মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) আদায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চালু করেছে আধুনিক প্রযুক্তির মেশিন ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস বা ইএফডি।
রাজধানী ঢাকা শহরের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও চট্টগ্রামে এরই মধ্যে এক হাজার ইএফডি মেশিন বসিয়েছে এনবিআর। আগামী জুনের মধ্যে আরও দশ হাজার মেশিন বসানো হবে।
ক্রেতা যাতে এ মেশিন ব্যবহার করে ভ্যাট প্রদানে উৎসাহিত হন সে লক্ষ্যে লটারির মাধ্যমে পুরস্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
তারই অংশ হিসেব শুক্রবার প্রথমবারের মতো ভ্যাটের লটারির ড্র আয়োজন করেছে এনবিআর। এদিন এনবিআর সম্মেলন কক্ষে বিশেষ সফটওয়ারের মাধ্যমে এ ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রথম পুরস্কার পেয়েছে ঢাকা পূর্ব ভ্যাট জোনোর ইএফডি থেকে তৈরি হওয়া ‘০০০২২২১জিইএমএমডাব্লিউএকে০৩৯’ নম্বর কুপন।
ইএফডি হচ্ছে অত্যাধুনিক হিসাব যন্ত্র। এটি ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার বা ইসিআরের উন্নত সংস্করণ। ইএফডি মেশিন থেকে সংগৃহিত চালান বা রশিদের ওপর ভিত্তি করে লটারি করে ভ্যাট দাতাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম প্রধান অতিথি ছিলেন। এ সময় রাজস্ব বোর্ডের জ্যেষ্ঠ সদস্যসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত জানুয়ারি মাসের ১ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত সারাদেশে স্থাপিত প্রায় এক হাজার ৪৫০টি ইএফডি মেশিনে কেনাকাটার বিল পরিশোধে ১১ লাখ ৭৯ হাজার ১১ কুপন তৈরি হয়। এদের মধ্য থেকে লটারি করে ১০১টি কুপনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
এখন থেকে প্রতি মাসে এরকম লটারি হবে। লটারিতে প্রথম পুরস্কার একটি, এর মূল্যমান এক লাখ টাকা। দ্বিতীয় পুরস্কারও একটি ৫০ হাজার টাকার। তৃতীয় পুরস্কার পাঁচটি, প্রতিটি ২৫ হাজার টাকা করে।
এছাড়া পঞ্চম পুরস্কার ৯৪টি। প্রতিটি ১০ হাজার টাকা করে। পুরস্কারের টাকা আয়কর মুক্ত ঘোষণা করেছে এনবিআর।
এনবিআরের কর্তকর্তারা বলেন, লটারির ড্রর ফলাফল এনবিআরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। যাদের কাছে কুপনগুলো আছে, তাদেরকে যেকোনো কমিশনারেটে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে পুরস্কার প্রাপ্তির আবেদন করতে হবে।
এ ছাড়া পুরস্কার পেতে কোনো সমস্যা হলে ০১৯৬৩৬৩৬৫৫৪ নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম লটারি কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন, ‘খুচরা কেনাকাটায় জনগণ যে ভ্যাট পরিশোধ করছেন, তা সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে কি-না তা নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে অনাস্থা ছিল। এনবিআরের মধ্যেও অস্বস্তি ছিল। এনবিআর নিশ্চিত করতে পারতো না যে জনগণের পরিশোধ করা ভ্যাট সরকার পাচ্ছে। ইএফডি মেশিনের কারণে সেই অনাস্থা কেটে গেছে। এখন সঙ্গে সঙ্গে জানা যাচ্ছে কে কত ভ্যাট পরিশোধ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের কাছে অনুরোধ আপনারা ভ্যাট দিন। এনবিআর আপনাদের ভ্যাট দেয়া সহজ করে দেবে। যত বেশি ভ্যাট আসবে, তত বেশি ভ্যাট হার কমবে। ভ্যাটের লোড কমানো যাবে। পর্যায়ক্রমে ভ্যাট দেয়া কষ্টের বিষয় থেকে আনন্দের বিষয়ে রূপান্তর হবে।’
এনবিআরে সদস্য (আয়কর নীতি) আলমগীর হোসেন জানান, ইএফডির কুপন লটারি করে ক্রেতাকে পুরস্কৃত করা একটি বিশেষ উদ্ভাবন। সেই সঙ্গে ডিজিটাল রাজস্ব ব্যবস্থা গড়ার ক্ষেত্রে এক ধরনের আন্দোলনও বটে। ইএফডি মেশিন বসানো চলছে। আগামী এক বছরে মধ্যে সারা দেশে ৫০ হাজার মেশিন বসানো হবে।
এনবিআরের সদস্য (নীরিক্ষা ও গোয়েন্দা) জাকিয়া সুলতানা বলেন, এখন পর্যন্ত সারা দেশের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এক হাজার ৪৭১টি এএফডি ও সেলস ডাটা কন্ট্রোলার (এসডিসি) মেশিন বসানো হয়েছে।