বিভিন্ন বন্দরে জাহাজ ও কন্টেইনার জটের কারণে বিশ্বে সাগরপথে পণ্য পরিবহনে কন্টেইনারের বড় সংকট দেখা দিয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি পণ্য পাঠাতে কলম্বো সমুদ্রবন্দর থেকে ২০০ একক খালি কন্টেইনার চট্টগ্রাম আনছে বিদেশি মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানি (এমএসসি)। এই সংকটের মধ্যে উল্টো ঘটনা ঘটাল ওরিয়েন্টাল ওভারসিজ কন্টেইনার লাইন (ওওসিএল) নামে একটি শিপিং কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটি বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে এমভি নর্ডটাইগার নামে জাহাজে করে ১০৭টি খালি কন্টেইনার মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দিয়েছে।
অথচ দেশে কন্টেইনার সংকটের কারণে রপ্তানিকারকরা ঠিক সময়ে তাদের পণ্য রপ্তানি করতে পারছে না। তাই সংকটের মধ্যে খালি কন্টেইনার মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দেয়ার কারণে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে রপ্তানিকারকদের মধ্যে। রপ্তানিকারকরা বলছেন, দেশে খালি কন্টেইনারের সংকট চলছে। তারমধ্যে এভাবে খালি কন্টেইনার বিদেশে পাঠিয়ে দেয়াটা উচিত হয়নি।
চট্টগ্রামভিত্তিক সবজি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ছিদ্দিক ট্রেডার্সের মালিক ওমর ফারুক ছিদ্দিকী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চীন থেকে ইউরোপ, চীন থেকে আমেরিকা রুটে পণ্য পরিবহনে মুনাফা তুলনামূলক বেশি। সেই তুলনায় চীন-চট্টগ্রাম রুটে পণ্য পরিবহনে মুনাফা তুলনামূলক কম। তাই ওওসিএল মতো প্রতিষ্ঠানগুলো এসব কন্টেইনার চট্টগ্রাম-চীন রুটে ব্যবহার না করে অন্য রুটে ভাড়ার জন্য নিয়ে যাচ্ছে।’
ওরিয়েন্টাল ওভারসিজ কন্টেইনার লাইনের বাংলাদেশি এজেন্ট কন্টিনেন্টাল ট্রেডার্স লিমিটেডের কর্মকর্তা (অপারেশন) আখতারুল আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব জাহাজে করে ৪০ ফুটের ১০৭টি কন্টেইনার মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে এসব কন্টেইনার নিয়ে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মালয়েশিয়ার পোর্ট কেলাংয়ের উদ্দেশে রওনা দেয়।
‘এসব কন্টেইনার আমদানি পণ্য নিয়ে দেশে এসেছিল। কিন্তু রপ্তানির জন্য ভাড়া না মেলায় খালি কন্টেইনার পাঠাতে হচ্ছে। পাঠানো কন্টেইনারগুলো প্রায় ২০ দিন ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে ছিল। খালি পড়ে থাকায় প্রতি কন্টেইনার বাবদ চট্টগ্রাম বন্দরকে ৩০ থেকে ৪০ ডলার প্রতিদিন মাশুল দিতে হচ্ছিল। তাই বাধ্য হয়ে খালি কন্টেইনার পাঠাতে হয়েছে।’
যদিও রপ্তানি নির্বিঘ্নে করতে এরইমধ্যে মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানি ২০০ একক খালি কনটেইনার দেশে এনেছে। প্রতিষ্ঠানটি আরও কয়েকদফা খালি কন্টেইনার দেশে আনবে।
এমএসসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক আজমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘রপ্তানি পণ্য পাঠানোর কাজে ব্যবহৃত ৪০ ফুট দীর্ঘ কন্টেইনারের সংকট দেখা দিয়েছে দেশে। কিন্তু রপ্তানি পণ্য নির্দিষ্ট সময়ে পাঠাতে হবে। প্রতিশ্রুতি ঠিক রাখতেই আমরা গত সপ্তাহে আরএইচএল এস্ট্রাম জাহাজে ২০০ খালি কন্টেইনার এনেছি। আগামী সপ্তাহে ওইএল কলম্বো জাহাজে আনা হবে আরও ২০০ খালি কন্টেইনার। সামনে আরও কয়েকটি জাহাজে এভাবে খালি কন্টেইনার আনতে হবে।’
রপ্তানি পণ্য পাঠাতে সপ্তাহে গড়ে ১৬ একক ৪০ ফুট খালি কন্টেইনার প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমদানি পণ্য খালি হওয়ার পর এখন সর্বোচ্চ ৮০০ একক কন্টেইনার পাওয়া যাচ্ছে। বাকি খালি কন্টেইনার বিদেশ থেকেও আনতে হয়। প্রতি সপ্তাহে আনা যায় ২০০ একক কন্টেইনার। ফলে সংকটটা বড় আকার ধারণ করেছে। একটি খালি কন্টেইনার কলম্বো বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আনতে খরচ পড়ে ৫৫০ ডলার।