করোনা মহামারির প্রভাবে ২০২০ সালে বৈশ্বিক প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ –এফডিআই কমার আশঙ্কা আগেই করা হয়েছিল। বছর শেষে সেই আশঙ্কা সত্যিও হয়েছে।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়নবিষয়ক সংস্থা আঙ্কটাডের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২০ সালে বৈশ্বিক এফডিআই কমে দাঁড়িয়েছে ৮৫ হাজার কোটি ডলারে। আগের বছর ২০১৯ সালে এর পরিমাণ ছিল দেড় লাখ কোটি ডলার।
অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বৈশ্বিক এফডিআই প্রবাহ কমেছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। আঙ্কটাড বলেছে, নব্বই দশকের পর এই প্রথম বৈশ্বিক এফডিআই এতটা হ্রাস পেল।
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশেই করোনার টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ২০২১ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতি অনেকটাই আগের চেহারায় ফিরে যাবে। আর এতে এফডিআই প্রবাহ বাড়বে।
আঙ্কটাড মনে করছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে অনিশ্চয়তা এখনো রয়েছে। ফলে এ বছরও প্রত্যাশিত এফডিআই বাড়বে না।
যোগাযোগ করা হলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিআরআইএর নিবার্হী পরিচালক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক কর্মকর্তা ড. আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দেশে দেশে করোনার টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। মানুষের মধ্যে আশা জাগছে। সব কিছু ঠিক থাকলে এ বছরের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াবে বিশ্বঅর্থনীতি। ফলে এফিডিআই বাড়বে।’
বাংলাদেশের অবস্থা কেমন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা বলা মুশকিল। কারণ, বৈশ্বিক এফডিআই বাড়লেই যে বাংলাদেশে বাড়বে তা ঠিক নয়।’
কারণ, বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে অবকাঠামোসহ অন্যান্য যে সব সুযোগ সুবিধা থাকা দরকার দেশে তার ঘাটতি আছে। এফিডিআইয়ের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে হবে। এখানেও আমাদের দুর্বলতা আছে বলে জানান তিনি।
আঙ্কটাডের প্রতিবদনে বলা হয়েছে, নতুন খাতে বিনিয়োগের ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন উদ্যোক্তারা। ফলে চলতি বছর এফডিআই তেমন বাড়বে না।
আঙ্কটাড বলছে, উন্নত দেশগুলোয় যেখানে বিনিয়োগ কমেছে ৪৬ শতাংশ, সেখানে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় কমেছে ১২ শতাংশ।
অর্থাৎ উন্নত দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তুলনামূলক এফডিআই বেশি এসেছিল গত বছর।
২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এফডিআই কমেছে ৪৯ শতাংশ। ইউরোপেও কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যে এফডিআই শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় এফডিআই কমেছে ৩১ শতাংশ।
এই পরিস্থিতিতে আঙ্কটাডের ভাষ্য, চলতি বছর বৈশ্বিক এফডিআই প্রবাহ বৃদ্ধি পেলেও নতুন বিনিয়োগ খুব একটা হবে না।