বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বাইডেন প্রশাসনের কাছে জিএসপি ফেরত চাইবে বাংলাদেশ

  •    
  • ২৬ জানুয়ারি, ২০২১ ১৯:২৪

জিএসপি ফিরে চাইতে চলতি বছর মার্চে অনুষ্ঠেয় ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট- টিকফার বৈঠকে প্রস্তাবটি জোরেশোরে তুলবে সরকার।

সংশয় থাকলেও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হওয়া জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের কাছে নতুন করে প্রস্তাব রাখবে বাংলাদেশ।

চলতি বছর মার্চে অনুষ্ঠেয় ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট- টিকফার বৈঠকে প্রস্তাবটি জোরেশোরে তুলবে সরকার।

মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ ‘অফিস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ (ইউএসটিআর) কার্যালয়ে বৈঠকটি হবে। বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল বৈঠকে স্থগিত জিএসপি সচল করার পাশাপাশি জিএসপি বহিঃর্ভূত বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত তৈরি পোশাককেও এই সুবিধা অন্তর্ভূক্তির অনুরোধ জানাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বিষয়ক নিয়মিত আলোচনার একমাত্র প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে- টিকফা ফোরাম। প্রতিবছর মার্চের প্রথম সপ্তাহে স্বার্থসংশ্লিষ্ট আলোচনার জন্য দুই দেশের মধ্যে এই বৈঠক হয়। পঞ্চম বৈঠকটি গত বছর ৫ মার্চে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এবার ৬ষ্ঠ বৈঠক যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিআর কার্যালয়ে হওয়ার কথা রয়েছে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রে যেতে না পারলে ভার্চ্যুয়ালি বৈঠক করবে দুই দেশ। এখন টিকফা ফোরামে আলোচনার জন্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে অবস্থানপত্র তৈরি করছে বাংলাদেশ। সেখানে জিএসপির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারসহ তৈরি পোশাককে জিএসপিভুক্ত করাসহ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত ১০-১২টি বিষয় বাংলাদেশ আলোচনার জন্য উপস্থাপন করবে।

স্বল্পোন্নত সব দেশকেই নিজেদের বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘জেনারেলাইজড সিষ্টেম অফ প্রেফারেন্সেস-জিএসপি স্কিম বা অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধার আওতায় শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দিয়ে আসছে। স্বল্পোন্নত হিসেবে বাংলাদেশও এই বাজারে রপ্তানির ৯৭ শতাংশ পণ্যে জিএসপি সুবিধা পেয়ে আসছিল।

অন্য পণ্যে পেলেও তৈরি পোশাকে বাংলাদেশ কখনই জিএসপি সুবিধা পেতো না। আবার দেশটিতে রপ্তানির ৯৭ শতাংশ পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা থাকলেও সক্ষমতার অভাবে বাংলাদেশ তালিকাভুক্ত সংশ্লিষ্ট পণ্যের মধ্যে রপ্তানি করতে পারে খুব সামান্যই, যেখানে শুল্ক সুবিধার আকার মাত্র ০.২৫ শতাংশ। সেটিও স্থগিত হয়ে যায় ২০১২ সালে সাভারে সংঘটিত রানা প্লাজা ট্রাজ্যাডির পর।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের (ইউএসটিআর) ওয়েবসাইটে দেখানো ২০১৯ সালের তথ্যানুযায়ী, দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের গড়ে ৯ বিলিয়ন ডলারের বার্ষিক বাণিজ্য হয়। এর মধ্যে আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশ রপ্তানি করে ৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। যেখানে একক খাত হিসেবে শুধু তৈরি পোশাকই যায় প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের। বাকিটা অন্যান্য পণ্যের।

অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করে ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

জানা গেছে, বিশ্বের শিল্প দুর্ঘটনার ইতিহাসে স্মরণীয় ট্রাজ্যাডির একটি হলো সাভারে রানা প্লাজায় ধস। এই দুর্ঘটনার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী শ্রমিক সংগঠনগুলো এর দায় চাপায় বাংলাদশ সরকার ও উদ্যোক্তাদের ওপর। তারা ইউএসটিআর কার্যালয়ে শ্রম অধিকার ইস্যুতে চরম অবহেলার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা কেড়ে নেয়ার জন্য তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওবামা প্রশাসনের ওপর চাপ দেয়।

