প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হলে কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) খাতে সরকারের আলাদাভাবে মনোযোগ দরকার বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অনারারি প্রফেসর ড. মমতাজ উদ্দীন আহমেদ।
সোমবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে এই খাতের উন্নয়নে আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন করারও প্রস্তাব দেন তিনি। এ ছাড়া হস্তশিল্পকে কটেজ (কুটির) খাতে অন্তর্ভুক্তকরণের এবং এসএমই খাতে ভারতের এসআইডিবিআই বা মুদ্রা ব্যাংকের মতো আলাদা ব্যাংক গঠন করার প্রস্তাবও দেন তিনি।
বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট (বিল্ড) এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এসএমই ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্কিং কমিটির সপ্তম বৈঠকে বক্তব্য রাখছিলেন ড. মমতাজ উদ্দীন আহমেদ।
তিনি বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) খাতের অবদান সর্বোচ্চ। অথচ শুধু নীতিসহায়তার ঘাটতির কারণে জিডিপিতে এ খাতের অবদানকে হিসাবের আওতায় আনা যাচ্ছে না। এতো দিন সম্ভব না হলেও এখন সময় এসেছে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিল রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের।
বৈঠকে কমিটির কো-চেয়ার শিল্পসচিব কে এম আলী আজম এবং চিটাগং চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সিসিসিআই) প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম, বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. সেলিম উদ্দীন, ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) পরিচালক রাশেদুল করিম মুন্না, ডব্লিউইএনডির প্রেসিডেন্ট ড. নাদিয়া বিনতে আমিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমইএসপিডির ডিজিএম রোজিনা আখতার মুস্তাফি ও প্রিজমের টিম লিডার আলি সাবেত অংশ নেন।
বৈঠকে বিল্ড কর্তৃক ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসি ২০১৬ অ্যান্ড সাপোর্ট ফর সিএমএসএমইস ইন বাংলাদেশ’ এবং ‘রিভিজিটিং দ্য অ্যাকশন প্ল্যান অফ এসএমই পলিসি ২০১৯ টু অ্যাড্রেস কভিড-১৯ সিচুয়েশন’ শীর্ষক দুটি পলিসি নোট উপস্থাপন করা হয়। এসব উপস্থাপনায় ইন্ডাস্ট্রি ক্যাটেগরির সংজ্ঞায় পরিবর্তন এবং এসএমই পলিসি ২০১৯ প্রণয়নে কর্মপরিকল্পনা পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব করা হয়।
বিল্ডের উপস্থাপনায় আরও বলা হয়, কটেজ খাত হলো ধরন বা অবস্থানগত ইস্যু, এর সঙ্গে ব্যবসার আকারের সম্পর্ক নেই। এ প্রতিষ্ঠানগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত নয়। এ খাতটিকে ব্যবসার আকার থেকে আলাদা করতে হবে এবং মাইক্রো খাত হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। কটেজ ও মাইক্রো খাতে যেহেতু ট্রেডিংয়ের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি, তাই এ খাতের জন্য একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ জরুরি। এখানে ট্যাক্স সংক্রান্ত ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ। তাই একক ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নতুন কোম্পানি আইনের বিধিমালাকে বিবেচনায় নিতে হবে।
বিল্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা বেগম বৈঠকে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর উদাহরণ টেনে বলেন, সারা বিশ্বে এমএসএমই ক্যাটেগরি ব্যবহৃত হলেও একমাত্র বাংলাদেশেই সিএমএসএমই ক্যাটেগরি ব্যবহৃত হয়।
তিনি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্যাটেগরিগুলোর পৃথক প্রকৃতির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে সিএমএসএমই এবং মাঝারি ও বৃহৎ খাতকে আলাদাভাবে বিবেচনার আহ্বান জানান।
সিসিসিআই প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, আগামী শিল্পনীতি ও এসএমই পলিসিতে এ খাতের বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করা জরুরি।
তিনি বলেন, নারী উদ্যোক্তারা তহবিল পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। যেহেতু তাদের স্বল্প তহবিলের প্রয়োজন হয়, সুতরাং তাদেরই সবচেয়ে বেশি প্রক্রিয়াগত জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়। গ্যারান্টরের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বেশির ভাগ সময় নারীদের স্বামী আছে কি না জানতে চান। এসএমইএসপিডি সার্কুলারে এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো মানে না।
এসব বক্তব্যের জবাবে শিল্পসচিব আলী আজম জানান, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থনীতিতে প্রায় ৮২ শতাংশ অবদান হবে বেসরকারি খাতের এবং ১৮ শতাংশ অবদান হবে সরকারি খাতের; যার কারণে বেসরকারি খাতকে অবশ্যই উন্নয়ন নীতিমালায় যুক্ত করবে সরকার।
তিনি জানান, কটেজ খাত বর্তমানে অস্তিত্বের সংকটের রয়েছে। তাদেরও যথাযথ তত্ত্বাবধান অতীব জরুরি। আগামীতে করণীয় নির্ধারণে চাহিদা অনুযায়ী খাতগুলোকে আলাদাভাবে বিবেচনায় রাখবে সরকার। এ জন্য ট্যাক্স ও কভিড-১৯ সংক্রান্ত ইস্যুগুলোকে জাতীয় শিল্পনীতি ২০২১-এ ভিন্নভাবে যুক্ত করা হবে।