সামাজিক সুরক্ষার আওতায় মাসিক ভাতার পরিমাণ ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। বর্তমান বাস্তবতায় এই ভাতা খুবই কম বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। গরিব জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারি ভাতা আরও বাড়িয়ে কমপক্ষে এক হাজার টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করেছেন তিনি।
শনিবার রাজধানীতে এক অনলাইন সেমিনারে এ প্রস্তাব করেন মন্ত্রী। 'কোভিড ১৯: সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি ও স্বাস্থ্য অধিকার' শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ -ডিজেএফবি ও বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট –এএসডি যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের- বিআইডিএস সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ।
সেমিনারে জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে মোট ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট বাজেটের ১৭ শতাংশ এবং জিডিপির তিন শতাংশ।
এই বরাদ্দের বড় একটি অংশ চলে যায় সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন ও সঞ্চয়পত্রে মুনাফায় ভতুর্কি বাবদ। ফলে টার্গেট গ্রুপ তথা সুবিধাভোগীদের কাছে এর সুফল কমই পৌঁছায়।
বক্তারা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রভাবে বহু মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে এসেছে। এ অবস্থায়, আগামী বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ আরও বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে যোগ্য ব্যক্তিরা যাতে সরকারি ভাতা ঠিক মতো পান তা নিশ্চিত করতে হবে।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘কোভিডের কারণে দেশে দারিদ্র্য হার বেড়েছে। আমি মনে করি, ভাতার পরিমাণ বাড়ানো দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে কিছু ভুলত্রুটি ছিল। অবশ্য সেটি এখন অনেকটাই কমে এসেছে। জনপ্রতিনিধিরা এখন দরিদ্র মানুষ বাছাইয়ে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করছে।’
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রধান অতিরিক্তি সচিব মফিদুল ইসলাম বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থানে সবচেয় বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।’
অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের অনেক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি থাকলেও বেশিরভাগই গ্রাম কেন্দ্রীক। শহরকেন্দ্রীক কম। সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত।’
মূল প্রবন্ধে ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘কোভিড- ১৯ এর কারণে নতুন করে অসংখ্য মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। তাদেরকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিতে অন্তর্ভূক্ত করা জরুরি। সেটি করতে হলে এই খাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সামাজিক সুরক্ষা খাতে সুশাসনের প্রচন্ড ঘাটতি আছে। যারা যোগ্য নন, তারাও ভাতা পাচ্ছে। সুশাসন নিশ্চিত করতে পৃথক ডাটাবেইস তৈরি করা দরকার।’
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডিজেএফবির সভাপতি হুমায়ুন কবীর, এনজিও সংগঠক শাহ মবিন জিন্নাহ, মমতাজ আরা বেগম, এসএম হারুন আর রশিদ লাল, ড. জাহিদ মাসুদ, শিক্ষক রাবেয়া বিনতে করিম।
চলতি বছর সরকার মোট চারটি কর্মসূচির আওতায় ৮৮ লাখ ৫০ হাজার মানুষের বিপরীতে পাঁচ হাজার ৮৮৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বিতরণ করবে। এর মধ্যে রয়েছে বয়স্কভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী।