দেশে ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। বিদ্যুৎ সংযোগ, ব্যাংক ঋণ, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সসহ ১০টি সূচকের মধ্যে অন্তত সাতটিতে অগ্রগতি হয়েছে বলে জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনে বিডা আয়োজিত ব্যবসা সহজীকরণ সূচক বিষয়ক এক কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
কর্মশালায় বিডা জানায়, নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনে বর্তমানে লাগছে ১৩ দিন, যেখানে আগে সময় লাগত ৩০ থেকে ৫০ দিন। ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন, যেমন, ব্যাংক কেম্পানি এবং দেউলিয়া আইন সংশোধন করা হয়েছে। শিল্পকারখানা স্থাপনে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি আমদানির সময় ও খরচ কমানো হয়েছে।
আমদানি বাণিজ্যে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ও পরিদর্শনে যেখানে আগে সময় লাগত ২১৬ ঘণ্টা, এখন তা কমিয়ে ৭২ ঘণ্টা করা হয়েছে। পণ্য খালাসে কাস্টমস প্রক্রিয়ায় ব্যয় ৯০০ ডলার থেকে কমে ১৮০ ডলার হয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষায় অনেক পরিবর্তন আনা হয়েছে। শেয়ারহোল্ডারদে অনুমতি ছাড়া তালিকভুক্ত কোম্পানির ৫০ শতাংশের বেশি সম্পদ বিক্রির চুক্তি করা যাবে না। বিডা বলেছে, যারা এ নিয়ম মানবে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ও দুই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
এ ছাড়া কোম্পানির পাঁচ শতাংশ শেয়ারধারীর এজিএমের আলোচ্যসূচি দেয়ার সুযোগ দিয়ে কোম্পানি আইন সংশোধন করা হয়েছে। এ আইনে কোম্পানির সাধারণ সভা আহ্বানের সময় ১৪ দিন থেকে বাড়িয়ে ২১ দিন করা হয়েছে।
তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিতে কমিয়ে আনা হয়েছে খরচ ও সময়। আগে পোশাক পণ্য রপ্তানিতে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স ও পরিদর্শনে খরচ হতো ৪০৮ ডলার। এখন তা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ ডলার। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে আগে ৬৮ দিন সময় লাগলেও এখন ৩৬ ঘণ্টায় তা করা যায়।
বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রের জন্য যন্ত্রপাতি, পরীক্ষা, স্থাপন ইত্যাদির জন্য আগে ১৮ লাখ টাকা ব্যয় হতো। এই খরচ এখন ১২ লাখে নেমে এসেছে।
ঢাকায় আন্ডারগ্রাউন্ড তারের সংযোগের অনুমতির জন্য ২১ দিনের পরিবর্তে তিন দিনে নামিয়ে আনা হয়। এ ছাড়া মিটার পরীক্ষা ও স্থাপনার চূড়ান্ত পরিদর্শনের জন্য ২০ দিনের পরিবর্তে দুই দিন করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যবসা সহজীকরণে উন্নতি হলেও আত্মতুষ্টির কারণ নেই। আরও ভালো করতে হবে। এ জন্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে বাকি সমস্যাগুলোর সমাধানের করা হবে।’
বিডার নির্বাহী সদস্য বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘ডুয়িং বিজনেস ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে ব্যবসা সহজীকরণে আট ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯০টি দেশের মধ্যে ১৬৮তম। এটি আগামীতে দুই অঙ্কের ঘরে আসবে।’
অনুষ্ঠানে বিডার পরিচালক জীবনকৃষ্ণ সাহা পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বর্তমান অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরেন।
কর্মশালায় বিডার মহাপরিচালক ওয়াহিলুদ ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন। অন্যদের মধ্যে বিডার নির্বাহী সদস্য সাইফুল্লাহ মকবুল মোর্শেদ, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবুল খায়ের মো. আমিনুর রহমান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য জাফর আলম বক্তব্য রাখেন।