পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির অবণ্টিত লভ্যাংশ দিয়ে বিনিয়োগকারী সুরক্ষা তহবিল গঠনের উদ্যোগের বিরোধিতা করছে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সমিতি বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেট কোম্পানি-বিএপিএলসি।
এই প্রতিষ্ঠানটি মনে করে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার সুযোগ নেই কোম্পানি আইনে। মুনাফা অবণ্টিত হলেও সেটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা অন্য কারও ব্যবহারের সুযোগ নেই।
তালিকাভুক্ত কোম্পানি প্রতি বছর যে লভ্যাংশ ঘোষণা করে, তার একটি অংশ কখনও বিনিয়োগকারীদের কাছে যায় না। বহু বিনিয়োগকারী শেয়ার রেখে বিও হিসাব নবায়নে ফি দেন না। ফলে হিসাবগুলো স্থগিত হয়ে যায়। আবার অনেক সময় তারা ঠিকানা নবায়ন করেন না। ফলে যারা ডিভিডেন্ট ওয়ারেন্ট পাঠিয়ে লভ্যাংশ দেয়, সেগুলো ফেরত চলে আসে।
সম্প্রতি বিএসইসি হিসাব করে এমন অবণ্টিত লভ্যাংশ পেয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। বাজারে তারল্য বাড়াতে এই লভ্যাংশ দিয়ে একটি তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ঠিক হয়েছে, এই তহবিল ব্যবস্থাপনায় থাকবে বিনিয়োগে সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিবি।
তবে বুধবার বিএপিএলসির চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবের অনেক কিছুই বাস্তবসম্মত নয়।
এতে বলা হয়, কোম্পানির অনুমোদিত লভ্যাংশ তিন মাসের মধ্যে বণ্টন করা হয়। এই সময়ে বণ্টন করা সম্ভব না হলে তা আলাদা হিসাবে জমা রাখা হয়। বিনিয়োগকারীরা যখন চাইবে কোম্পানি তখনই তা বণ্টন করতে বাধ্য। তাই কোম্পানির অবণ্টিত লভ্যাংশ নিজেদের কাছে রাখতে হবে।
কমিশন এখনও কোনো তহবিল গঠন করেনি উল্লেখ করে বিএপিএলসি আরও বলেস, ‘ওই ফান্ডের কার্যকারিতা কী হবে তা স্পষ্ট নয়। কোম্পানি আইনেও এ বিষয়ে কিছু বলা নেই।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চিঠি এসেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তারাই এটি নিয়ে কাজ করবে।’
লভ্যাংশ বিতরণ বিষয়ে নির্দেশনায় আপত্তি
সম্প্রতি বিএসইসি এক চিঠিতে কোম্পানিগুলোকে লভ্যাংশ ঘোষণার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে অর্থ আলাদা হিসাবে রাখতে বলা হয়েছে।
এই নির্দেশনার বিষয়ে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, বোর্ড মিটিংয়ে ঘোষণা করা লভ্যাংশের প্রস্তাব চূড়ান্ত নয়। বার্ষিক সাধারণ সভায়-এজিএম তা চূড়ান্ত হয়।
সাধারণ সভায় বোর্ড সভায় প্রস্তাবিত লভ্যাংশ বাড়তে বা কমতে পারে। এ জন্য এজিএমের ১০ দিনের মধ্যে অনুমোদিত লভ্যাংশ আলাদা হিসাবে জমা রাখা হবে।
বার্ষিক সাধারণ সভা করতে ৯০ দিন সময় পাওয়া যায় জানিয়ে বিএপিএলসি বলছে, এত দিন টাকা আটকে রাখলে কোম্পানিগুলো মূলধন স্বল্পতায় ভুগবে। এতে কোম্পানির আয় কমবে, যা প্রকারান্তরে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি করবে।
বিএসইসি বোনাস লভ্যাংশ দেয়ার ক্ষেত্রে যে নীতিমালা করেছে, তারও বিরোধিতা করেছেবিএপিএলসি।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, বোনাস লভ্যাংশ দিতে হলে এখন থেকে স্টক এক্সচেঞ্জ ও সিডিবিএল-এর অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
কিন্তু তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো বলছে, এতে তাদের ভোগান্তি বাড়বে।
বর্তমানে কোন বিনিয়োগকারী কোন কোম্পানির লভ্যাংশ পাবে তা সেন্টাল ডিপোজেটরি অব বাংলাদেশ- সিডিবিএল থেকে সংগ্রহ করে কোম্পানিগুলো। বিনিয়োগকারীদের নাম, ব্যাংক হিসাব, ঠিকানাসহ অন্যান্য তথ্য সময় সময় আপডেট করে ব্রোকার হাউজগুলো।
কিন্ত কমিশন বলছে বিনিয়োগকারীদের তথ্য আপডেট করবে ইস্যুয়ার কোম্পানি। এবং ইস্যুয়ার কোম্পানি তৃতীয় পক্ষ কাউকে নিয়োগ দিয়ে তা বাস্তবায়ন করবে।
চিঠিতে সংগঠনটি বলছে, বিনিয়োগকারীদের তথ্য সংরক্ষণ ইস্যুয়ার কোম্পানির কাজ নয়। কারণ বিনিয়োগকারীরা একেক সময় একেক কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেন। কখন কোন বিনিয়োগকারী কোথায় বিনিয়োগ করছে তা জানা সম্ভব নয়। তাই পূর্বে যেভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে তাই বহাল রাখার কথা জানানো হয়েছে।
বিএপিএলসি সেক্রেটারি জেনারেল আমজাদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের যে সব বিষয়ে অসঙ্গতি মনে হয়েছে সেসব বিষয়গুলো কমিশনের কাছে জানানো হয়েছে। আমরা আশা করি কমিশন বিষয়গুলো বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।’