বিমা খাতের পরিশোধিত মূলধন আর পরিচালকদের শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত চিঠি নিয়ে পুঁজিবাজারে এই খাতের শেয়ার নিয়ে হুলস্থুল হলো।
একটি অনলাইনে এই চিঠির খবর প্রকাশের পর মঙ্গলবার এই খাতের ৪৯টি কোম্পানির বহুগুলোর দাম বাড়ে সর্বোচ্চ পরিমাণে। তবে বুধবার দাম কমে যায় ৩০টির মতো।
বেশিদামে শেয়ার কিনে ক্ষতির মুখে পড়ার পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ এই খাত নিয়ে বিস্তারিত জেনে বিনিয়োগ করতে বলেছে।
সাত বছরের বেশি সময় নিয়েও আইনের বিধান মোতাবেক পরিশোধিত মূলধন সংরক্ষণ করতে পারেনি অধিকাংশ বিমা কোম্পানি।
আইন পরিপালনে বাধ্য করতে সম্প্রতি বিমা কোম্পানিগুলোকে এক মাস সময় বেধে দিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে।
বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ-আইডিআরএ পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০১০ সালের আইন অনুযায়ী বিমা কোম্পানির উদ্যোক্তা শেয়ার ৬০ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয়। তিন বছরের মধ্যে এই নির্দেশনা পরিপালনের কথা ছিল। এত দীর্ঘ সময়েও তারা আইনের নির্দেশনা পরিপালন করতে পারেনি।’
তিন বছরে যা হয়নি, তা এক মাসের মধ্যে পূরণ করতে বলা হয়েছে। এটা নিয়েই বাজারে অস্থিরতা। এটা কি সম্ভব?
এমন প্রশ্নে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘যে এক মাস সময় দেয়া হয়েছে, আমরা আশা করব বিমা কোম্পানিগুলো সে সময়ের মধ্যে উদ্যোক্তা শেয়ার ৬০ শতাংশ এবং জনসাধারণের শেয়ার ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে পারবে। যদি তারা আবারও ব্যর্থ হয়, তাহলে আইডিআরএ এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।’
আইনের বিধান অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন সংরক্ষণ ব্যর্থ হওয়া বিমা কোম্পানিগুলোকে এক মাস সময় গত ১২ জানুয়ারি ১২টি জীবন বিমা ও ১৭ জানুয়ারি ৩০টি সাধারণ বিমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের (সিইও) এ সংক্রান্ত দুটি চিঠি দেয় আইডিআরএ।
সাধারণ বিমা কোম্পানিকে দেয়া চিঠিতে সই করেন পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম।
জীবন বিমা কোম্পানিকে দেওয়া চিঠিতে স্বাক্ষর করেন আইডিআরএর আরেক পরিচালক শাহ আলম।
বিমা আইন ২০১০-এর ২১(৩) ধারার তফসিল-১-এ বলা হয়েছে, দেশে নিবন্ধিত জীবন বিমা কোম্পানির ক্ষেত্রে ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন হবে ৩০ কোটি টাকা, যার ৬০ শতাংশ আসবে উদ্যোক্তাদের কাছ থাকে। বাকি ৪০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে।
সাধারণ বিমা কোম্পানির ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধন হবে ৪০ কোটি টাকা, যার ৬০ শতাংশ উদ্যোক্তারা দেবেন। বাকি ৪০ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে বর্তমানে ৪৯টি বিমা কোম্পানি তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে সাধারণ বিমা ৩৭টি এবং জীবন বিমা ১২টি।
সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ৪০ কোটি টাকার নিচে রয়েছে চারটির। এগুলোর মধ্যে প্রভাতী ইনস্যুরেন্সের ২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা, প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সের ৩৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, অগ্রণী ইনস্যুরেন্সের ৩০ কোটি ২৪ লাখ টাকা এবং ইসলামিক ইনস্যুরেন্সের ৩৭ কোটি ৪২ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধন রয়েছে।
জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকার কম রয়েছে দুটির। এর মধ্যে রূপালী লাইফ ইনস্যুরেন্সের ২৯ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং প্রগ্রেসিভ লাইফ ইনস্যুরেন্সের ১৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
তালিকাভুক্ত ৪৯ বিমা কোম্পানির মধ্যে মাত্র পাঁচটির উদ্যোক্তাদের শেয়ার রয়েছে ৬০ শতাংশ বা তার বেশি।
এগুলো হচ্ছে পাইওনিয়ার ইনস্যুরেন্স, এক্সপ্রেস ইনস্যুরেন্স, ক্রিস্টাল ইনস্যুরেন্স, ঢাকা ইনস্যুরেন্স ও রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স।
৬০ শতাংশের নিচে রয়েছে ৪৪টি কোম্পানির উদ্যোক্তাদের শেয়ার। সাধারণ বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে অগ্রণী ইনস্যুরেন্স, এশিয়া ইনস্যুরেন্স, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইনস্যুরেন্স, বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইনস্যুরেন্স, বিজিআইসি, কন্টিনেন্টাল ইনস্যুরেন্স, সেন্ট্রাল ইনস্যুরেন্স, গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স, গ্লোবাল ইনস্যুরেন্স, ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশ, জনতা ইনস্যুরেন্স, কর্ণফুলী ইনস্যুরেন্স কোম্পানি।
এ ছাড়া রয়েছে মেঘনা, মার্কেন্টাইল, নিটল, নর্দান ইসলামী, প্যারামাউন্ট, পিপলস, ফিনিক্স, পাইওনিয়ার, প্রগতি, প্রভাতী, পূরবী, রিপাবলিক, সোনার বাংলা, স্ট্যান্ডার্ড, সাউথ এশিয়া, তাকাফুল ইসলামী, ইউনিয়ন এবং ইউনাইটেড ইনস্যুরেন্স কোম্পানি।
জীবনবিমা প্রতিষ্ঠানের যে কোম্পানিগুলো চিঠি পেয়েছে, সেগুলো হচ্ছে ফারইস্ট লাইফ, পদ্মা ইসলামী লাইফ, পপুলার লাইফ, রূপালী লাইফ, সন্ধানী লাইফ, বায়রা লাইফ, মেঘনা লাইফ, গোল্ডেন লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ, প্রাইম ইসলামী লাইফ, প্রগতি লাইফ, প্রগ্রেসিভ লাইফ, সানফ্লাওয়ার লাইফ ও সানলাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি।