বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

মসলার দ্বিগুণ দাম নিচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীরা

  •    
  • ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ২০:৪৯

খুচরা বাজারে দাম বেশি হওয়া প্রসঙ্গে পাইকারী ব্যবসায়ীরা দুটি কারণের কথা বলছেন। প্রথমত, খুচরা বিক্রেতারা দুই তিন কেজি মসলা কিনে নিলে মাসভর বিক্রি করেও শেষ করতে পারেন না, যা পাইকারিতে প্রতিদিন বিক্রি হয় কেজি-কেজিতে। দ্বিতীয়ত, প্রশাসনের নজর থাকে পাইকারি দোকানগুলোতে। খুচরা পর্যায়ে এর মনিটরিং হয় না বললেই চলে।

খাবার মুখরোচক করতে গরম মসলার জুড়ি নেই। তবে তাতে ভোজনরসিকদের গুণতে হয় চড়া দাম। আমদানিনির্ভর হওয়ার কারণে সাধারণত দেশে সব ধরনের মসলার দাম আকাশছোঁয়া। তাই ভোক্তা পর্যায়ে এর প্রয়োজন বেশি হলেও কেনা হয় খুব হিসাব করে এবং কম পরিমাণে।

তবে দেশে মসলার দাম এখন গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। সেই দাম আরও কমে যায় রাজধানীর মৌলভীবাজারের পাইকারি মার্কেটে ঢুঁ মারলে!

এলাচ, লবঙ্গ, দারুচিনি, জিরা, জয়ত্রী, জয়ফল, কাজুবাদাম, আখরোট, কিসমিস, আলু বোখারা ইত্যাদি রন্ধনকর্মে গরম মসলা হিসাবে পরিচিতি।

খুচরাবাজারে এখন প্রতি কেজি এলাচের দাম মানভেদে ৩৬শ থেকে ৪ হাজার টাকা। স্থানভেদে এটা কোথাও কোথাও ৫ হাজার টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু মৌলভীবাজারে পুরো এক কেজি মসলাই আপনি কিনে আনতে পারেন ২০০০-২২০০ টাকার মধ্যে, যা আপনার সারা বছরের চাহিদা মেটাবে।

মৌলভীবাজার মসলা ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা যায়, এখানে আড়াই শতাধিক মসলার দোকান রয়েছে। এর মধ্যে শতাধিক খুচরা দোকান এবং ২০টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। বাকিগুলো পাইকারি বিক্রেতা।

মসলার আরেকটি বড় আমদানিকারক বাজার হচ্ছে চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ। সেখানেও রয়েছে প্রায় ৪০টি বড় আমদানিকারক এবং শতাধিক পাইকারি দোকান। এ দুই বাজারে প্রতিদিন প্রায় ১৫-২০ কোটি টাকার মসলা কেনাবেচা হয়।

মসলার মধ্যে সবচেয়ে দামি হচ্ছে এলাচ। এটি সাধারণত আমদানি হয়ে থাকে গুয়েতেমালা ও ভারত থেকে। লবঙ্গ আসে ইন্দোনেশিয়া ও মাদারগাস্কার থেকে। চীন ও ভিয়েতনাম থেকে আসে দারুচিনি। এ ছাড়া জয়ফল ও জয়ত্রী আসে শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়া থেকে। আর ভারত, আফ্রিকা, সিরিয়া ও তুরস্ক থেকে আমদানি হয় জিরা।

পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি কাজুবাদাম বিক্রি হয় ৭০০ থেকে ৮৮০ টাকায়। ছবি: সাইফুল ইসলাম

মৌলভীবাজার মসলার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হেদায়েত অ্যান্ড ব্রাদার্সের তথ্য অনুযায়ী এলাচের বিভিন্ন জাত ও মানভেদে দাম ভিন্ন। সাধারণত চার ধরনের এলাচ পাওয়া যায়। আমদানিকারক থেকে পাইকারি পর্যায়ে মানভেদে এ এলাচের সর্বনিম্ন হাতবদল দাম হচ্ছে মাত্র এক হাজার ৯৮০ টাকায়। এর থেকে আরও উন্নতমানের প্রতিকেজি এলাচ বিক্রি হয় যথাক্রমে দুই হাজার ১০০ টাকা, দুই হাজার ১৮০ টাকা ও দুই হাজার ২৫০ টাকায়।

