ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে দেশে খেলাপি ঋণগ্রহীতার সংখ্যা তিন লাখ ৩৪ হাজার ৯৮২ জন।
সোমবার জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিলের এক প্রশ্নের জবাবে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত হিসাব তুলে ধরে এ তথ্য জানান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে খেলাপি গ্রাহকের সংখ্যা উল্লেখ করলেও কারও নাম প্রকাশ করেননি তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্যে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা, যা ব্যাংকখাতের মোট বিতরণের প্রায় ৯ শতাংশ।
খেলাপি ঋণের বেশির ভাগ আটকে আছে বড় কয়েকজন ঋণগ্রহিতাদের কাছে।
সম্প্রতি, সোনালী ব্যাংকে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, জনতা ব্যাংকে ক্রিসেন্ট গ্রুপ, অ্যাননটেক্স, বেসিক ব্যাংকের বড় বড় ঋণ জালিয়াতির কারণে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।
২০১৯ সালের মে মাসে দুই শতাংশ ডাউনপেমেন্ট দিয়ে বিশেষ সুবিধায় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন পরিশোধের সুযোগ দেয়ার পরও খেলাপি ঋণ কমেনি। বরং বেড়েই চলেছে।
মূলত ঋণ বিতরণে অনিয়ম ও বড় বড় কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপের কাছে ঋণ আটকে থাকার কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে।
করোনা মহামারির মধ্যে সরকার ঋণখেলাপিদের বড় ধরনের ছাড় দিয়েছে। ঋণের কিস্তি না দিয়েও খেলাপি হবে না-এমন সুবিধা দিয়ে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সুবিধা দেয়া হয়। খেলাপিদের ছাড় দেয়ার বিষয়ে ব্যাপক সমালোচনা হলেও সরকার তা আমলে নেয়নি। বরং একের পর এক নানাভাবে সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে।
রাজস্ব পরিস্থিতি
জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারীর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের ছয় মাসে ডিসেম্বর পর্যন্ত আদায় হয়েছে এক লাখ ৮ হাজার ৪৭১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এটি মোট লক্ষ্যমাত্রার ৩২ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এদিন, আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম জানান, দেশে করোনার টিকা আসায় জনগণের মধ্যে ভয়ভীতি দূর হবে। করোনার প্রকোপ আরও কমবে। এর ফলে অর্থনীতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে। চলতি অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হবে।
অর্থপাচার
সরকারি দলের সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশ থেকে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে অবমূল্যায়ন ও অতিমূল্যায়নের মাধ্যমে অর্থ পাচারের কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। যেসব ক্ষেত্রে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে, সেসব ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা চলমান রয়েছে।
অর্থ পাচার বন্ধে সরকারের নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে অর্থমন্ত্রী বলেন, এসব পদক্ষেপের ফলে অর্থ পাচার অনেকাংশে কমে যাবে।
সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবুল মোমেন রাজধানীতে এক আলোচনায় অর্থপাচার নিয়ে বক্তব্য দেয়ার প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত থেকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট-বিএফআইইউ, দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে দেশ থেকে অর্থপাচার সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়।
গত ২৭ ডিসেম্বর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও ওই প্রতিবেদনের বিষয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি আদালত। ফলে অর্থপাচারের বিষয়ে আরও গভীর তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়।