আগামী এপ্রিলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন– ইইউ তাদের নতুন জিএসপি প্লাস স্কিম সুবিধা দেয়ার বিষয়ে অন্তর্ভূক্ত দেশগুলোর মানদণ্ড পর্যালোচনা করবে। সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে জোরেশোরে আলোচনা হবে।
তাই এখন থেকেই আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার– আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী শ্রম আইন সংস্কার, শ্রম অধিকার উন্নয়ন ও মানবাধিকার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির পরামর্শ দিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি।
বুধবার ‘ইইউস ইভিএ (এভরিথিং বাট আর্মস) অ্যান্ড প্রসপেক্ট অব জিএসপি প্লাস ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে এই পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
সংলাপে সিপিডির পক্ষ থেকে জানানো হয়, অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা জেনারেল সিস্টেম অব প্রেফারেন্স- জিএসপি স্কিম পুনর্গঠন করছে ইইউ। তারা জিএসপির পরিবর্তে জিএসপি প্লাস স্কিম চালু করতে যাচ্ছে।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হবে।
এরপর তিন বছর জিএসপি সুবিধা বহাল থাকবে। উত্তরণ পর্বে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের জন্য জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে, যার আগাম প্রস্তুতি এখন থেকে নিতে হবে।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির ৫ ভাগের ৩ ভাগ যায় ইউরোপে। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই তৈরি পোশাক পণ্য ইভিএর আওতায় জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে।’
তিনি জানান, যখন এলডিসি থেকে উত্তরণ সময়সীমা শেষ হয়ে যাবে, তখন এই সুবিধা থাকবে না। ফলে বাংলাদেশ রপ্তানি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে।
এ অবস্থায়, জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়া বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও জানান, জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে হলে আগেই জিএসপি ক্লাবে অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এই অন্তর্ভুক্তি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। আইএলওর কনভেনশন অনুযায়ী, শ্রম আইন ও শ্রম অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি মানবাধিকারও নিশ্চিত করতে হবে মনে করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত এইচ ই রেনজি তিরিঙ্ক জানান, জিএসপি প্লাস স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই ইইউর দেয়া মানদণ্ড অর্জন করতে হবে।
বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ইউরোপীয় ইউনিয়ন যে প্রস্তাবগুলো আমাদের দিয়েছে সেখানে ১২টি সুপারিশ রয়েছে, যার ছয়টা বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে উদ্যোক্তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।’
তার দাবি, সব কিছু উদ্যোক্তার ওপর চাপিয়ে দিলে হবে না। এখানে ক্রেতাদের অনৈতিক মূল্য কর্তনের প্রবণতা থেকে বের হয়ে শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি শ্রমিকদেরও দায়িত্বশীল ট্রেড ইউনিয়নিস্ট আচরণ করতে হবে।
শ্রম আইন ও অধিকার বাস্তবায়নে বিদ্যমান আইনে দুর্বলতার নানা দিক তুলে ধরেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন।
মূল প্রবন্ধে সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘জিএস প্লাস স্কিমে যাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো সুনির্দিষ্ট ৯টি জায়গায় কাজ করার ঘাটতি রয়ে গেছে বাংলাদেশের। এসব ঘাটতি পূরণ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সিপিডির নিবার্হী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক বেলাল হোসেইন শেখ, বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি আরশাদ জামাল দিপু, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি কামরান টি রহমান, মহাসচিব ফারুক আহমেদ, শ্রমিক নেতা মো. আশিকুল আলম চৌধুরী ও কল্পনা আখতার।