এই আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি করে ৫৩০ টাকা, দারুচিনি ৩১৫ টাকা, ১০ কেজি প্যাকের প্রতি কেজি পাটনা জিরা ২৬০ টাকা এবং ইরানি ৩৬০ টাকা, জয়ফল ৫০০ টাকা, জয়ত্রী দুই হাজার ১০০ টাকা, আখরোট মানভেদে ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকা এবং কাজুবাদাম ৭০০ থেকে ৮৮০ টাকায়।

এ প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসাবে তারা যে দামে মসলা সরবরাহ দেন, পাইকারি বিক্রেতারা সেই দাম থেকে কেজিপ্রতি কয়েক টাকা লাভ রেখে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন।’

পাইকারি মসলা বিক্রেতা কামরুজ্জামান জানান, তার দোকানে মানভেদে এলাচের পাইকারি দাম হচ্ছে দুই হাজার ২০০ টাকা থেকে দুই হাজার ৪০০ টাকা, দারুচিনি ৩২০ টাকা, লবঙ্গ ৫৮০ টাকা, জয়ত্রী দুই হাজার ১৫০ টাকা, জয়ফল ৫৫০-৬০০ টাকা, কিসমিস ২২০-২৫০ টাকা, আখরোট এক হাজার ৫০ টাকা এবং কাজুবাদাম ৬২০ টাকা।

মানভেদে কেজিপ্রতি সামান্য কয়েক টাকা হেরফের ছাড়া মৌলভীবাজারের অন্যান্য পাইকারি দোকানগুলোতেও মোটাদাগে গরম মসলার দাম একই।

সাথী এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা মো. সবুজ জানান, ‘মসলার বাজার ভাল না। প্রতিটি মসলার পাইকারি দাম প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। তা সত্বেও আগের তুলনায় বিক্রি এখনও ৬০-৭০ ভাগ কম হচ্ছে।’

মসলার দাম কমে যাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পাইকারী মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী এনায়েত উল্লাহ নিউজবাংলাকে জানান, উৎপাদনকারী দেশগুলোতে গত বছর মসলার ভাল ফলন হয়েছে। তবে করোনার প্রভাবে চাহিদা হ্রাস এবং সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় রপ্তানিকারক দেশগুলোতে সেই ফলনের অনেকটা এখনও উদ্বৃত্ত। তা ছাড়া মসলার নতুন উৎপাদন মৌসুমও ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ফলে বিশ্ববাজারে মসলার সরবরাহ ব্যাপক বেড়েছে। সেই তুলনায় আমদানিকারক দেশগুলো থেকে মসলার চাহিদাপত্র খুব একটা যাচ্ছে না।

পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, মসলার খুচরা বাজারে মনিটরিং নেই প্রশাসনের। ছবি: সাইফুল ইসলাম

তিনি জানান, মসলার মাত্র ৪০ শতাংশ ভোগ করে সাধারণ ক্রেতা। বাকি ৬০ ভাগের ভোগ হয়ে থাকে সাধারণত বিয়েশাদি, জন্মদিন, পিকনিকসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে। এ ছাড়া রেস্তোরাঁগুলোতে মসলার বড় চাহিদা থাকে। করোনার কারণে সামাজিক উৎসবে ভাটা পড়েছে। একই কারণে মানুষ এখন বাইরের খাবারের চেয়ে ঘরের খাবারই বেশি পছন্দ করছে। ফলে মসলার বাজারে স্থানীয় চাহিদার বড় ধরনের পতন ঘটেছে।

মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আরও দাবি করেন, গত বছরের তুলনায় এবার মসলার দাম প্রায় ৩৫-৪০ শতাংশ কম। আর খুচরা পর্যায়ে এখন মসলার যে দাম, মৌলভীবাজারে পাইকারি দাম তার প্রায় অর্ধেক। আগামী উৎপাদন মৌসুম পর্যন্ত এই কমতি দামের প্রভাব দেশীয় বাজারে থাকবে।

খুচরা বাজারে দাম বেশি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর দুইটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, খুচরা বিক্রেতারা দুই তিন কেজি মসলা কিনে নিলে মাসভর বিক্রি করেও শেষ করতে পারেন না, যা পাইকারিতে প্রতিদিন বিক্রি হয় কেজি-কেজিতে। দ্বিতীয়ত, প্রশাসনের নজর থাকে পাইকারি দোকানগুলোতে। খুচরা পর্যায়ে এর মনিটরিং হয় না বললেই চলে।

এ বিভাগের আরো খবর