বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পাইপলাইনে ২০ লাখ টন চাল

  •    
  • ১৯ জানুয়ারি, ২০২১ ২০:৩১

চাল আমদানি করছে সরকার। বেসরকারি পর্যায়েও চাল আসতে শুরু করেছে। ৩২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে।

চলতি মৌসুমে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান ব্যর্থ হওয়ায় এখন জোরেশোরে চলছে আমদানির উদ্যোগ। বাজারে উর্ধ্বমুখী চালের দাম কমিয়ে আনতে দ্রুততম সময়ে চাল কিনতে চায় সরকার।

আমদানির অপেক্ষায় পাইপলাইনে এখন ২০ লাখ টনের বেশি চাল। সরকারি-বেসরকারি দুভাবেই চাল আমদানি শুরু হয়েছে এবং আসতে শুরু করেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ৩২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১০ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টন চাল আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ৬ হাজার টন চাল দেশে প্রবেশ করেছে।

এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আমদানির অনুমতি পেলেও প্রত্যেকের জন্য শর্ত: অনুমোদনের সাত দিনের মধ্যে ঋণপত্র (এলসি) খুলে ক্যাটাগরি অনুযায়ী ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে চাল বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

মন্ত্রণালয়ের ছয় সদস্যের মনিটরিং কমিটি কন্ট্রোল রুম চালু করে সার্বক্ষণিকভাবে আমদানির অগ্রগতি এবং দেশে আসা চাল কোথায় যাচ্ছে, তা কঠোর নজরদারিতে রেখেছে।

অন্যদিকে সরকারি মজুদের জন্যও বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ১০ লাখ টন চাল আমদানি করা হবে। এর থেকে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯ লাখ ১৮ হাজার টনের আমদানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

সমঝোতা চুক্তি আছে এমন সব দেশ থেকেই চাল আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে আগাম পরিকল্পনা অনুযায়ী জি-টু-জি (সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ) ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে নির্বাচিত সংশ্লিষ্ট দেশের দরদাতা প্রতিষ্ঠান দিয়ে ভারত ও সিঙ্গাপুর থেকে তিন লাখ টন চাল আনছে সরকার। চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে এ চাল সরকারি গুদামে ঢুকবে।

গত ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত সরকারের গুদামে খাদ্যশস্যের মজুদ এসে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ২১ হাজার টন। এর মধ্যে চাল রয়েছে ৫ লাখ ৩৭ হাজার টন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারি গুদামে নিরাপত্তা মজুদ হিসেবে অন্তত ১০ লাখ টন চাল থাকতে হয়। এর বাড়তি থাকা আরও ভালো।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কী পরিমাণ চাল সরকারিভাবে আমদানি করা হবে, তার সুনির্দিষ্ট সিলিং এখনও ঠিক করা হয়নি। যতদিন না পর্যন্ত বাজারে চালের দাম সহনীয় হবে ততদিন পর্যন্ত আমরা চাল আমদানি করতে থাকব।’

তিনি জানান, সরকারের বাফার মজুদ গড়তে প্রাথমিকভাবে আমদানির পরিমাণ ১০ লাখ টন। যত দ্রুত সম্ভব এই চাল আমদানি করা হবে। প্রয়োজন হলে চাল আমদানির পরিমাণ আরও বাড়ানো হবে।

চলতি বছর সাড়ে ১৯ লাখ টন ধান-চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে সরকার। সে অনুযায়ী ৩৬ টাকা কেজি দরে মিলারদের কাছ থেকে ১০ লাখ সেদ্ধ চাল, ৩৫ টাকা কেজিতে দেড় লাখ টন আতপ চাল এবং সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ২৬ টাকা কেজিতে আট লাখ টন বোরো ধান কেনার কথা ছিল। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। অভ্যন্তরীণ উৎপাদনও আশানুরূপ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে চাল আমদানির এই উদ্যোগ। গত ৬ আগস্টে প্রধানমন্ত্রী চাল আমদানির অনুমতি দেন।

বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বাড়তি পর্যায়ে। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আফ্রিকার দেশগুলোয় চালের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। তাছাড়া করোনার কারণে বৈশ্বিক খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ার সুযোগ নিয়েছে চাল রপ্তানিকারক দেশগুলো।

এবার বোরো মৌসুমে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি সরকার। ফাইল ছবি

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিটন চাল এখন ৩৯৫ ডলার থেকে ৪৫০ ডলারে ওঠানামা করছে। গত বছর আগস্টের তুলনায় চালের এই দাম টনপ্রতি ২৫ থেকে ৫০ ডলার বেড়েছে। তবে তুলনামূলক কম দাম ভারতে। সেখানে চালের দাম ৩৯৫ থেকে ৪১৬ ডলারের মধ্যে রয়েছে। প্রতিবেশী হওয়ায় আমদানি খরচও কম। তাই সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতই চাল আমদানিতে ভারতকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে খাদ্য সচিব নাজমানারা খানুম বলেন, ‘শুধু ভারত নয়, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, রাশিয়া, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, পাকিস্তান যাই বলি না কেন- যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) রয়েছে- সব দেশ থেকেই চাল আমদানি করবে সরকার। তবে আমদানি করলেই তো হবে না, দামটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ সেই চাল দেশে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকতে হবে। তাই আন্তর্জাতিক বাজার দাম অনুযায়ী যেখানে সবচেয়ে কম পাব, সেখান থেকেই আমদানির সব রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।’

এদিকে বেসরকারিভাবে চাল আমদানিতে শুল্কহারও কমিয়েছে সরকার। আগে এই শুল্কের পরিমাণ ছিল ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ। এখন তা ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

২০১৭ সালেও দেশ চাল সংকটে পড়েছিল। তখন বেসরকারি খাতকে চাল আমদানিতে উৎসাহিত করতে চালের আমদানি শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেয়া হয়েছিল।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শুল্ক কম থাকার সুযোগে প্রায় ৩৯ লাখ টন চাল আমদানি হয়। এর পরের দুই বছর দেশে ধান-চালের দাম কৃষকের উৎপাদন খরচের নিচে চলে যায়। বাড়তি আমদানি করা চাল বাজারে থাকায় টানা দুই বছর ধরে কৃষক লোকসান দিচ্ছিল। তখন সরকার চাল আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করে। শুল্কহার ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ ধার্য করা হয়। ফলে চালের আমদানিও কমে যায়। এর প্রভাবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে গত ৪০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম চাল আমদানি হয়। গত বছরের আগস্টের ৫ তারিখ পর্যন্ত সর্বশেষ ৪ হাজার ১৮০ টন চাল আমদানি হয়।

এ পরিস্থিতিতে এক সময়ে চাল রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন চাল আমদানি করছে।

বাংলাদেশ রাইস এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম বাবু বলেন, ‘অন্য দেশ তো দূরের কথা, ২৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে প্রতিবেশী ভারত থেকেও যদি চাল আমদানি করা হয়, সেটা স্থলবন্দরেই দাম পড়বে ৩৭-৩৮ টাকা। এর বাইরে দেশে এখন পরিবহন ভাড়া মাত্রাতিরিক্ত বেড়েছে। কারণ আগে একটি ট্রাকে করে ২০-২৫ টন লোড-আনলোড করা যেত। এখন ওজন স্কেল সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতার কারণে ১৪-১৫ টনের বেশি পরিবহন করা যায় না।

‘এ ছাড়া রয়েছে শ্রমিক ও কর্মচারী খরচ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ভাড়া ও বিদ্যুৎ খরচ। সব কিছু সমন্বয় করে সেই চাল বাজারে কত দামে বিক্রি করব, তাতে দেশে মজুদ চালের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পোষাবে কি-না, সেই আশঙ্কা বাজারে থেকেই যাচ্ছে। ফলে চাল আমদানি করেও কতটা দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, সেটা নিয়ে সংশয় থাকছেই।’

তিনি বলেন, সরকারের উচিত ছিল আমদানি শুল্ক ২০ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা।

এ বিভাগের আরো খবর