জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গোপসাগরে বিশাল জলরাশিতে সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. গওহর রিজভী।
তিনি বলেছেন, ‘মূলত বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া দিক-নির্দেশনার অনুসরণ করেই আমাদের এই সমুদ্র সীমা বিজয় অর্জিত হয়েছে, যা এসেছে তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে।’
রোববার ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও সুনীল অর্থনীতি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে এ সেমিনার আয়োজন করা হয়।
গওহর রিজভী বলেন, বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী মাত্র চার বছরের প্রচেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী প্রতিবেশীর সঙ্গে সীমানা বিরোধ মিটিয়ে বঙ্গোপসাগরে এক লাখ ১৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সীমাহীন সম্পদের ওপর দেশের একচ্ছত্র মালিকানা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটা অনেক বড় বিষয়, যা গৌরব এবং সম্ভাবনারও। সমুদ্রের এই বিশাল সম্পদকে যথাযথ কাজে লাগাতে পারলে আমরা গরীবী দূর করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এই সমুদ্র সম্পদের গুরুত্ব উপলব্ধি করেছেন অনেক আগেই। এ জন্য তিনি টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মডেল হিসেবে সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা বাস্তবায়নে জাতির সবটুকু সামর্থ্য নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারের সূচনা ঘটিয়েছেন।’
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে সারা পৃথিবী সম্মান করত। একটি দরিদ্রতম দেশের প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা পৃথিবীর যেখানেই গেছেন বাংলাদেশকে আলোকিত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শনের কারণেই আমরা স্বপ্ন দেখছি। আজকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশ, উন্নত দেশে যাব- সেটা বঙ্গবন্ধুর দর্শনকে ধারণ করার কারণেই।’
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সময়ে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ১৯টি জাহাজ নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল, ২০১০ সাল পর্যন্ত জাহাজ ছিল দুটি। অথচ জাহাজ হওয়ার কথা ছিল কয়েকশ। উল্টো পথে চলছে বলেই ১৯টি থেকে দুটি হয়ে গেছে। উল্টো পথে চলেছে বলেই শিপিং করপোরেশন মৃত প্রায় হয়ে গিয়েছিল।’
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় প্রকাশিত সংবাদের নিন্দা করে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করছেন বলেই বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে। ঠিক এই সময়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে।
‘ষড়যন্ত্রটা দেখেন কোন জায়গায়। আমরা সব সময় বলি আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী। যে সেনাবাহিনী শুধু বাংলাদেশের অগ্রগতির ক্ষেত্রে নয়, গোটা দুনিয়ার শান্তির জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সেই সময়ে দেখা যাচ্ছে, সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য আজকে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন বাংলাদেশ সারা দুনিয়ায় একটা সম্মানের জায়গায় চলে গেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন গর্ব করার মতো। বাংলাদেশ যখন সকল প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এই বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ষড়যন্ত্রের ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে।
‘আমাদেরকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। যাতে কোনো ষড়যন্ত্র যেন বাংলাদেশকে আবার অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে না পারে।’
সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশিদ আলম।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহানের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওশেনোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কাউসার আহমেদ এবং নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমডোর আবু জাফর মো. জালালউদ্দিন।
অনুষ্ঠানে মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় প্রকাশিত সংকলন ‘সোনার বাংলায় সুনীল স্বপ্ন’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।