করোনাকালে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে বলে একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে উঠে এসেছে। আর এই সময়ে অতি দারিদ্র্য বেড়ে হয়েছে তিন গুণ।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথএশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিং- সানেম দাবি করছে, দেশে দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ। অতি দারিদ্র্যের হার বেড়ে হয়েছে ২৮ শতাংশ।
সবচেয়ে বেশি দারিদ্র্য গ্রামে; ৪৫ শতাংশ, শহরে ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ।
করোনা পরিস্থিতির আগে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০ দশমিক ৫ শতাংশ। আর চরম দারিদ্র্যের সংখ্যা ছিল ৯ দশমিক ৪ শতাংশ।
শনিবার এক অনুষ্ঠানে জরিপটি প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।
তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালে জিইডি (পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ) সানেমের গবেষণায় দেখা গেছে, দারিদ্র্যের হার ২১ দশমিক ৬০ শতাংশে নেমেছিল। কিন্তু সানেমের ২০২০ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরের গবেষণা বলছে, দারিদ্র্যের হার বেড়ে ৪২ শতাংশ হয়েছে।’
জরিপের ফলাফলের উপর ‘দারিদ্র্য ও জীবিকার ওপর কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব’ শীর্ষক ওয়েবিনারের আয়োজন করে গবেষণা সংস্থাটি।
এতে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন।
শীতের ভোরে কাজে বের হয়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। ছবিটি রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তোলা।
জানানো হয়, বিদায়ী বছরের ২ নভেম্বর থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত জরিপটি পরিচালিত হয়। করোনা মহামারির প্রভাবে দেশের দারিদ্র্য পরিস্থিতি, কর্মসংস্থান ও আয়-বৈষম্যে কী ধরনের প্রভাব পড়েছে তা তুলে ধরা হয় এতে।
সেলিম রায়হান বলেন, এই জরিপের মূল উদ্দেশ্য ছিল, কোভিড-১৯ পূর্ববর্তী সময়ের সঙ্গে পরবর্তী সময়ে দারিদ্র্য, বৈষম্য ও কর্মসংস্থানের স্বরূপ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া।
মোট পাঁচ হাজার ৫৭৭টি খানার ওপর এই জরিপটি ফোন কলের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
এতে বলা হয়, করোনার কারণে গত বছর চরম দারিদ্র্য বেড়ে হয়েছে ২৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২০১৮ সালে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৪০ শতাংশ।
সানেমের হিসাব অনুযায়ী, সবেচেয়ে বেশি দারিদ্র্য বেড়েছে রংপুরে। সেখানে এই হার ৫৭ শতাংশ। এর পর রাজশাহী ৫৫ শতাংশ।
অন্যদিকে সবচেয়ে কম দারিদ্র্য সিলেটে ৩৫ শতাংশ। এ ছাড়া ঢাকায় ৩৮ দশমিক ৪ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৩৫ শতাংশ, বরিশাল ২৯ দশমিক ৩ শতাংশ, খুলনায় ৪১ দশমিক ৮ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৪৬ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ দরিদ্র।
এই সময়ে আয় বৈষম্য ও কর্মসংস্থানেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলেও জানানো হয় জরিপে।
৫৬ ভাগ পরিবার দাবি করেছে, করোনার সময় তাদের আয় হ্রাস পেয়েছে। ধার করে, সঞ্চয় ভেঙে এবং খাদ্য ব্যয় কমিয়ে এই সংকট মোকাবিলা করেছেন তারা।
এম এম আকাশ বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে পুনোরুদ্ধারের জন্য শিক্ষাখাত যত দ্রুত সম্ভব চালু করতে হবে। স্বাস্থ্যখাতে ভর্তুকি ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘যে প্রবৃদ্ধির পথে আমরা এগোচ্ছিলাম তা ছিল কর্মসংস্থানবিহীন প্রবৃদ্ধি। কোভিডের প্রভাবে এতে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যে কর্মসংস্থান হারিয়েছি সেটি পুনরুদ্ধারে এবং নতুন করে আরও কর্মসংস্থান তৈরিতে বেশ কয়েকবছর লেগে যাবে। কোন ধরনের কর্মসংস্থানের জন্য বিনিয়োগ করছি, বিনিয়োগের সময় সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ কর্মজগতে পরিবর্তন আসছে।’
সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘একটি বিশাল সংখ্যক মানুষ আছেন যারা দারিদ্র্যরেখার উপরে ছিলেন। কিন্তু কোভিডের আঘাতে দারিদ্র্যরেখার নিচে নেমে আসার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, অর্থাৎ তারা দরিদ্র না হয়েও দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে রয়েছেন।’