তখন ওবামা প্রশাসনের নির্দেশে যতদিন না কর্ম পরিবেশ ও শ্রম অধিকারের উন্নয়ন না হয়, ততদিন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত রাখার আদেশ জারি করে মার্কিন বাণিজ্য বিভাগ।

পাশাপাশি শ্রম পরিস্থিতির উন্নয়নে চাপিয়ে দেয় ১৬ শর্ত। যার তদারকিতে ব্র্যান্ড বায়ারদের দুই জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের বাংলাদেশে অভিষেক হয়। এতে বাংলাদেশের পোশাকখাতে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন হলেও সাত বছরেও মেলেনি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিতের প্রত্যাহার আদেশ।

তা সত্বেও বাংলাদেশ এই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে কখনও মৌখিক এবং কখনও লিখিত এজেন্ডা নিয়ে আগের পাঁচটি টিকফা ফোরামের বৈঠকে অংশ নেয়। কিন্তু বরফ গলেনি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন বা সরকারের কাছে জিএসপি সুবিধা চাওয়ার বিষয়ে সরকারের কোনো পদক্ষেপ আছে কি-না জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন রোববার রাতে নিউজবাংলাকে জানান, নতুন সরকারের কাছে জিএসপি পূণর্বিবেচনার বিষয়টিতে তো বাংলাদেশ আশা রাখতেই পারে। সে ক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও দুই দেশের মধ্যকার আলোচনার প্ল্যাটফর্ম টিকফা মিটিংয়ে জিএসপি ইস্যুতে এবার সর্বাধিক গুরুত্ব দেবে। পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দুই দেশের দূতাবাস পর্যায়ে কূটনৈতিক চেষ্টাও চালিয়ে নেয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘জিএসপি ফিরে পাওয়ার প্রায় সব শর্ত বাংলাদেশ পূরণ করেছে। তারা হয়তো আমাদের শর্ত দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ নিজেদের তাগিদেই পোশাকখাতের সংস্কার ও উন্নতি করেছে। কিছু কাজ চলমান রয়েছে, যা দ্রুত শেষ হবে। ভবিষ্যতে কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকার নিশ্চিতে বাংলাদেশ হবে একটি আদর্শ রাষ্ট্র। আমরা এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি ফিরে পাওয়ার আশা রাখতেই পারি।’

এদিকে জিএসপি ফিরে পাওয়ার ইস্যুতে নতুন করে আলোচনায় আনার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে জানিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, প্রশাসন পরিবর্তন হয়েছে। নতুন সরকার এসেছে। একটি সুযোগ হয়েছেই, তাই সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের উচিত টিকফা ফোরামের আলোচনায় জিএসপি ইস্যুতে অধিক গুরুত্ব দেয়া।

বাংলাদেশের জিএসপি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুক- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পেলাম কী পেলাম না, সে দিকে না গিয়ে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তবে এটাও ঠিক- যে কারণে জিএসপি স্থগিত হলো তার উত্তরণে যেসব শর্ত ছিল, সেগুলো ঠিকঠাকভাবে পূরণ হলো কী হলো না, সেটাই কিন্তু পুণর্বিবেচনার একমাত্র মানদণ্ড।’

সংশয় প্রকাশ করে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আলোচনার নতুন সুযোগ তৈরি হলেও মনে রাখতে হবে, মার্কিন প্রশাসনে রিপাবলিকানদের চেয়ে ডেমোক্রেটিকরা শ্রম ও মানবাধিকার ইস্যুতে খুব রক্ষণশীল। ডেমোক্রেটিক ওবামা প্রশাসন বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিত করেছিল। কিন্তু রিপাবলিকান ট্রাম্প প্রশাসনও যেখানে আমাদের জিএসপি ফিরিয়ে দেয়নি, সেখানে আরেক ডেমোক্রেটিক প্রশাসনের (জো বাইডেন) অভিষেক ঘটেছে, যিনি ওবামার অনেক নীতি আদেশ বাস্তবায়নে জোর দিচ্ছেন, এই পরিস্থিতিতে শর্ত পূরণের মাধ্যমে সন্তুষ্ট করতে না পারলে জিএসপি ফিরে পাওয়ার ভবিষ্যত অন্ধকারেই থেকে যাবে।’

এ বিভাগের আরো খবর