন্য পণ্য নিতে। তিনি বলেন, ‘সবই চলে। কিন্তু মিলান্তি গেইম (পাজল) বেশি চলে। একদম ছোট আবার মাঝারি সব বাচ্চাদের জন্য বাবা-মায়েরা মিলান্তি জিনিস কিনতে আসে।’
পাইকারি এই বাজারের শ্রমিকনেতা আব্দুল আলিমও একই কথা বলেন। তিনি জানান, এই বাজারে এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে পাজল গেইম।
এখানকার পাইকারি দোকানদারদের সাথে কথা বলেও একই তথ্য পাওয়া যায়।
করোনায় জমজমাট খেলনার বাজার
করোনা যখন সবকিছুকে গতিহীন করে দিয়েছে, তখন জমে উঠেছে খেলনার বাজার। চলতি বছর বৈশাখী মেলা না হওয়ায় বিক্রেতাদের যখন মাথায় হাত পড়েছিল, তখন আবার হুট করে জমে ওঠে খেলনার বাজার।
ফ্রেন্ডশিপ মার্কেটের নিচতলায় দেশি-বিদেশি মিলিয়ে প্রায় ৪০টি দোকান।
জয়তী খেলনা ঘরের মালিক ওবায়দুল্লাহ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘খেলনা বানানো, বিক্রি সব হয় উৎসবকে কেন্দ্র করে। এই ধরেন বৈশাখী মেলা। গ্রাম থেকেও কাস্টমার আসে। এক মেলাতেই অর্ধেক বছরের বিক্রি হয়ে যায়। এবার করোনার জন্য মেলা হয়নি। আমাদের ধরেন মাথায় হাত পড়ে গেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত যে বিক্রি হয়ছে, তাতে সেটা ফিল-আপ হয়ে গেছে। সাধারণ সময়ে এত বিক্রি হয় নাই, যা এখন হচ্ছে।’
এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘প্রথম দিকে ধরেন, সবাই বাসায় বন্দি। বাচ্চাদের ব্যস্ত রাখার জন্য তাই খেলনা দিতে হচ্ছে। কিছু বাচ্চা তো আছে খেলনা ছাড়া খায় না, ঘুমায় না।’
বাংলাদেশ টয় মার্চেন্টস, ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহজাহান মজুমদার বলেন, ‘মেলায় বিক্রি হয়নি। তাতে লসের দিক থাকলেও করোনার কারণেই বিক্রি আসলে বাড়ছে।’